ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রফতানিতে বাজিমাত

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১৬ মে ২০২২

রফতানিতে বাজিমাত

প্রায় দু’বছর করোনাকালীন চরম দুঃসময় কাটিয়ে উঠে দেশের রফতানি খাত ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে ইতোমধ্যে। এ ক্ষেত্রে যথারীতি প্রধান নিয়ামক ভূমিকা রেখেছে প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে ৪ হাজার ৩৩৪ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ পৌনে ৪ লাখ কোটি টাকা। যা গত বছরের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি। ২০২১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩০৬ কোটি ডলার। একে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন পোশাক শিল্পের মালিকরা। আসছে নতুন অর্ডারও। এবার ৫ হাজার কোটি ডলার বা ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যা পূরণ হবে বলেই প্রত্যাশা। পরিবেশবান্ধব পোশাক শিল্পকারখানা স্থাপনে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়। এর বাইরে কৃষিপণ্য রফতানিতে ২৭ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে প্রায় ১০ শতাংশ রফতানি আয় বেড়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্যেও বেড়েছে রফতানি আয়। আগামী ৩ বছরের জন্য ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যা বর্তমান রফতানির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ বিলিয়ন ডলার বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিবিধ পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছিল ৪ হাজার ৫৩৭ কোটি মার্কিন ডলার। পণ্যের বহুমুখীকরণসহ পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বৃদ্ধিতে জোর দিলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অসম্ভব হবে না। আয় বেড়েছে বিদেশে জনশক্তি রফতানি করেও। করোনা মহামারীর ক্রান্তিকালেও বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের পরিমাণ এবং রফতানি আয় বৃদ্ধির বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বৈকি। তদুপরি বিশ্বব্যাপী করোনার এই দুঃসময়েও বাংলাদেশী শ্রমজীবীরা সৌদি আরব-ইউএইসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় প্রতিদিনই যেতে পারছেন কর্মসংস্থানের জন্য। এসবই স্ফীত করেছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারকে। উল্লেখ্য, প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ২০২১ সালে প্রবাসী আয় এসেছে দুই হাজার ২২০ কোটি ডলার, যা ২০২০-এর চেয়ে ২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রার মজুদ বর্তমানে প্রায় ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী একটি দেশের কাছে অন্তত ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশী মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার হিসেবে ১০ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে করোনার আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের অন্তত অতটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হলেও চলবে। রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ার জন্য পোশাক শিল্পের পাশাপাশি কৃতিত্বের দাবিদার প্রবাসী বাংলাদেশীরাও। প্রবাসী আয়ের এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য বর্তমানে প্রদেয় নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক চিঠিও দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। একই সঙ্গে বেড়েছে রফতানি আয়ও। সেখানেও দেয়া হচ্ছে নগদ প্রণোদনা। রফতানি ও প্রবাসী আয়ের এই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে হবে যে কোন মূল্যে। এর জন্য সরকারসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, সংশ্লিষ্ট পোশাক শিল্পসহ কলকারখানার মালিকদের সবিশেষ দায়িত্ব ও করণীয় রয়েছে।
×