মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ আরেকটি উইকেট বাংলাদেশ দল তুলে নিতে পারলে সাগরিকা টেস্টের প্রথম দিন শেষে হয়ত বলা যেত সমানে-সমান অবস্থান শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। কিন্তু অভিজ্ঞ এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ১১৪ ও দিনেশ চান্দিমাল ৩৪ রানে অপরাজিত আছেন। তাই লঙ্কানদের স্বপ্ন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে অন্তত ৫০০ রান করা। সেজন্য আজ আরও ২৪২ রান করতে হবে তাদের। ভরসা করার মতো ব্যাটার বলতে এরপরে আছেন শুধু নিরোশান ডিকভেলা। তাই প্রথম দিন পর ৪ উইকেটে লঙ্কানরা ২৫৮ রান তুললেও আজ সকালে তাদের দ্রুতই গুটিয়ে দেয়ার প্রত্যয় বাংলাদেশের। বিশেষ করে ১৫ মাস পর ফিরে অফস্পিনার নাঈম হাসান, ৫ মাস ও ৪ টেস্ট পর করোনামুক্ত হয়ে একদিন বিরতি দিয়ে ফিরেই সাকিব আল হাসান যেমন বোলিং করেছেন- তাতে সেই আত্মবিশ^াসটা পাচ্ছেন বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। তার আশা ৪০০ রানের মধ্যেই লঙ্কানদের আটকানো। তবে সকালের সেশনে আজ দ্রুতই সফলতা না আসলে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশকে রানের চাপে ফেলবে শ্রীলঙ্কা।
২০১৮ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে এসে লঙ্কানরা সাগরিকায় করে ৯ উইকেটে ৭১৩ রান। প্রায় নতুন করে গড়ে ওঠা দলটির হয়ে সেই ম্যাচে কুশল মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও রোশেন সিলভা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। এবার শুধু রোশেন নেই। পেস বোলিংয়ে কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও স্পিন বিভাগে যে বৈচিত্র্য আছে তাতে বেশ শক্ত বোলিং লাইন লঙ্কানদের। টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়েছে তারা সাগরিকায় এতকিছু চিন্তা করেই। তাছাড়া আগের দিন উইকেট দেখেই সফরকারী অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœ ঘোষণা দিয়েছিলেন, এখানে ফ্ল্যাট উইকেটে বোলারদের জন্য কিছুই করার থাকবে না। শুরুটা যদিও ভাল হয়নি সফরকারীদের। দিনের শুরুতে নতুন বলে একেবারে অগোছালো বোলিং করেন দুই পেসার শরিফুল ইসলাম ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। কিন্তু অষ্টম ওভারে বল হাতে নিয়েই সাফল্য আনেন নাঈম। নিজ শহরের পরিচিত উইকেটে তিনি লঙ্কান অধিনায়ক করুনারতেœকে (৯) এলবিডব্লিউ করে ২২তম ওভারে আবার ওশাদা ফার্নান্দোকে কট বিহাইন্ডে শিকার করেন। ওশাদা ৭৬ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে ৩৬ রান করেন। তবু ২৪ ওভারের প্রথম সেশনে ২ উইকেটে ৭৩ রান তুলে তেমন খারাপ অবস্থানে যায়নি লঙ্কানরা। বোলিংয়ে দেখা যায়নি সাকিবকে। লাঞ্চ বিরতির আগে জুটি বাঁধা কুশল মেন্ডিস ও ম্যাথুস দ্বিতীয় সেশনে স্বাগতিক বোলারদের হতাশায় পুড়িয়ে বিনা উইকেটে ৮৫ রান যোগ করেন। এই সেশনে বোলিংয়ে আসেন সাকিব। ৩৬ থেকে ৫৪ ওভার পর্যন্ত টানা ১০ ওভার বোলিং করে ৫ মেডেনে মাত্র ৯ রান দিয়ে চাপে রাখেন তিনি লঙ্কানদের। তবে চা বিরতির পর প্রথম বলেই বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম হাফ সেঞ্চুরিয়ান কুশলকে (৫৪) সাজঘরে ফেরালে ৯২ রানের জুটি ভেঙ্গে যায়।
প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে আসেন সাকিব এবং তিনিও সাফল্য পান ধনঞ্জয়াকে (৬) ফিরিয়ে। আবারও ম্যাচে নিয়ন্ত্রণে আসে বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর ম্যাথুস-চান্দিমাল কোন ভুল করেননি। দ্বিতীয় স্পেলে ৬-১-১৩-১ বিশ্লেষণে শেষ করা সাকিব তৃতীয় স্পেলেও দারুণ বোলিং করেছেন (৩-১-৫-০)। শেষ সেশনে ২ উইকেট হারালেও ১০০ রান যোগ করেছে লঙ্কানরা। সাকিব সেখানে সবমিলিয়ে ১৯ ওভারে ৭ মেডেনে মাত্র ২৭ রান দেন। তাইজুল-সাকিব দারুণ লাইন-লেংন্থে বল করে গেছেন বলে লঙ্কান ব্যাটাররা দ্রুত রান তুলতে পারেননি। তাই বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ হেরাথ বললেন, ‘সাকিব সবসময় কিছুটা ধীরেই বল করতে স্বাচ্ছন্দ্য পায়। কিন্তু তাইজুলের ব্যাপারে আমার বলতেই হবে, কারণ সে তার গতির বৈচিত্র্যতার দারুণ ব্যবহার করে। আর নাঈমের ব্যাপারে বলব যে তাকে অবশ্যই কন্ডিশন বুঝে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে তার কিছুটা উন্নতি প্রয়োজন। আগামীকাল (আজ) সকালে আমাদের সুযোগ আছে এবং আশা করছি তাদের দ্রুতই গুটিয়ে দিতে পারব।’ তাইজুল সবচেয়ে বেশি ৩১ ওভার বোলিং করে মাত্র ৭১ রান দিয়েছেন। নাঈম সেখানে ১৬ ওভারেই খরচা করেছেন ৭১ রান। অর্থাৎ তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে শেষদিকে। এজন্যই উন্নতির কথা বলেছেন হেরাথ। আজ শুরুতেই সাফল্য পেতে হবে বাংলাদেশকে এই ম্যাচে ব্যাকফুটে না পড়তে হলে। ম্যাথুস-চান্দিমালের জুটিতে ইতোমধ্যেই যোগ হয়েছে ৭৫ রান। সেজন্য হেরাথ স্বাগতিকদের লক্ষ্য নিয়ে বললেন, ‘তারা এখন ৪ উইকেটে ২৫৮। আমাদের কাল সকালে যতটা দ্রুত সম্ভব উইকেট দুটো নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের ৪০০ রানের নিচে আটকাতে পারব। সে কারণে তাদের আসলে আমরা আর ১২০-১৩০ রানের মধ্যেই গুটিয়ে দিতে চাই।’
লঙ্কানরা অবশ্য স্বপ্ন দেখছে আরেকটি বড় সংগ্রহের। সাগরিকায় ২০১৮ সালে সর্বশেষ এসে ৯ উইকেটে ৭১৩, ২০১৪ সালে ৫৮৭ ও ২০০৯ সালে ৬ উইকেটে ৪৪৭ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছে তারা। এবার ১১৪ রানে অপরাজিত ম্যাথুস ও ৩৪ রানে অপরাজিত চান্দিমালও আশা জিইয়ে রেখেছেন বড় সংগ্রহের। তাছাড়া এরপরে আছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার ডিকভেলা ও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে একটি ট্রিপল সেঞ্চুরিসহ ৫ শতক পাওয়া রমেশ মেন্ডিস। তাই হাফসেঞ্চুরিয়ান কুশল বললেন, ‘আমার মনে হয় প্রথম দিন ২৫৮ রান করা খুবই ভাল সংগ্রহ। আমার মনে হয় এই পিচে ৪০০ কিংবা ৫০০ রান অনেক ভাল সংগ্রহ হবে।’ দারুণ ব্যাটিং করা ম্যাথুস নিজেও ভাল সংগ্রহ গড়ে দেয়ার প্রত্যয় দেখিয়েছেন। দিনের খেলা শেষে তিনি নিজেও বলেছেন,‘প্রথম ইনিংসের রান খুবই জরুরী। বাংলাদেশী বোলারদের কাছ থেকে কিছুই বের করা সহজ নয়। তারা দারুণ লাইন-লেংন্থে বল ফেলেছে এবং ছাতার মতো ফিল্ডিং সাজিয়েছে। আমাদের বড় কিছুর পেছনে ধাবিত হওয়া একেবারেই সহজ ছিল না। আশা করছি তৃতীয় ও চতুর্থ দিনে এখানে ঘূর্ণি হবে। এখনও এটা অনেক ভাল উইকেট, তাই প্রথম ইনিংসের রানগুলো গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই এখানে একজনকে বড় ইনিংস খেলতে হবে। আমরা সেটাই করতে চাই।’ অর্থাৎ আজ সকালেই সাগরিকায় ব্যাট-বলের কঠিন লড়াই জমতে যাচ্ছে।