ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ আবদুল মজিদ ভূঁইয়া

মানব বিধ্বংসী ম্যানহাটন প্রজেক্ট

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ১৬ মে ২০২২

মানব বিধ্বংসী ম্যানহাটন প্রজেক্ট

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে বিশ্বে পাঁচটি সুপার পাওয়ার ছিল যথাক্রমে অষ্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য (মধ্য ইউরোপের আটটি দেশ নিয়ে গঠিত), ফ্রান্স, প্রুসিয়া (বর্তমান জার্মানি), রাশিয়া এবং গ্রেট ব্রিটেন। ভৌগোলিক মানচিত্রের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অষ্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের কারণে জার্মানি সুপার পাওয়ার মর্যাদা হারায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সুপার পাওয়ার মর্যাদা লাভ করে। যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে সুপার পাওয়ার মর্যাদা লাভ করেছে সেটার বর্ণনা প্রয়োজন। আইনস্টাইনের জন্ম জার্মানিতে এবং তিনি একজন ইহুদী ছিলেন। চরম ইহুদী বিদ্বেষী হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ (১৯৩৩) নেয়ার আগেই আইনস্টাইন জার্মানি ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং মৃত্যু অবধি সেখানেই ছিলেন। ১৯৪০ সালে আইনস্টাইন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের নিকট লিখিত ডিও পত্রে আইনস্টাইন উল্লেখ করেন, হিটলার আণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা করছে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রকে তার আগেই আণবিক বোমা তৈরি করতে হবে। আইনস্টাইনের তথ্যে রুজভেল্ট ঘাবড়ে যান এবং আণবিক বোমা তৈরির অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও অতি গোপনীয় ম্যানহাটন প্রজেক্ট অনুমোদন করেন। আইনস্টাইনের সরাসরি তদারকি ও সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের পদার্থ বিজ্ঞানী জে রবার্ট ওপেনহাইমার বিশ্বে প্রথম আণবিক বোমা তৈরি করেন। ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শেষ ধাপে নিউ মেক্সিকোর মরুভূমিতে বিশ্বে প্রথম আণবিক বোমার সফল পরীক্ষা করা হয়। বর্তমান বিশ্বে সমুদ্রে কোথাও ডলফিনের মৃত্যু হলে সেটা সেটেলাইটে ধরা পড়ে। সাতাত্তর বছর আগে একদিকে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে বিশ্ব জানতে পারেনি কখন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে। হিটলার যে ঘোরতর ইহুদী বিদ্বেষী ছিল সেটা আইনস্টাইন জানতেন। সঙ্গত কারণেই হিটলারের প্রতি আইনস্টাইনের আক্রোশ ছিল। আইনস্টাইন হয়তো ভেবেছিলেন রুজভেল্ট আণবিক বোমা তৈরি করে সেটা জার্মানিতে নিক্ষেপ করবে এবং হিটলারসহ বার্লিন ধ্বংস হয়ে যাবে। বাস্তবে তা হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ ধাপে জাপান পার্লহারবারে যুক্তরাষ্ট্রের সকল যুদ্ধজাহাজ নিশ্চিহ্ন করে দেয়। প্রতিশোধ নিতে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাশাকি শহরে ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট বিশ্বে প্রথম আণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। যা বিশ্বকে প্রচন্ডভাবে নাড়া দেয়। বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে যায়। সব হিসাব নিকাশ পাল্টে যায়। জাপান আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাশাকি বিভীষিকার মধ্য দিয়ে বিশ্ব আণবিক বোমার ভয়াবহতা সম্পর্কে প্রথম জানতে পারে। আগে বিশ্বের কেউ জানতো না যুক্তরাষ্ট্র আণবিক বোমার অধিকারী। আইনস্টাইন রুজভেল্টকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। আণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা হিটলারের ছিল না। যেমন সাদ্দাম হোসেনের কাছে মানব বিধ্বংসী অস্ত্র ছিল না। মিথ্যা তথ্যে ভয় পেয়ে রুজভেল্ট আণবিক বোমা তৈরির উদ্যোগ নেন। মানব বিধ্বংসী অস্ত্রের মিথ্যা অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরাককে ধ্বংস করেছে এবং সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করেছে। সহৃদয় পাঠক সমাজ আপনারাই বলুন মানব ইতিহাসের সর্বোচ্চ শক্তিশালী মানব বিধ্বংসী অস্ত্র আণবিক বোমা তৈরি ও ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা হওয়া উচিত? আইনস্টাইন ইহুদীদের সংগঠিত করতেন এবং ইহুদীদের বুদ্ধিজীবী হিসেবে খ্যাত ছিলেন। বহু হত্যাকান্ড ঘটিয়ে একজন মাস্তান গড়ফাদার টাইটেল লাভ করে। যুক্তরাষ্ট্র আণবিক বোমা নিক্ষেপ করে লাখ লাখ বেসামরিক জাপানীকে হত্যা করে। তারপর বিশে^ সুপার পাওয়ার মর্যাদা লাভ করে। যত ভারি অস্ত্র প্রয়োগ করে যত বেশি সংখ্যক মানুষকে এক আঘাতে হত্যা করা যাবে সে ততবেশি শক্তিশালী। কি নির্মম নিষ্ঠুর হিসাব-নিকাশ ও মূল্যায়ন। ১৯৫২ সালে ইহুদীরা আইনস্টাইনকে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে চেয়েছিল। শারীরিক কারণে আইনস্টাইন (মৃত্যু ১৮ এপ্রিল ১৯৫৫) রাজি হয়নি। সুপার পাওয়ার মর্যাদা লাভের পর যুক্তরাষ্ট্রের অহঙ্কার আকাশচুম্বী হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে একক কর্তৃত্ব করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোট (পুঁজিবাদী জোট) গঠিত হয় যার সদস্য সংখ্যা ছিল বার এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ওয়ারশ (সমাজতান্ত্রিক জোট) গঠিত হয় যার সদস্য সংখ্যা ছিল আট। কালের পরিক্রমায় ওয়ারশ জোটের বিলুপ্তি ঘটেছে কিন্তু ন্যাটো জোট সম্প্রসারিত হয়েছে। ন্যাটোর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ত্রিশ। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র শক্তি স্বল্পতার আতঙ্কে ভুগছে। যে কারণে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকেও ন্যাটোর সদস্য করার চেষ্টা করছে। দেশীয় পর্যায়ে দশটি রাজনৈতিক দল নিয়ে জোট অথবা পনেরোটি রাজনৈতিক দল নিয়ে আরেকটি জোট গঠিত হয়। জোটের মধ্যে সবচেয়ে বড় দলের সিদ্ধান্তই জোটের সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ব ভ্রমান্ডে ঠিক তাই ঘটছে। ন্যাটো জোটের সিদ্ধান্ত মানেই যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত। ন্যাটো জোটের নিষেধাজ্ঞা মানেই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আণবিক বোমার অধিকারী যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের অন্যসব দেশ সমীহ করে চলত। সেই সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে এবং এখনও বিশ্বে সত্তরটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সামরিক ঘাঁটি জাপানে (১২০টি), দ্বিতীয় জার্মানিতে (১১৯টি) এবং তৃতীয় দক্ষিণ কোরিয়ায় (৭৩টি)। কর্তৃত্ববাদিতার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র এসব সামরিক ঘাঁটি লালন পালন করে। উল্লেখযোগ্য হলো দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকে ব্রিটেনের সরকারপ্রধানগণ যুক্তরাষ্ট্রের ইশারায় চলছে। চলতি সময়ে ইউক্রেন ইস্যুতে বাইডেন এর চাহিদানুযায়ী বরিস জনসন ইউক্রেন, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, জার্মানি ও এ্যাস্তোনিয়া, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ভিজিট করেছে। ব্রিটেনের সরকার প্রধানরা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারপ্রধানদের অলিখিত সহকারী হিসেবে হুকুম তালিম করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের মূল টার্গেট হচ্ছে সমাজতন্ত্র উচ্ছেদ করা। সেই লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে চীনের ছাত্র ও যুব সমাজকে উস্কিয়ে দিয়ে তিয়েন আনমেন স্কয়ারে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটানো হয়। সমাজতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটানোর উদ্দেশ্যেই সেটা করা হয়। চীন সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তারপর সামরিক হস্তক্ষেপে সমাবেশের অবসান ঘটে। সোভিয়েত ইউনিয়ন (সাবেক ইউ এস এস আর) ১৯৯০ সালে পতন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গোপন পরিকল্পনায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে পনেরোটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। আয়তনের দিক থেকে ইউক্রেন তৃতীয় স্থানে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সুপার পাওয়ার হিসেবে রাশিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। ঘুরে দাঁড়াতে রাশিয়ার প্রায় বত্রিশ বছর (১৯৯০-২০২২) পার হয়ে গেছে। এই দীর্ঘ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বাধাহীনভাবে আফগানিস্তান ধ্বংস করে (২০০১), ইরাক ধ্বংস করে (২০০৩)ও লিবিয়া ধ্বংস করে (২০১১)। চীন বরাবরই নিজ কেন্দ্রিক, নিজ স্বার্থ ব্যতীত এক পা এগোয় না। রাশিয়ার প্রায় চতুর্দিকে ন্যাটো ঘিরে ফেলেছে। অস্তিত্বের প্রশ্নে রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরু করেছে। রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব অস্থির হয়ে উঠেছে। একে একে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, যুক্তরাষ্ট্রের স্পীকার নেনসি পেলোসি, যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা সচিব, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জার্মান স্পীকার, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান ইউক্রেন ভিজিট করেন। তারা সবাই নিজ থেকে ইউক্রেনে যাননি। বিশ্ব কর্তৃত্ববাদ হারানোর শঙ্কায় আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের চাপাচাপিতে তারা ইউক্রেনে গিয়েছেন। পুতিনের ইউক্রেন অভিযান যুক্তরাষ্ট্রকে প্রচন্ড নাড়া দিয়েছে। লাগাতার ভিজিট সেটাই প্রমাণ করে। ইউক্রেন অভিযান শুরু হওয়ার পর চীন বেশ কয়েকবার তাইওয়ানের আকাশসীমায় মহড়া দিয়েছে। তাইওয়ান এক সময় চীনের অংশ ছিল। চীন তাইওয়ানে অভিযান শুরু করবে এ খবর প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। চীন তাইওয়ানে অভিযান শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব কি ধরনের আচরণ করে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে অস্ত্র ক্রয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রকে অস্ত্র বিক্রি করে বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার আয় করতে হবে। তাইওয়ান অভিযানের সময় ফিলিস্তিনীরাও ইসরাইল অধিকৃত মাতৃভূমি উদ্ধার অভিযান শুরু করতে পারে। কৌশলগত দিক থেকে সেটি হবে ফিলিস্তিনীদের জন্য মাহেন্দ্রক্ষণ। আলজাজিরার একজন মহিলা সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে ইসরাইলী ইহুদী সৈনিক গুলি করে হত্যা করে, অথচ তার জ্যাকেটের বুকে পিঠে প্রেস লেখা ছিল। বিশ্বের কোথায় কি ঘটছে সে বিষয়ে হোয়াইট হাউস প্রেস ব্রিফিং করে। যুক্তরাষ্ট্র এমন ভাবসাব দেখায় যে তারা গোটা বিশ্বের মালিক। অথচ এ ধরনের ব্রিফিং বাকি চার পরাশক্তি কখনও করে না। দুর্ভাগ্যের বিষয় হোয়াইট হাউস শিরিনকে হত্যার জন্য ইসরাইলকে নিন্দা জানায়নি। শিরিন পঁচিশ বছর যাবত ইসরাইলী বর্বরতার ছবিসহ খবর আলজাজিরায় প্রকাশ করছিল, সেটাই তার অপরাধ? ইসরাইলী সৈনিকদের বর্বরতা ও আস্ফালন যুগ যুগ ধরে চলছে। কখনও কমেনি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইসরাইলী সৈনিকদের জন্য অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের সরবরাহ কখনও কমেনি। শুধু রাশিয়ার অভিযান ঠেকাতে ইউক্রেনকে অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব এখন বেকায়দায়। ইতোমধ্যে তেলের মূল্য ও দ্রব্যমূল্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আহাজারি শুরু হয়েছে। গত ৫ মে ২০২২ অনুষ্ঠিত স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস ক্রয় না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলেছে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর তাদের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। যা বাইডেনের জন্য চরম অপমানকর। ইউরোপের অনেক দেশ শিল্পকারখানা ও মিলকারখানা চালু রাখার জন্য গোপনে রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় করছে। তেল গ্যাসের সঙ্কট তৈরি হলে জনগণ ক্ষিপ্ত হবে এবং জনপ্রিয়তা হ্রাস পাবে সেটা ইউরোপের সরকার প্রধানগণ ভাল করেই জানে। যে কারণে বাইডেনের জেদকে তারা পাত্তা দিচ্ছে না। ন্যাটোতে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্রের কথাই সেখানে সিদ্ধান্ত। যে কারণে ন্যাটোভুক্ত অনেক দেশই বিরক্ত। যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোকে পাস কাটিয়ে একক সিদ্ধান্তে আফগানিস্তান, ইরাক ও লিবিয়ায় অভিযান পরিচালনা করেছে। উক্ত বিষয়টি ফ্র্রান্স অনেকবার উল্লেখ করেছে ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাতটি দেশ নিয়ে সার্ক গঠিত হয়। স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে সার্ক অনেকটাই অকার্যকর সংস্থায় পরিণত হয়েছে। ন্যাটোতে বেশিরভাগ দেশ কট্টর ডানপন্থী ও পুঁজিবাদী এবং কয়েকটি দেশ সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ পরিত্যাগ করে নব্য পুঁজিবাদী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ন্যাটো জোটের আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, সেøাভাকিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, জার্মানি (পূর্ব জার্মানি) এবং রুমানিয়ায় আগে সমাজতন্ত্র ছিল। ন্যাটো জোট নামক শংকর ধাতু কতদিন টিকে থাকবে সেটাই দেখার বিষয়। ইউরোপের প্রায় সবদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কথায় অস্ত্র ক্রয় করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর্যাপ্ত তেল গ্যাস নেই। শুধু অস্ত্র বিক্রি করে যুক্তরাষ্ট্র সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। অস্ত্র বিক্রিতে লাভ অনেক বেশি। ইউরোপের অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের চালাকিতে ক্ষুব্ধ। যে ন্যাটো জোটের ওপর ভর করে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে খবরদারি করছে সেই প্ল্যাটফরমে এখন চিড় ধরেছে। বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের একক কৃর্তত্ববাদ ইতোমধ্যেই সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। ইউক্রেন অভিযান সফল হলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়বে। লেখক : (ব্রিগে.জেনা.অব.), প্রাক্তন পরিচালক, প্রশাসন, বিএসএমএমইউ
×