ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাজার ভরে উঠছে রসালো ফলে

বাঙালীর মধুমাস এলো, কাটবে দেহের খরা

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১৫ মে ২০২২

বাঙালীর মধুমাস এলো, কাটবে দেহের খরা

মোরসালিন মিজান ॥ বাঙালীর আলাদা করে একটি মধুমাস আছে। হ্যাঁ, জ্যৈষ্ঠ মাসকেই মধুমাস বলা হয়। আজ ১ জ্যৈষ্ঠ, মধুমাসের প্রথম দিন। এরই মাঝে রাজধানী ঢাকার বাজার ভরে উঠেছে সুমিষ্ট রসালো ফলে। আম লিচু জাম জামরুল কাঁঠাল তাল আনারস তরমুজ- কোনটা চাই? সবই পাওয়া যাচ্ছে। সুদূরের দেশ থেকে আমদানি করা আপেল আঙ্গুর তো অনেক খাওয়া হলো। আসুন এবার নিজ দেশে উৎপাদিত টাটকা ফলের স্বাদ নিই। অবশ্য শুধু যে সুস্বাদু, তা নয়। এসব ফলের আছে বহুবিদ পুষ্টিগুণ। মধুমাসের জন্য তাই মনে মনে অপেক্ষা করে থাকেন ফলপ্রেমীরা। সময়টি, হ্যাঁ, চলে এসেছে! তার আগে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলি, খুব কিন্তু গরম এখন। গ্রীষ্মের খরতাপে গা থেকে প্রচুর লবণপানি বের হয়ে যাচ্ছে। এবং ঠিক তখন আপনি হাতের কাছে পাচ্ছেন নানা জাতের রসালো ফল। একবারে সব ফল বাজারে চলে এসেছে বা আসবে এমন নয়। একটি ফল খাওয়া হয়তো শেষ হবে, অন্যটি আসবে নতুন হয়ে। এভাবে গোটা মাসজুড়েই থাকবে বাহারি ফল। বর্তমানে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে ঢুকছে মধুমাসের ফল। সদ্য গাছ থেকে নামানো ফলের ঘ্রাণও বিশেষ আকৃষ্ট করে। ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাদামতলী। সারাদেশে উৎপাদিত ফল নদী পথে এখানে আসছে। এখান থেকে চলে যাচ্ছে খুচরা বাজারে। একইভাবে কাওরানবাজারে প্রতি রাতে অসংখ্য ট্রাক এসে থামছে। এসব ট্রাকে বহন করে আনা হচ্ছে মধুমাসের ফল। রাতে আসা ট্রাকভর্তি ফল ভোরের আলো ফোটার আগেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। পাইকারি দরে কিনে নিয়ে খুচরো বাজারে বিক্রি করছেন দোকানিরা। মধুমাসের বেশিরভাগ মধু, বলা যায়, লিচুতে থাকে। লিচুর চাহিদা তাই তুঙ্গে। রসালো ফল গত কয়েকদিন ধরে বাজারে আছে। যতদূর তথ্য, এখন পাওয়া যাচ্ছে ঈশ্বরদী ও সোনারগাঁয়ের লিচু। ঈশ্বরদীরটা আকারে ছোট। মাঝারি আকারের লিচু আসছে সোনারগাঁও থেকে। কাওরান বাজারের আমেনা ট্রেডার্স নিয়মিতভাবে লিচু আনছে। বিক্রিও করছে পাইকারি দরে। এবারের লিচু সম্পর্কে জানতে চাইলে বিক্রয়কর্মী মফিজ বলছিলেন, বোম্বাই আর আঁটি লিচুই মূলত বিক্রি হচ্ছে এখন। বোম্বাই লিচু বেশ মিষ্টি। তাই দামও একটু বেশি। পাইকারি বাজারেই এক হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ থেকে ২৬০০ টাকা দরে। আঁটি লিচু আসছে ঈশ্বরদী ও যশোর থেকে। একটু টক। এক হাজার আঁটি লিচু পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকায়। আর সোনারগাঁয়ের এক হাজার ‘কদমী’ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায়। খুচরা বাজারে এক শ’ আঁটি লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। বোম্বাই বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। তবে দিনাজপুর ও রাজশাহীর লিচু লিচুর রাজা। যেমন বড়, তেমনি মিষ্টি ও রসালো। আরও কয়েকদিন এই জাতগুলো পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। অবশ্য লিচু থাকে অল্পদিন। মধুমাসের পুরোটাজুড়ে থাকে আম। খুব উল্লেখযোগ্য এ ফল ইতোমধ্যে চলে এসেছে বাজারে। এখন মূলত পাওয়া যাচ্ছে সাতক্ষীরার আম। পাইকারি বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে ১০০ টাকা। দোকানিরা ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে আমের ভেতরটা দেখানোর চেষ্টা করছেন। ‘স্যাম্পল’ দেখে আকর্ষণীয় মনে হলেও, খেয়ে অতো মিষ্টি মনে হচ্ছে না। ইন্দিরা রোডের এক খুচরো বিক্রেতা স্বীকার করে নিয়েই বললেন, এখন আম একটু টক হবে। তবে ১২ থেকে ১৫ দিন পর ভাল জাতের আম পাওয়া যাবে। কথা সত্য বস্তুত উত্তরের জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর আমের জন্য অপেক্ষা করে আছেন রাজধানীবাসী। রাজশাহী অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ আম উৎপাদিত হয়। এবারও ফলন ভাল বলে জানা গেছে। নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, আগামী ২৫ মে থেকে গুটি বা স্থানীয় আম সংগ্রহের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। গোপালভোগ গাছ থেকে নামনো যাবে ৩০ মের পর থেকে। ক্ষীরসাপাত ও হিমসাগর আগামী ৫ জুন, নাগফজলি ৮ জুন, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙ্গা ১২ জুন, ফজলি ২২ জুন, আম্রপালি ২৫ জুন, আশ্বিনা ও বারি আগামী ৪ জুলাই এবং গৌড়মতি ১০ জুলাই থেকে পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার আম সংগ্রহের কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়া হয়নি। তবে ২০ মের মধ্যে গোপালভোগ, তার ৭ দিন পর ক্ষীরসাপাত, জুনের শুরুতে ফজলি এবং জুনের মাঝামাঝি আম্রপালি পাড়া হতে পারে। রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, ইতিমধ্যে স্থানীয় বৈশাখী জাতের আম পাকতে শুরু করেছে। ২০ বা ২১ মে থেকে গোপালভোগ পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হতে পারে। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাড়া আম চলে আসবে ঢাকায়। জাতীয় ফল কাঁঠালও আছে বাজারে। পরিমাণে অল্প। তবে আছে। টাঙ্গাইল চট্টগ্রাম ফরিদপুর যশোর থেকে এসব কাঁঠাল আসছে বলে জানা যায়। যশোরের কাঁঠালের চাহিদা নাকি বেশি। এক সপ্তাহের মধ্যে এ কাঁঠাল বাজারে আসার কথা রয়েছে। তালও মধুমাসের ফল। কাঁচা তালের শাঁস অনেকে খুব মজা করে খান। ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে তালের শাঁস বের করে খাওয়াচ্ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার ধারে দেখা যাচ্ছে এমন দৃশ্য। সাতক্ষীরা, যশোর, ফরিদপুর বরিশাল থেকে আসা তালের শাঁস গরমে বেশ কার্যকর বলেও জানা যায়। গাজীপুর ও জয়দেবপুর থেকে আসছে জাম। কাওরান বাজারে কথা হচ্ছিল পাইকারি বিক্রেতা দেলওয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, বাজারে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে জাম। জামরুল বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। আর খুচরা বাজারে? যার কাছ থেকে যেমন রাখা যায়! জামরুলও পাওয়া যাচ্ছে কয়েক জাতের। যোগান বেশ ভাল। বিভিন্ন দোকানে সুন্দর সাজিয়ে রাখা হয়েছে। লাল সাদাসহ তিনটি রং। দেখতে বেশ লাগে। চাইলে খেতে পারেন তরমুজও। এখন দাম কমেছে। স্বাদেও মিষ্টি। গ্রীষ্মের গরমে রসালো এই ফলের জুড়ি নেই। খেতে পারেন আনারসও। ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার ধারে ছোট ছোট আনারস কেটে লবণ আর মরিচগুঁড়ো মাখিয়ে পরিবেশন করছেন বিক্রেতারা। এখন যেসব আনারস পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো রাঙ্গামাটি ও শ্রীমঙ্গলের। আকারে একেবারেই ছোট। তবে ভারি মিষ্টি। রসালো। আরও অনেক ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। যার যেটি পছন্দ, কিনে খান। তাজা ফল খেয়ে শরীরের খরা দূর করুন। সার্থক হোক মধুমাস।
×