ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

ফাইভ-জি ম্যাজিক বদলে দেবে জীবনযাত্রা

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ১৪ মে ২০২২

ফাইভ-জি ম্যাজিক বদলে দেবে জীবনযাত্রা

তারবিহীন প্রযুক্তির সহায়তায় বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান কোয়ালকম থ্রি-জি (3G) এবং ফোর-জি (4G) প্রযুক্তিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। এখন তারা ফাইভ-জি অর্থাৎ ফিফথ জেনারেশনের তারবিহীন প্রযুক্তি বাজারে নিয়ে এসেছে। তাদের ধারণা, এই ফাইভ-জি ওয়্যারলেস প্রযুক্তি দিয়ে আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হওয়া যে কোন কিছুকে বাস্তবে পরিণত করা সক্ষম। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফাইভ-জি বর্তমান প্রযুক্তি জগতকে এক বিরাট নাড়া দিতে যাচ্ছে। অটোমোবাইল এবং বিদ্যুত শক্তি যে রকম সভ্যতার বিবর্তনকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়েছিল আর এই দুটির কারণে মানুষের জীবন যেভাবে বদলে গিয়েছিল, ফাইভ-জিও সেরকম কিছু করতে সক্ষম। আমরা আমাদের সেলফোনে যে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আসছি, সেটি ক্রমাগত উন্নত হয়ে আজকের আধুনিক পর্যায়ে এসেছে। প্রথমে প্রযুক্তি বাজারে আবির্ভাব হয় টু-জির, যেটা ১৯৯১ সালের দিকে এসেছিল। এরপর ২০০১-এর থ্রি-জি এবং সর্বশেষ ২০০৯-এর ফোর-জি। নেটওয়ার্কের ক্ষমতা এবং তথ্য আদান-প্রদানের দ্রুততা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এই ক্রমাগমনে সর্বশেষ সংযোজন হয়েছে ফাইভ-জি, যা আজকের আলোচনার প্রতিপাদ্য বিষয়। একটি ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের ফোন কোন একটি ফাইভ-জি শহরে এখনকার তুলনায় প্রায় ৯-২০ গুণ দ্রুত কাজ করবে। ফাইভ-জি এর ল্যাটেন্সি (Latency) অর্থাৎ ডাটা আদান-প্রদানের সময় বর্তমানের তুলনায় প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ সময়ে নেমে আসবে। ফাইভ-জিতে যে ডাটা রক্ষণাবেক্ষণ এবং ধারণক্ষমতা বেড়ে যায় সেটা নিঃসন্দেহে অনুমান করা যায়। প্রতিটি মোবাইল ফোন এই নেটওয়ার্কের আওতায় সীমাহীন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। কোয়ালকমের ডিরেক্টর শেরিফ হান্নার দাবি হচ্ছে, মানুষের ফোন যদি ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাহলে ওয়াই-ফাই রেঞ্জের বাইরে থাকলেও তারা ফাইল ডাউনলোড বা আদান-প্রদান করতে পারবে। নেটওয়ার্ক বা স্পিডের কথা আগেই বলা হয়েছে। এছাড়া ফাইভ-জি’র কারণে ফোনের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন সেল ফোনগুলোতে যে ধরনের প্রসেসর ব্যবহার করা হয়, তাতে তাপ ধারণক্ষমতার একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। আবার ব্যাটারির কার্যক্ষমতারও একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। কিন্তু আমাদের ফোন ৫-জিতে যুক্ত থাকলে এ ধরনের সমস্যাই হবে না। বরং কোয়ালকম থেকে বলা হচ্ছে, ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের কারণে এত দ্রুত ফোনগুলো কাজ করবে যে, ব্যবহারকারীর কাছে মনে হবে মোবাইলের ভেতর বাড়তি কোন প্রসেসর হয়ত আছে। শুধু তা-ই না। ফাইভ-জির ফলে পৃথিবীর সবধরনের যন্ত্রকে একত্রিত করা সম্ভব হবে। একটি মেশিনের কার্যকলাপের সঙ্গে আরেকটি মেশিনের কাজের যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গ্যাজেট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারি, এমনকি গাড়িগুলোর মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রকৌশলীদের একটি মাথাব্যথার বিষয় হচ্ছে কীভাবে দুটো গাড়ির মধ্যকার সংঘর্ষ এড়িয়ে যাওয়া যায়। এ রকম ব্যবস্থার জন্য সবার আগে প্রয়োজন গাড়ি দুটোর মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করা, যেটা ফাইভ-জি অনায়াসে করতে পারবে। এর ফলে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি তৈরির যুগের বড় ধরনের প্রাপ্তি ঘটবে বলে বিশ্বাস করছেন বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদরা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ফাইভ-জি এতসব কাজ করতে সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে? কী থাকবে এই ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে? এক কথায় উত্তর হচ্ছে, মিলিমিটার ওয়েভ বা তরঙ্গ। এখন তথ্য প্রেরণের জন্য রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বা রেডিও কম্পাঙ্ক ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু মিলিমিটার তরঙ্গ যখন ব্যবহার করা হবে, সেটা হবে আরও শক্তিশালী। তবে এই তরঙ্গ ব্যবহার করা একটু জটিল, তবে অসম্ভব নয়। এখন যে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেগুলোর কম্পাঙ্ক ২.৪-৫.৮ গিগাহার্জ ব্যান্ডের মধ্যে হয়। অপরদিকে মিলিমিটার ওয়েভে এই ওয়াই-ফাই যখন শুরু হবে, তখন সেটার ব্যান্ড ২৪ গিগাহার্জ বা তার থেকেও বেশি হবে। যে কোন প্রযুক্তির ভাল এবং খারাপ- দুটো দিকই আছে। ফাইভ-জিও এই সত্যের বাইরে নয়। এই নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করার জন্য অনেকগুলো পাওয়ার স্টেশনের প্রয়োজন পড়ছে। হয়তো ফাইভ-জির বদৌলতে রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্টগুলোর আশপাশে আরও বেশি বেশি আয়তাকার বাক্স দেখা যাবে। এই নেটওয়ার্কের জন্য প্রচুর তার লাগবে যা ইউটিলিটি পোলগুলোর একটি আরেকটির সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করবে। তবে মিলিমিটার ওয়েভের বর্ণালী নিয়ে কাজ করা এক বিরাট প্রতিযোগিতা এবং চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। কাজটি কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা দিনের পর দিন এটা নিয়ে কাজ করেই যাচ্ছেন। তবে কোয়ালকম নিজেই স্বীকার করছে, ফাইভ-জি ব্যবহার করাটা হবে কঠিন। ফাইভ-জি’র দামও বেশি। প্রথম প্রথম এই নেটওয়ার্ক সবাই ব্যবহার না-ও করতে পারে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। কিন্তু এই প্রযুক্তি যেহেতু চলে এসেছে তাই সকল ইলেকট্রনিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক নির্ভর ব্যাটারি, চিপ এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ তৈরির দিকে চলে আসছে। জনগণ সবসময় দ্রুত যোগাযোগ করার মাধ্যম খুঁজতে থাকে। ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক আসার ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় কিছু বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক অনেক বেশি দ্রুতগতির। যোগাযোগ হবে অনেক দ্রুত। এমনকি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফাইভ-জি ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করা যাচ্ছে। প্রথমদিকে খরচ বাড়ছে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যার সমধান হবে বলেও বিশ্বাস করছেন বিশেষজ্ঞরা।
×