ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তৃণমূলে বাড়ছে হতাশা ক্ষোভ

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে হাইব্রিডদের দাপট স্বেচ্ছাচারিতা

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১৭ মে ২০২২

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে হাইব্রিডদের দাপট স্বেচ্ছাচারিতা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ক্ষমতাসীন দলে তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা। অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা যেমন অহরহ। তেমনি নিজ দলের নেতাকে বেঁধে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার মতো বাজে উদাহরণও রয়েছে চট্টগ্রামে। শুধু তাই নয়, সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও তৃণমূল নেতাদের মতামত-অভিব্যক্তিকে পাশকাটিয়ে স্থানীয় এমপি এবং শীর্ষ নেতাদের একচ্ছত্র আধিপত্য ও দলাদলি ক্ষতিগ্রস্ত করছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে। যার ফলে সরকারের উন্নয়নের বার্তা পৌঁছালেও হাইব্রিড ও শীর্ষ নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তৃণমূলের প্রবীণ নেতাদের বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এই সময়েও ক্ষমতাসীন হিসেবে ঐক্যবদ্ধ নয় দল। স্থানীয় এমপি এবং জেলার শীর্ষ নেতাদের দ্বিধাবিভক্তির প্রবণতার কারণেই গতিশীলতা আসছে না আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দলে। এছাড়া দলে অনুপ্রবেশকারীরাই অঘটন ঘটাচ্ছে শীর্ষ পর্যায়ের কতিপয় নেতাদের প্রশ্রয়ে। ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের স্থানীয় নেতারাই বলছেন, তৃণমূলে বেশিরভাগ দুঃসময়ের পরীক্ষিত নেতারা সম্মেলন না হওয়ায় কোন কমিটিতে নেই। যার ফলে নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না। তেমনি দলও বিকশিত হচ্ছে না। চট্টগ্রামে সর্বশেষ শনিবার দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের প্রতিনিধি সভায় বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের তৃণমূলের প্রতিনিধিরা এসব বিষয় উঠে আসে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে পেয়ে তারা সকল ক্ষোভ ও হতাশার কথা ব্যক্ত করেন। তৃণমূলের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে অবশ্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও স্বীকার করে বলেছেন তৃণমূলই দলের প্রাণ। শনিবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ তৃণমূলের নেতাদের উদ্দেশ করে বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে সংগঠিত করতে হবে। দক্ষিণ জেলার সব ওয়ার্ড ইউনিয়ন ও উপজেলার সম্মেলন জুন থেকে জুলাই মাসের মধ্যে আমরা শেষ করব। এরপর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ জেলা সম্মেলন করতে চাই। একই সভায় দলের সভাপতিম-লীর সদস্য বর্ষীয়ান নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, দলকে শক্তিশালী করলে কোন সঙ্কটে পরাস্ত হতে হবে না। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, কোন সুবিধাভোগীকে দলে আনা যাবে না। তৃণমূলকে শক্তিশালী করলে সঙ্কটে পড়বে না দল। আমরা চেষ্টা করব আগামী দুই মাসের মধ্যে উত্তর জেলা সম্মেলন শেষ করার। এই লক্ষ্য কাজ শুরু করতে হবে। তৃণমূল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাণ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তৃণমূলের নেতারাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রেখেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। অনেক নেতা দ্বিধান্বিত ও বিচলিত হয়েছে, অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছে, মূল নেতৃত্বের সঙ্গে বেইমানি করেছে। কিন্তু তৃণমূল কখনও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেইমানি করে নাই। দলের মধ্যে সুবিধাবাদীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আজকে আমাদের ভাবতে হবে আমরা কিভাবে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করব। আমি দেখতে পাই নেতা এলে বিপুল স্লোগান হয়, সেলফি তোলার জন্য প্রতিযোগিতা হয়, কিন্তু সেই ছবি তুলে শুধু ফেসবুকে দেয়া ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্য কাজ করতে আমি দেখি না। এদিকে সভায় বেশিরভাগ তৃণমূলের নেতা স্থানীয় এমপিদের একচ্ছত্র আধিপত্য রক্ষার জন্য দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করা এবং দলে অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয়ের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূল নেতাদের সম্পৃক্ততা না করা এবং দলের সম্মেলন যাতে না হয় এজন্য শীর্ষ নেতাদের দোষারোপ করেন। সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নের সভাপতি মুস্তাকিম চৌধুরী বলেন, জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদীর যুদ্ধাপরাধের রায় যখন ঘোষণা পর যখন জামায়াত-শিবিরের যেসব ক্যাডার তা-ব চালিয়েছিল তারাই এখন চরতির নেতা। সাতকানিয়ায় এখন যারা আওয়ামী লীগ তারা কখনও আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেনি। এত উন্নয়ন কিন্তু সাতকানিয়ার নেতাকর্মীরা কিছু জানেন না। সাতকানিয়ায় এখন জামায়াত শিবিরের ক্যাডারাই নেতৃত্ব দিয়ে শাসন করছে। তৃণমূল বলতে সাতকানিয়া আওয়ামী লীগে কিছু নেই। বাঁশখালীর কালীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফরুল ইসলাম বলেন, বাঁশখালী উপজেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। খোদ এমপি হাইব্রিডদের লালন পালন করে। দলের ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতারা এখন কর্মসূচীতেও আসতে পারে না হাইব্রিডদের যন্ত্রণায়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা দরকার।
×