ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইউক্রেন-রাশিয়ার পর ভারত থেকেও আসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে

গমের বিকল্প উৎসের সন্ধান করছেন আমদানিকারকরা

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ১৬ মে ২০২২

গমের বিকল্প উৎসের সন্ধান করছেন আমদানিকারকরা

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রাশিয়া এবার তার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গম উৎপাদনের রেকর্ড করতে যাচ্ছে, বলেছেন খোদ সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানির রেকর্ডও করতে চায় দেশটি। কিন্তু সেই গম রফতানি এবং আমদানি হবে কিভাবে? যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি বন্ধ। ভরসার আরেকটি বড় জায়গা ভারতও রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ অবস্থায় গমের বাজারে অস্থিরতার আলামত সৃষ্টি হয়েছে। উদ্বিগ্নতা দেখা দিয়েছে আমদানিকারক, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তার মধ্যে। প্রতিকূল এ অবস্থা সামাল দিতে বিকল্প উৎসের সন্ধান চলছে। এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি চান আমদানিকারকরা। গমের বাজারে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, গমের বাজারে অস্থিরতা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগেও ছিল। যুদ্ধটা সেই পালে আরও হাওয়া লাগিয়েছে। এখন প্রতিদিনই একটু একটু করে বাড়ছে গমের দাম, যার প্রভাব পড়েছে আটা-ময়দার ওপর। খোলা আটার দাম পৌঁছেছে কেজিতে ৪০ টাকায়। প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪৫ টাকায়। আর ময়দার দাম প্যাকেট ৬০ টাকা এবং খোলা ৫৫ টাকায়। এ মূল্য উর্ধমুখী বলে জানাচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এক্ষেত্রে তাদের হাত নেই। তারা বড় আমদানিকারকদের কাছ থেকে গম কিনছেন আগের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে। এর কারণ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শুধু মূল্যই বাড়েনি, এক ধরনের দুষ্প্রাপ্যতা সৃষ্টি হয়েছে। বড় রফতানিকারক ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে গম আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প উৎসের অনুসন্ধান চলছে। কিন্তু এর জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। অন্যতম শীর্ষ গম আমদানিকারক মেসার্স বিএসএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল বশর চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, ভারতের নিষেধাজ্ঞা জারির আগেই প্রচুর এলসি খোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে যে গম এখন পাইপ লাইনে আছে সেগুলো দেশে পৌঁছালে বড় ধরনের সঙ্কট হবে না। এতে অন্তত দুই-তিনমাস চলে যাবে। এই সময়ের মধ্যে বিকল্প পথ বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। অভ্যন্তরীণ বাজারে গমের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার বিকল্প পন্থা কী হতে পারে এ প্রশ্নের জবাবে এই আমদানিকারক বলেন, এক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। সরকার গম আমদানি করবে তা নয়, আমদানিকারকদের আর্থিক সাহায্য করতে হবে, তাও নয়। ভারত থেকে আমদানির যে পরিমাণ এলসি হয়েছে এবং কেনার ব্যাপারে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের যেগুলো এলসি হওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে সহযোগিতামূলক ভূমিকা রাখতে পারে সরকার। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সঙ্কট দেখা দিলেও এ সঙ্কটকে আমি সাময়িক হিসেবে দেখতে চাই। কারণ, বিকল্প উৎস বেরিয়ে যাবে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, বুলগেরিয়াসহ বেশকিছু দেশ রয়েছে যারা গম উৎপাদন ও রফতানি করে। এছাড়া ভারত রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও প্রতিবেশী দেশ সঙ্কটে পড়লে রফতানি করা হবে বলে তাদের সার্কুলারেই বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের বন্ধুপ্রতীম দেশ, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও চমৎকার। সে হিসেবে বাংলাদেশ সঙ্কটে পড়বে না বলেই মনে করি। তাছাড়া বছরের এই দুটি মাসে গমের চাহিদা কিছুটা কম থাকে বলে জানান তিনি। কারণ, এটি ফলের মওসুম। আমাদের প্রধান খাদ্য চাল, গম নয়। আটা-ময়দায় তৈরি খাদ্য আমরা নাস্তা বা পরিপূরক হিসেবে খেয়ে থাকি। ফলের মওসুম হওয়ায় এ সময়ের মধ্যে তাই আটা-ময়দার ওপর চাপ কিছুটা হলেও কম থাকে। দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুদ্ধের কারণে সঙ্কটটা হঠাৎ সৃষ্টি হওয়ায় আমদানিতে ছেদ পড়েছে। বিকল্প উৎস থেকে গম আমদানির চেষ্টাও চলছে। এ খাতের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তারা নিশ্চয়ই বসে নেই। তবে সবচেয়ে বেশি ভরসা আমরা ভারতের ওপরই রাখতে চাই।
×