ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লিড নিতে দীর্ঘ সময় ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা মুমিনুলদের

টাইগারদের স্বপ্নের দিন সাগরিকায়

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১৭ মে ২০২২

টাইগারদের স্বপ্নের দিন সাগরিকায়

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ শুরু আর শেষের উজ্জ্বল নৈপুণ্যে সোমবার সাগরিকায় স্বপ্নের দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ দল। কথার মিল ফুটে উঠেছে মাঠে- সফরকারী শ্রীলঙ্কাকে চারশ’র মধ্যে আটকে দেয়া, এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে ১৯৯ রানে সাজঘরে ফেরানো ও বাংলাদেশী স্পিনারদের দুর্দান্ত বোলিং। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষে যে আশার বাণী শুনিয়েছে স্বাগতিকরা তার ষোলো আনাকেই পূর্ণতা দিয়েছে। আগের দিন ৪ উইকেটে ২৫৮ রান করে শ্রীলঙ্কা। আর ১৩৯ রানেই তাদের বাকি ৬ উইকেট তুলে নিয়ে প্রথম ইনিংসে ৩৯৭ রানে গুটিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। কৃতিত্বটা চট্টগ্রামেরই অফস্পিনার নাঈম হাসান দেখিয়েছেন যিনি ১৫ মাস পর ফিরেছেন বীরদর্পে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে ৬ উইকেট নিয়ে। এরপর আরেক লোকাল হিরো তামিম ইকবাল নবীন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে কোন বিপদ ছাড়াই ৭৬ রান তুলে দিয়েছেন বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে। ৩২১ রানে পিছিয়ে থাকলেও চট্টগ্রাম টেস্টে দ্বিতীয় দিনের পুরোটাই মাঠে দাপট দেখিয়েছে স্বাগতিকরা। তবে এই বড় রানের বোঝা এড়াতে আজ তৃতীয় দিন আরও বড় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশী ব্যাটারদের। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা সম্প্রতি বলতে শুরু করেছেন, টেস্ট ক্রিকেটে যদি দিনের প্রথম ও শেষ এক ঘণ্টা বাদ দেয়া যেত- তাহলে বাংলাদেশ অনেক ভাল করত। কারণ এই দুটি সময়েই ঘটে বাংলাদেশ দলের যত বিপত্তি। ধৈর্য হারা হয়ে যাওয়া, অগোছালো বোলিং করা, হঠাৎ মনোযোগ হারিয়ে বাজে শটে আউট হয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্প্রতি অনেক। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে সোমবার অন্যরকম বাংলাদেশকে দেখা গেছে। ৪ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করার পর বাংলাদেশের স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ বলেন, ‘আমাদের যতটা দ্রুত সম্ভব উইকেট দুটো নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের ৪০০ রানের নিচে আটকাতে পারব। সে কারণে তাদের আসলে আমরা আর ১২০-১৩০ রানের মধ্যেই গুটিয়ে দিতে চাই।’ দিনের প্রথম সেশনেই জোড়া উইকেট পেয়েছে বাংলাদেশ। সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও উইকেটরক্ষক লিটন দাস বুঝতে পারলে অবশ্য ম্যাথুস ১১৯ রানেই সাজঘরে ফিরতে পারতেন। আল্ট্রা এজ প্রযুক্তিতে পরিষ্কার দেখা গেছে ম্যাথুসের ব্যাট ছুঁয়ে বল গেছে লিটনের তালুতে। কিন্তু কেউ আবেদন করেননি। সেই সুযোগে আগের দিন ৭৫ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন থাকা ম্যাথুস-দিনেশ চান্দিমাল জুটি পঞ্চম উইকেটে সবমিলিয়ে ১৩৬ রান করে ভেঙ্গেছে। লাঞ্চ বিরতির ৩ ওভার আগে নাঈম সাজঘরে ফেরান ৬৬ রান করা চান্দিমাল ও ৩ রান করা নিরোশান ডিকভেলাকে। আগের দিন লাঞ্চের পর বোলিং করলেও এদিন প্রথম সেশনেই ১০ ওভার বল করেছেন সাকিব। ২৬ ওভারে ২ উইকেটে ৬৯ রান করে এই সেশনে লঙ্কানরা। লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই সাকিব টানা দুই বলে তুলে নেন রমেশ মেন্ডিস (১) ও লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে (০)। ৮ উইকেটে ৩২৮ রান নিয়ে বিপর্যস্ত হলেও ম্যাথুস একপ্রান্ত ধরে রাখেন। ৮৪ বলে বিশ^ ফার্নান্দো ১৭ ও আসিথা ফার্নান্দো ২৭ বলে ১ রান করলেও দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির কাছে পৌঁছেন ম্যাথুস। তবে তাকেও নাঈম ফিরিয়ে ১০৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেন। বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ১৯৯ রানে আউট হওয়ার দুর্ভাগ্য হয় ম্যাথুসের। তিনি ৯৭৮ মিনিটে ৩৯৭ বলে ১৯ চার, ১ ছয়ে এ রান করেন। শ্রীলঙ্কার হয়ে কুমার সাঙ্গাকারা ২০১২ সালে ১৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে, আর একমাত্র লঙ্কান হিসেবে ১৯৯ রানে আউট হয়েছেন সনাথ জয়াসুরিয়া ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে কলম্বোয়। ২৫ বছর পর একই দুর্ভাগ্য ম্যাথুসকে উপহার দিয়ে ১৫ মাস পর টেস্টে ফেরাটা উদযাপন করেছেন নাঈম। ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়ে এ অফস্পিনার বলেন, ‘সব ৫ উইকেটই তো অন্যরকম। বিশেষত এটা খুব ভাল পিচে ৫ উইকেট পেয়েছি, এজন্য একটু এগিয়ে রাখব।’ এদিন মাত্র ১৩৯ রান যোগ করতেই শ্রীলঙ্কা বাকি ৬ উইকেট হারিয়েছে। তাই দুর্দান্ত বোলিং করেছে বাংলাদেশ সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। নাঈম আগের দিনও ২ উইকেট নিয়েছিলেন, কিন্তু বলে নিয়ন্ত্রণ ছিল না তেমন। তাই হেরাথ উন্নতির কথা বলেছেন। সেই উন্নতি দেখা গেছে তার বোলিংয়েও। আগের দিন ১৬ ওভারে ৭১ রান দিলেও এদিন ১৪ ওভারে আর ৩৪ রান দিয়েই ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন। সাকিব আরও ২০ ওভার বোলিং করেছেন এবং উইকেট নিয়েছেন আরও দুটি। ৩৯ ওভারে মাত্র ৬০ রান দিয়ে সবচেয়ে মিতব্যয়ী তিনিই। দারুণ লাইনে বোলিং করা বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম উইকেট বেশি না পেলেও সর্বাধিক ৪৮ ওভার দারুণ ছন্দে করে মাত্র ১০৭ রান দিয়েছেন। তাই নাঈম বলেন, ‘তাইজুল ভাইরাও তো খুব ভাল বল করছে, ওরা রান আটকে রেখেছে। তারপর সাকিব ভাইও ভাল বল করেছে, রান আটকে রেখেছে। গতকালকে কিন্তু আমি ওরকম ভাল বল করতে পারিনি। গতকাল সাকিব ভাই, কোচ ও সৌরভ ভাইদের সঙ্গে কথা বলেছি উইকেট কি নিবেদন করছে, ওই অনুযায়ী বল করার চেষ্টা করেছি। আসলে হেরাথ তো লাইন-লেন্থের ব্যাপারে বলেছিল, কীভাবে উন্নতি করা যায়। আমরা তো বাংলা টাইগার্স ক্যাম্পে ছিলাম। তখন সোহলে স্যার ছিল, উনার সঙ্গে কাজ করেছি, কী কী উন্নতি দরকার উনি বলছিল, উনার সঙ্গে কাজ করে ওটা উন্নতির চেষ্টা করেছি। এখানে আসার পর একই কথা। ম্যাচ নিয়ে কথা বলেছিল, কী করতে হবে কোন পরিস্থিতিতে।’ লঙ্কানদের ৩৯৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে দিনটা দারুণভাবেই শেষ করেন বাংলাদেশের বোলাররা। এরপর চ্যালেঞ্জ শুরু হয়েছে বাংলাদেশী ব্যাটারদের। সেই চ্যালেঞ্জে অগোছালো শুরু করলেও পরে নিজেদের থিতু করতে পেরেছেন তামিম ও জয়। আউট হননি কেউ। দিনের শেষ দেড় ঘণ্টায় বিপদ হতে দেননি, বরং ব্যাটিং উইকেটে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে ওভারপ্রতি ৪ রান করে তুলে নিয়েছেন ৭৬ রান। তাই ৩২১ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্দান্ত একটি সফল ও দাপুটে দিন পার করেছে স্বাগতিকরা অনেক দিন পর। প্রথম ভাগে এসেছে সাফল্য, শেষভাগেও ঘটেনি চিরাচরিত বিপর্যয়। এখন লঙ্কান তিন স্পিনার রমেশ, এম্বুলদেনিয়া ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভাবে দেখেশুনে আজ তৃতীয় দিন সকালটাও নির্বিঘেœ শুরু করতে পারলেই ভাল একটা অবস্থানে যাওয়া সম্ভব হতে পারে। লিড নেয়ার দিকেই দৃষ্টি বাংলাদেশের। সেজন্য আজ সারাদিন ব্যাট করেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে উইকেট। এ বিষয়ে নাঈম বলেছেন, ‘এখন তামিম ভাই আর জয় খুব ভাল ব্যাটিং করছে। এখানে যত লম্বা ব্যাটিং করা যায়, আমাদের জন্য তত ভাল। যদি আমরা লিডটা পাই, তখন চেষ্টা করা যত দ্রুত অলআউট করতে পারি।’ আজ সাগরিকার ভ্যাপসা, গুমোট গরমে বাংলাদেশী ব্যাটারদের তাই চ্যালেঞ্জ দিনব্যাপী উইকেটে টিকে থাকার। তাহলেই হয়তো দ্বিতীয় দিনের সাফল্যটা পাবে পূর্ণতা।
×