ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কিডনি বেঁচে ধারের টাকা পরিশোধ

প্রকাশিত: ১৮:১৯, ১৪ মে ২০২২

কিডনি বেঁচে ধারের টাকা পরিশোধ

অনলাইন রিপোর্টার ॥ জয়পুরহাটে কিডনি বিক্রি দালাল চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুর ১টার দিকে পুলিশ লাইনস ড্রিলশেড-এ প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কালাই উপজেলার থল গ্রামের মো. সাহারুল, উলিপুর গ্রামের ফরহাদ হোসেন ওরফে চপল, জয়পুর বহুতী গ্রামের মোশাররফ হোসেন, মো. মোকাররম, ভেরেন্ডি গ্রামের শাহারুল ইসলাম, দুর্গাপুরের সাইদুল ফকির ও পাঁচবিবি উপজেলার গৌড়না আবিসিন এলাকার সাদ্দাম হোসেন। শাহারুল ইসলাম ২০০৯ সালে, মোকাররম ২০০৬ সালে, সাইদুল ফকির ২০১৬ সালে তাদের কিডনি বিক্রি করেছে। এছাড়া ফরহাদ হোসেন, সাদ্দামরা কিডনি বিক্রির জন্য ভারতে গেলেও ভয় পেয়ে কৌশলে পালিয়ে আসে। পরে তারা দালালির কাজ শুরু করে। পুলিশ সুপার বলেন, কিডনি চক্রের দালালরা অসহায় ও গরিবদের অভাব-অনটনের সুযোগ নিয়ে তাদের প্রথমে ১৫-২০ হাজার টাকা ধার বা সুদের ওপর দেয়। কিছুদিন পর পরিকল্পনা মতো টাকা ফেরত চায়। ফেরত দিতে না পারলে কিডনি বিক্রির জন্য বাধ্য করে। এ কাজে অসাধু ডাক্তার সহযোগিতা করতেন। তাদের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেশের ভেতরে বা দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের কিডনি অপসারণ করা হতো। পরে ভুক্তভোগীদের চিকিৎসা শেষে হাতে ১-২ লাখ টাকা ধরিয়ে দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি কালাই থানা এলাকা থেকে কয়েকজন নিখোঁজ হয়। এখন তারা কালাই এলাকার কিডনি চক্রের প্রধান দালাল কাওছার ও সাত্তারের মাধ্যমে দুবাই ও ভারতে অবস্থান করছেন। আমরা জানতে পেরেছি সম্প্রতি কালাই থানা এলাকার পাশাপাশি পাঁচবিবি থানা এলাকায়ও কিডনি বিক্রির জন্য অসহায় গরিব লোকজনকে প্রলুব্ধ করছে দালালরা। এসব তথ্যের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রেস ব্রিফংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফারজানা হোসেন, অতিরিক্ত পুলিস সুপার (সদর) মোসফেকুর রহমান, সিনিয়র এএসপি (পাঁচবিবি সার্কেল) ইসতিয়াক আলম, জেলা ডিবি পুলিশের ওসি শাহেদ আল মামুন এবং ৫ থানার পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ২০১১ থেকে ২০১৪ সালে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের রাঘবপুর, বোড়াই, নওপাড়া, হারুঞ্জা ও বালাইট গ্রাম; মাত্রাই ইউনিয়নের উলিপুর, সাঁতার, ভাউজাপাতার, শিবসমুদ্র, অনিহার, ভেরেন্ডি, কুসুমসাড়া, ছত্রগ্রাম, পাইকশ্বর ও ইন্দাহার গ্রাম; উদয়পুর ইউনিয়নের বহুতি, মোহাইল, বাগইল, দুধাইল, জয়পুর বহুতি, নওয়ানা, দুর্গাপুর, উত্তর তেলিহার, ভুষা, কাশিপুর ও বিনইল গ্রামসহ কয়েক গ্রামের অসহায় ও গরিব মানুষ অভাবে পড়ে অর্থের লোভে কিডনি বিক্রি করেছিল। আজও এসব এলাকার লোকজন গোপনে কিডনি বিক্রি করে যাচ্ছে। সম্প্রতি তা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশ ও র‍্যাব অভিযান চালিয়ে দালালদের গ্রেফতার করছে। এ পর্যন্ত দালাল চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
×