ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিমান্ডে পি কে

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ১৭ মে ২০২২

রিমান্ডে পি কে

দেশে-বিদেশে বহুল আলোচিত আর্থিক খাতের শীর্ষক প্রতারক প্রশান্ত কুমার হালদার তথা পি কে হালদারের গ্রেফতারের বিষয়টি কিছুটা হলেও আপাত স্বস্তি দিয়েছে বঞ্চিত গ্রাহকদের মনে। গত শনিবার ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পি কে হালদারসহ ৫ সহযোগীকে গ্রেফতার করে। সেখানে তাদের প্রাসাদোপম একাধিক বাড়িসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়, যেসব মূলত বাংলাদেশের সাধারণ আমানতকারীদের টাকা। অবৈধভাবে বিভিন্ন সময় পাচার করা হয় হুন্ডি ও অন্যান্য উপায়ে। প্রধানত, আর্থিক কেলেঙ্কারি, বেআইনীভাবে ভারতে অর্থ পাচার, বিদেশে অর্থ পাচারসহ আইনবহির্ভূত সম্পদের বিষয়ে তদন্ত করছে ইডি। সেদেশেও পি কে হালদার জালজালিয়াতি করে আধার কার্ডসহ অবৈধ কাগজপত্র বাগিয়ে নিয়েছেন। পি কে হালদারের যাবতীয় সম্পদ ও সম্পত্তির বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়নি এখনও। পি কে হালদারসহ ধৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। একাধিক বিলাসবহুল বাড়িও সিলগালা করা হয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিক পি কে হালদার মূলত রিলায়েন্স ফাইন্যান্স (আভিডা ফাইন্যান্স) এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের (গ্লোবাল ইসলামী) সাবেক এমডি এবং ভয়ঙ্কর পিপলস লিজিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি ৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেনামী ঋণ, শেয়ার কিনে নিয়ন্ত্রণসহ সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করে ২০১৯ সালে প্রথমে পালিয়ে যান ভারতে এবং পরে কানাডায়। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইন্টারপোল জারি করে রেড এলার্ট নোটিস। অবশেষে কুখ্যাত পি কে হালদার গ্রেফতার হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, যেটি নিঃসন্দেহে একটি সুসংবাদ। ভয়ঙ্কর প্রতারক পি কে হালদারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে কয়েকশ’ আমানতকারীর মধ্যে রয়েছেন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিও। তারা এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিতে সরল বিশ্বাসে কোটি কোটি টাকা গচ্ছিত রেখে পড়েছেন মহাবিপদে। অনেকেরই পথে বসার উপক্রম হয়েছে। অথচ পিপলস লিজিংয়ের ব্যবসা করার জন্য অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির কেউ কেউ পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করে সেখানেও ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে বসেছেন। দুদকের মামলার প্রেক্ষিতে ভার্চুয়াল কোর্টে কয়েকজন আমানতকারীর বক্তব্য শুনে হাইকোর্ট মন্তব্য করেছে যে, এসব তো হৃদয় ভেঙ্গে দেয়ার মতো ঘটনা। সর্বশেষ, পি কে হালদারকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এলার্ট জারি করা হয়। ইতোমধ্যে তার কয়েক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। দুদকের অভিযোগ, পি কে হালদার ৮০ বান্ধবীর মাধ্যমে এই বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। এর সমাধান কতদিনে হবে এবং আমানতকারীরা কবে টাকা ফেরত পাবেন সেটা একেবারেই অনিশ্চিত। পি কে হালদারের গ্রেফতারের বিষয়টি কিছুটা হলেও স্বস্তি বয়ে এনেছে প্রতারিত গ্রাহকদের কাছে। তবে গচ্ছিত অর্থ ফেরত পেতে অপেক্ষা করতে হবে পি কে হালদারকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরসহ দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়ার জন্য, যেটি সময়সাপেক্ষ।
×