ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফরিদ হোসেন

সেই স্মৃতি অম্লান

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ১৭ মে ২০২২

সেই স্মৃতি অম্লান

১৯৮১ সালের ১৭ মে। ঢাকা শহর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। মে মাসে এমন আকাশ-ভাঙ্গা বৃষ্টি আগে কখনও দেখিনি। তুমুল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ছয় বছরের রাজনৈতিক নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা ফিরে এসেছিলেন প্রিয় মাতৃভূমিতে। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে একনজর দেখার জন্য বৃষ্টি প্লাবনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনতার ঢল নেমেছিল। দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল ‘১০ লক্ষাধিক মানুষ বৃষ্টি উপেক্ষা করে শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা জানাতে এসেছিল।’ ১৯৮১ সালে নয়াদিল্লীতে নির্বাসিত থাকাকালীন শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি নির্বাচিত করে। ১৭ মে স্বদেশ ফিরে আসার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করলেন। ইডেন হোটেল সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করার খবরটি আমি দ্রুত পাঠিয়েছিলাম আমার সেই সময়ের কর্মস্থল ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সি বা এনাতে। একটি জরুরী খবর হিসেবে তা দেশের পত্রিকা, টেলিভিশন ও বেতারে পৌঁছেছিল। আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরলেন তখন আমার সাংবাদিকতার বয়স মাত্র পাঁচ বছর। নবীন রিপোর্টার। বলছি সেদিনের বৃষ্টির দাপটের কথা। কোথাও কোমর পানি, কোথাও হাঁটু অবধি। সেই মহাবাদলের দিনে লাখো জনতার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বক্তৃতার প্রথম শব্দ থেকে শেষ শব্দ ‘জয় বাংলা’ শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল আরও অনেক রিপোর্টারের সঙ্গে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি, মাকে হারিয়েছি, শিশু ভাই রাসেলসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি। আমার আর কিছু হারাবার ভয় নেই। আমি দেশে ফিরে এসেছি বাংলার মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে।’ সেই থেকে শুরু। রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনার সঙ্গে একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার দীর্ঘ সম্পর্কের যাত্রা। এনা ছেড়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)তে কাজ করেছি। কাজ করেছি টাইম ম্যাগাজিনের ঢাকা প্রতিনিধি হয়ে। প্রায় পঞ্চাশ বছরের সাংবাদিকতায় একটি দীর্ঘ সময়জুড়ে আছে শেখ হাসিনা ও তাঁর রাজনৈতিক জীবন। তাঁর জনসভা কভার করেছি, তাঁর সাক্ষাতকার নিয়েছি এপি, টাইম ম্যাগাজিন ও টেলিগ্রাফ পত্রিকার জন্য। তাঁর সঙ্গে ঘুরেছি বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে বাসে ও ট্রেনে। কখনও বা তাঁকে অনুসরণ করেছি হেলিকপ্টারে। দেশে ফিরে আসার পর শুরুর দিনগুলোতে শেখ হাসিনা বাস করতেন তাঁদের ৩২নং ধানম-ির বাসভবনে, যেখানে গুলি করে হত্যা করা হয় তাঁর পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। যেখানে নিহত হন তাঁর মহীয়সী মাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা, ভাই কামাল ও জামাল ও তাদের নববধূদ্বয়। যেখানে প্রাণভিক্ষা চেয়েও নিজেকে বাঁচাতে পারেনি তাঁর অতি আদরের সর্বকনিষ্ঠ ভাই ১০ বছরের রাসেল। শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা এই বাড়িটিকে একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে রূপান্তরিত করেছেন। রূপান্তরের আগে খুনীরা বাসভবনটি যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিল ঠিক সেই অবস্থায়ই ছিল। দোতলার সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর রক্তের দাগ, বাড়িময় বুলেটের চিহ্ন, তছনছ কক্ষগুলোতে নারকীয় যজ্ঞের প্রমাণ। শুরুর দিনগুলোতে শেখ হাসিনা নিচতলায় থাকতেন। বাড়িতে প্রবেশের পরই অতিথি আপ্যায়নের কক্ষ, তাঁর ডানপাশে আরও দুটি কক্ষ (যত দূর মনে পড়ে), তার একটি শয়ন কক্ষ, অন্যটি লাইব্রেরি ও পড়ার ঘর। অতিথি আপ্যায়ন কক্ষের বা দিকে অর্থাৎ বাসাটির পশ্চিম প্রান্তে স্টাফ কক্ষ, উত্তর অংশে খাবার টেবিল ও রান্নাঘর। তা পেরিয়ে ছোট একটু খালি জায়গা। আমরা যারা তখন আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বীট কভার করতাম, অবসর পেলেই চলে যেতাম ৩২ নম্বর বাড়িটিতে। কখনও কখনও সকাল গড়িয়ে দুপুর হতো। আপা অর্থাৎ শেখ হাসিনা খাবার টেবিলে যা-ই থাকত তা দিয়েই আমাদের নিয়ে খেতে বসতেন। গল্প করতেন। ভর্তা, ভাজি, ছোট মাছ, ডাল যেদিন যা থাকত তাই খেতাম। প্রায় প্রতিদিনই আমাদের সঙ্গে থাকতেন আমাদের প্রিয় প্রয়াত বেবী আপা (বেবী মওদুদ, যিনি পরে সংসদ সদস্য ছিলেন)। শেখ হাসিনাকে তাঁর দলীয় নেতা, কর্মী-সমর্থক, সাংবাদিকগণ নানা নামে সম্বোধন করেন। কারও কাছে তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা, কারও কাছে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। অনেকেই তাঁকে জননেত্রী বলে সম্বোধন করেন। অধিকাংশ সাংবাদিক তাঁকে ‘আপা’ বলে সম্বোধন করেন। এই সম্বোধন ঘরোয়া ও আনুষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রেই করা হয়। বিশেষ করে সাংবাদিকদের সঙ্গেও তিনি একজন বড় বোন বা আপার মতোই আচরণ করেন। শেখ হাসিনার অনুষ্ঠান রিপোর্ট করার জন্য রাজধানীর বাইরে গেলে আপার প্রথম চিন্তাটি হলো, সাংবাদিকরা যথাসময়ে আহার করতে পারছে কি-না। এমন আন্তরিক ব্যবহারের ধারাটি তাঁর রক্তে প্রবাহিত হয়েছে তার পিতা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে। বঙ্গবন্ধুও তাঁর সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের খোঁজ-খবর নিতেন নিবিড়ভাবে। সাংবাদিকদের খাওয়া হলো কি-না, তাদের রাত্রিযাপনে সুবন্দোবস্ত হয়েছে কি-না তা খোঁজ নিতে বঙ্গবন্ধু ভুল করতেন না। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাও পিতার কাছে থেকেই এই ধারাটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। আমি নিজে যে কতবার আপার ভালাবাসা ও স্নেহ পেয়েছি তা বলে শেষ করা যাবে না। ১৭ মে ঢাকা ফিরে আসার পরদিন সন্ধ্যায় আপা গেলেন টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত ও তাঁর প্রতি তার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তার পরমাণু বিজ্ঞানী স্বামী ড. ওয়াজেদ আলী মিয়া। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারাও ছিলেন। ভাড়া করা একটি ছোট লঞ্চে আপা ও তাঁর সফরসঙ্গী আমরা সন্ধ্যায় সদরঘাট ছাড়লাম। পথে লঞ্চে আপার সঙ্গে সফরকারী সাংবাদিকদের পরিচয় হলো। হালকা পাতলা গড়নের শেখ হাসিনার পরনে আটপৌড়ে সুতির শাড়ি। দীর্ঘ নির্বাসন ও একদিন আগের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে পাত্তা না দিয়ে জনগণের যে অভূতপূর্ব বিপুল সংবর্ধনা ও তৎজনিত ক্লান্তির ছাপ তখনও তার চোখে মুখে। তবুও হাসিমুখে সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন। পথে কোন অসুবিধা হচ্ছে কি না, খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো হলো কি নাÑ খোঁজ-খবর নিলেন। একজন অতি আপনজনের আন্তরিক ব্যবহার। আপাকে সেই প্রথম দেখার মুহূর্তেই তাঁকে আমার খুব চিরচেনা কাছের এক মানুষ মনে হলো। সেদিনই মনে হয়েছিল, তাঁর কাছে সবধরনের আবদার করা যাবে। করেছিও বটে। তবে আমার সব আবদারই ছিল পেশাগত। আপা সভা করছেন, জোর করে ঘরের ভেতরে ঢুকে এপি ও টাইম ম্যাগাজিনের জন্য সাক্ষাতকার নিয়েছি। তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োজিত রক্ষীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করলে তাঁর কাছে অভিযোগ করেছি। তিনি কখনও রুষ্ট হননি। টুঙ্গিপাড়ার পথে লঞ্চের দোতলায় খোলা আকাশের নিচে আমরা সাংবাদিকরা প্রায় গভীর রাত পর্যন্ত গল্প করেছি। টুঙ্গিপাড়ায় আপাদের বাড়ির বহির্অঙ্গনে একটি বড় ঘরে সাংবাদিকদের ঘুমানোর ব্যবস্থা। গভীর রাতে আমার প্রচ- মাথাব্যথা হয়েছিল। আমার অসুস্থতার কথা প্রথমে জানতে পারেন শেখ সেলিম। তিনি এসে আমার খোঁজ-খবর নিলেন। বাড়ির ভেতরে গিয়ে আবার ফিরে এলেন এক গ্লাস গরম দুধ হাতে। বললেন, আপা পাঠিয়েছেন। একটুখানি বিব্রত ও বেশ খানিকটা কৃতজ্ঞতার মধ্যে আমার মাথাব্যথা যেন কমে গেল। সেদিনই পরিচয় পেলাম মমতাময়ী এক নারীর। যিনি শুধুই একজন রাজনীতিক নন, তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। তাঁর আচরণের পরতে পরতে স্নেহের ফল্গুধারা। টুঙ্গিপাড়া থেকে ফিরে ঢাকায় কয়েকদিন অবস্থান শেষে আপা তাঁর দেশব্যাপী সফরের প্রথম পর্যায়ে ঢাকা থেকে চাঁদপুর, বরিশাল হয়ে খুলনা এবং খুলনায় দুই দিনের যাত্রা বিরতির পর যশোর, কুষ্টিয়া হয়ে রাজশাহী সফর করেন। সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা গ্রহণকারী জেনারেল জিয়াউর রহমান তখন ক্ষমতায়। দেশে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা হাতেগোনা। বাংলা দৈনিকের মধ্যে ইত্তেফাক, সংবাদ ও আজাদ। বাংলার বাণী তখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পত্রিকাটি পুনঃপ্রকাশের জন্য শেখ সেলিম আদালতে লড়ছেন। ইংরেজী পত্রিকার মধ্যে বাংলাদেশ অবজারভার ও বাংলাদেশ টাইমস উল্লেখযোগ্য। সরকারী নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও বেসরকারী বার্তা সংস্থা এনা। দেশের একমাত্র টেলিভিশন কেন্দ্র বিটিভি সরকার নিয়ন্ত্রিত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাংলাদেশ বেতার হলো রেডিও বাংলাদেশ এবং এটিও সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তখনকার মতো বেসরকারী টেলিভিশন ও এত রেডিও’র ছড়াছড়ি ছিল না। তৎকালীন গণমাধ্যম শেখ হাসিনা বা তাঁর দলের খবর আজকের দিনের মতো ব্যাপক প্রচার করত না। শেখ হাসিনা দেশে প্রত্যাবর্তনের পর আওয়ামী লীগ নিঃসন্দেহে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা হয়। তখনও দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল। দলের ভেতরে দলাদলি ছিল। তখনকার গণমাধ্যম শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে একটু এড়িয়ে চলত। ঢাকা সদরঘাট থেকে রকেট-এ চড়ে খুলনা যাবার আয়োজন। তখন সাধারণ যাত্রী হিসেবেই শেখ হাসিনা ভ্রমণ করছেন। তার সঙ্গী আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ছিলেন। সন্ধ্যায় রকেট বাদামতলী ঘাট থেকে খুলনার উদ্দেশে রওনা হলো। সাংবাদিক সর্বসাকল্যে দুজন। রিপোর্টার হিসেবে এনা থেকে আমি আর বাংলার বাণী থেকে স্বপন সরকার। তখন বাংলার বাণী বন্ধ, তাই স্বপনের ছবি ব্যবহারের সুযোগ ছিল খুবই কম। ঢাকার কোন দৈনিক পত্রিকাই সেদিন ঢাকা থেকে আপার এই সফর কভার করতে কোন রিপোর্টার পাঠায়নি। জেলাভিত্তিক রিপোর্টার দিয়েই তারা কাজ শেষ করেছিল। যাত্রাপথে মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল ও বাগেরহাটের পথসভায় আপা বক্তৃতা করেন কখনও রকেটের ডেক থেকে, কখনও ঘাটে নেমে। পথসভাগুলোতে লাখো লোকের সমাবেশ। তারা একনজর বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দেখতে চায়, তাঁর কথা শুনতে চায়। আপাও ক্লান্তিহীন বক্তৃতা দিচ্ছেন। আমি নোট নিচ্ছি। তখন তো আর মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, নোটবুকের যুগ নয়। ল্যান্ডফোনই একমাত্র ভরসা। বরিশাল পৌঁছতে আমাদের বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। তোফায়েল ভাই ব্যবস্থা করে দিলেন। বরিশাল নেমে একটি ওষুধের দোকান থেকে ফোনে ঢাকায় এনা অফিসে খবর পাঠালাম। লঞ্চঘাটে ফিরে দেখি রকেট চলে যাচ্ছে ঘাট ছেড়ে। আমি হাত নাড়ছি প্রাণপণ। তোফায়েল ভাই দেখতে পেয়ে লাউড স্পীকারে আমাকে নৌকা করে রকেটে নিয়ে আসার অনুরোধ জানান। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা নৌকায় চড়িয়ে আমাকে রকেটে পৌঁছে দিল। খুলনায় দুদিন যাত্রা বিরতি। খুলনা থেকে রাজশাহী। আমরা একটি বাসে রাজশাহীর দিকে রওনা হলাম। জুনের ভ্যাপসা গরম। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টির পশলা। কুষ্টিয়া সার্কিট হাউস যাত্রা বিরতি ও দুপুরের খাবার আয়োজন। আবার আমার মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথা। আধো ঘুমেই শুনতে পেলাম আপার কণ্ঠ, ‘আমার কাছে ওষুধ আছে, ওনাকে খাইয়ে দাও।’ ঘুমিয়ে পড়েছি এই ভাবনায় ওষুধ খাওয়া হয়নি। রাজশাহী শহরে পৌঁছে আপা চলে গেলেন সার্কিট হাউসে। পর্যটন মোটেলে আমার শোবার ব্যবস্থা হলো আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে একটি কক্ষে। পরদিন খুব ভোরে আমাদের কক্ষের সামনে কয়েকটি কণ্ঠ। জিজ্ঞেস করছে-সাংবাদিক ফরিদ হোসেন কোন কক্ষে আছেন। রাজ্জাক ভাই আমাকে ডেকে তুললেন। দরজা খুলে আগন্তুকদের কাছে পরিচয় দিলে তারা বললেন, আপা আমাদের পাঠিয়েছেন। আপনাকে সার্কিট হাউসে যেতে বলেছেন। আমি দ্রুত গোসল সেরে ওদের সঙ্গে সার্কিট হাউসে এলাম। বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল। তখনও আপার সঙ্গে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতার গভীরতা পায়নি। আমি দরজা টোকা দিয়ে তাঁর কক্ষে প্রবেশ করা মাত্র আপা বললেন, আসুন আমার সঙ্গে নাস্তা করবেন। আপনার মাথাব্যথার কারণ পিত্তি হয়েছে। চিড়া-গুড় কলা আপনার পথ্য। এরপরই তিনি বললেন, আমার সঙ্গে এক অসুস্থ সাংবাদিক ঘোরে। কেবল তার মাথাব্যথা। তখনই মনে পড়ে গেল টুঙ্গিপাড়ার সেই রাতের ঘটনা। সেদিনও আমার মাথাব্যথা হয়েছিল। সেদিন তিনি গরম দুধের ব্যবস্থা করেছিলেন। আপা সে রাতের কথা মনে রেখেছেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বেগম সাজেদা চৌধুরী ও আইভি রহমান। কিছুটা কাচুমাচু হয়ে নাস্তা খেতে খেতে একজন নারীর মমতাবোধে কৃতজ্ঞতায় আমার মাথা নুয়ে আসছিল। তিনি শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুকন্যা, আজকের প্রধানমন্ত্রী, মাদার অব হিউমিনিটি এবং আমাদের চিরন্তন আপা। লেখক : সম্পাদক, ইউএনবি
×