ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারি বর্ষণে পচে গেছে বাদাম ও মিস্টি আলুসহ শস্যের ক্ষেত

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ১৬ মে ২০২২

ভারি বর্ষণে পচে গেছে বাদাম ও মিস্টি আলুসহ শস্যের ক্ষেত

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ পাখিমারা আবাসনের জীর্ণ ঘরে বসবাস রোকেয়া বেগমের। স্বামী ছন্নছাড়া। চার সন্তানের দুইজন এখনও নিজের সংসারে। অনেক কষ্টে লেখাপড়া করাচ্ছেন। নিজে দুই তিন বাড়িতে ঝিএর কাজ করেন। কাঁথা সেলাই, হোগলা বুননের কাজ করে জীববিকার চাকা কোনমতে সচল রেখেছেন এই নারী। তারপরও একটু বাড়তি উপার্জনের আশায় পাশের মৃধাদের পড়ে থাকা অনাবাদি ১৫ শতক জমিতে প্রায় কুড়ি হাজার টাকা খরচ করে বাদাম ও মিস্টি আলুর আবাদ করেছিলেন। ফলনও ধরেছিল। স্বপ্নে বিভোর ছিলেন এই অসহায় কৃষাণী। কিন্তু ঘুর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ভারি বর্ষণে সব তছনছ হয়ে গছে। ফসলের ক্ষেতে পানি জমে ফলন্ত বাদাম গাছ ও মিস্টি আলু পচে গেছে। মানুষটির কষ্টের কথা শুনলে যে কারও মনে দাগ কেটে যায়। এখন এই নারী যেন হতাশায় চোখেমুখে সব অন্ধকার দেখছেন। দেখালেন উপড়ানো বাদাম গাছের গোড়ায় থোকায় থোকায় অপরিপক্ক বাদাম। ধার-দেনা করে আবাদ করা কৃষিতে চরমভাবে মার খেয়ে মানুষটি দু’চোখে এখন সর্ষেফুল দেখছেন। মানুষটির ভাগ্যে আজ অবধি জোটেনি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির কোন সহায়তা। ঈদের সময় ১০ কেজি চাল পেয়েছেন। তাও মাপ দিয়ে ৬-৭ কেজিতে ঠেকেছে। এভাবে পশ্চিম সোনাতলা গ্রামের কৃষক জাফর সরদার জানান, তার ২৭ শতক জমির ভূট্টা, মরিচ ও ফ্যালন ডাল বৃষ্টির পানিতে ডুবে পচে গেছে। একইভাবে রহিম হাওলাদারের ৩০ শতক জমির চিনাবাদাম, মরিচ, মিষ্টি আলু। শাহআলম বাঘার ১৮ শতক জমির চিনাবাদাম, মুগডাল, মরিচ। ইসমাইল খানের ১৫ শতক জমির মুগ, মরিচ ও ফ্যালন ডালের ক্ষেত সম্পুর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ কৃষকের এমন দশা। কমবেশি ক্ষতির কবলে পড়েছেন। ঘুর্ণিঝড় অশনি জীবন ও স্থায়ী সম্পদের ওপর বড় ধরনের আঘাত না আনলেও এর প্রভাবে ভারি বর্ষণে রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, সোমবারের ভারি বর্ষণে ২৬৬ হেক্টর জমির মুগডাল, ৪৪ হেক্টর জমির চিনাবাদাম, ২৭ হেক্টর মিষ্টি আলু, ১৫২ হেক্টর জমির মরিচ, ৪০ হেক্টর সবজি, ৪২ হেক্টর বোরো ক্ষেত, ২০ হেক্টর জমির ভূট্টা, ১৫ হেক্টর জমির সূর্যমুখী ক্ষেত পানি জমে ক্ষতি হয়েছে। এসব কৃষকরা এখন বিশেষ প্রণোদনার দাবি করেছেন।
×