ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নাঈমের সেরা নৈপুণ্যে ম্যাথুসের আক্ষেপ

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ১৭ মে ২০২২

নাঈমের সেরা নৈপুণ্যে ম্যাথুসের আক্ষেপ

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ চট্টগ্রাম টেস্টে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা কোনটি- এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ১৯৯ রান নাকি নাঈম হাসানের ৬ উইকেট! দুজনই এই ইনিংসে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত- কারণ ম্যাথুসকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন নাঈম। কয়েকবার জীবন পেয়ে অভিজ্ঞ ম্যাথুসের দারুণ সুযোগ হয় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোর। ফিল্ডারদের দেয়া সুযোগে তিনি যেন ব্যাট হাতে হয়ে ওঠেন ইতালিয়ান চিত্রকর মাইকেলেঞ্জেলো- সাগরিকার উইকেটে আঁকেন অবিস্মরণীয় ব্যাটিং শিল্পের নমুনা! বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা ১৯৯ রানে তাকে থামিয়েছেন চট্টগ্রামের ‘লোকাল বয়’ অফস্পিনার নাঈম। ফলে তৃতীয় লঙ্কান ব্যাটার হিসেবে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ডিন এলগারের পর দ্বিতীয় বিদেশী হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯৯ রানে আউট হওয়ার আক্ষেপে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ম্যাথুসকে। তাকে এই হতাশা উপহার দেয়ার মাধ্যমে ১৫ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে নিজেকে রাঙ্গিয়েছেন নাঈম। অষ্টম টেস্টের ১৩তম ইনিংসে এটি তার তৃতীয়বার ৫ উইকেট শিকার। নাঈম নেন ১০৫ রানে ৬ উইকেট। ম্যাথুস চার নম্বরে নেমে আগের দিনই ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি পেয়ে যান। তবে শুরু থেকেই সৌভাগ্যবান ছিলেন ম্যাথুস। ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থায় কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়েছে তাকে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট চালানোর জন্য। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের বলে স্লিপে মাহমুদুল হাসান জয়কে ক্যাচ দিয়েও ব্যক্তিগত ৬৯ রানে বেঁচে যান ম্যাথুস। শেষ পর্যন্ত দিনশেষে ১১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ৬ টেস্টের ১০ ইনিংসে মাত্র ১ হাফসেঞ্চুরি, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৬ রান করেন ম্যাথুস। এদিন ১১৯ রানে সৈয়দ খালেদ আহমেদের বলে খোঁচা দিলে ব্যাটে হালকা স্পর্শ নিয়ে লিটন দাসের গ্লাভসবন্দী হন। তবে কেউ আবেদন না করায় বেঁচে যান ম্যাথুস। আল্ট্রা এজ প্রযুক্তিতে পরিষ্কার হয় আউট ছিলেন তিনি। হারারেতে ২ বছর আগে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ারসেরা ২০০ রানে অপরাজিত ছিলেন ম্যাথুস। সাগরিকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে খালেদ-লিটনের বুঝে ওঠার ব্যর্থতায় ম্যাথুস সুযোগ পান বড় ইনিংস খেলার। তৃতীয় উইকেটে কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে ৯২, দিনেশ চান্দিমালের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ১৩৬ এবং নবম উইকেটে আসিথা ফার্নান্দোর সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়ে আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেন। কিন্তু তখনই তাকে হতাশ করেন নাঈম, স্কয়ার লেগে সাকিব আল হাসানকে ক্যাচ দিয়ে হতাশ হতে হয় তাকে। তীব্র গরমে দীর্ঘ ৫৭৮ মিনিট (৯ ঘণ্টা, ৩৮ মিনিট) উইকেটে থেকে ৩৯৭ বলে ১৯ চার, ১ ছয়ে ১৯৯ রান করেছেন ম্যাথুস। টেস্ট ইতিহাসে ১৪ জন ১৯৯ রান করেছেন, এর মধ্যে ২ জন নট আউট ছিলেন বাকিরা আউট হয়েছেন। শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রথম এই দুর্ভাগ্য হয় সনাথ জয়াসুরিয়ার। ১৯৯৭ সালে তিনি ভারতের বিপক্ষে কলম্বোয় এবং এরপর ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে কুমার সাঙ্গাকারা গলে ১৯৯ রানে আউট হন। তৃতীয় শ্রীলঙ্কান হিসেবে এবং দেশের বাইরে প্রথম লঙ্কান হিসেবে দুর্ভাগ্যটি ম্যাথুসের। টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি দ্বিতীয় ঘটনা। ২০১৭ সালে পচেফস্ট্রুমে দক্ষিণ আফ্রিকার এলগার ছিলেন প্রথম। নাঈম ১৫ মাস পর নিজের জন্মভূমিতে ফিরেছেন টেস্টে। এখানেই অভিষেক টেস্টে ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার ৫ উইকেট নেন ২০২০ সালে মিরপুরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। এদিন সকালেই চান্দিমাল ও নিরোশান ডিকভেলাকে সাজঘরে ফিরিয়ে তৃতীয়বার ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়ার সুযোগ তৈরি করেন। আসিথাকে বোল্ড করে তা পূর্ণ করেন এবং ম্যাথুসকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখান। আগের দিন ২ উইকেট নিয়েছিলেন ১৬ ওভারে ২ মেডেনে ৭১ রান খরচায়। তাই স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ বলেছিলেন, ‘তাকে কন্ডিশন বুঝে আরও উন্নতি করতে হবে।’ সেই উন্নতি দ্বিতীয় দিনেই করেছেন ২২ বছর বয়সী তরুণ। এদিন আরও ৪ উইকেট নিয়েছেন ১৪ ওভারে ২ মেডেন দিয়ে মাত্র ৩৪ রানের বিনিময়ে। সবমিলিয়ে নাঈমের ফেরার ম্যাচে বোলিং বিশ্লেষণটা দারুণ ৩০-৪-১০৫-৬। এর আগে একবারই বোলিংয়ে এক ইনিংসে শতাধিক রান খরচা করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামেই চতুর্থ ইনিংসে ৩৪.৩ ওভারে ১০৫ রান খরচায় ১ উইকেট নিয়েছিলেন।
×