ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কৃষিতে কানাডার অবদান

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ১৪ মে ২০২২

কৃষিতে কানাডার অবদান

সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ইফপ্রি), বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেশের চরম দারিদ্র্য (২০১৯-২০ সালে ১০ শতাংশ) নিরসনে কৃষি উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে উপস্থাপিত হয়েছে। ইফপ্রির বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে ধান, পাট, কাঁঠাল, আম, পেয়ারা, আলু, সবজি ও মাছ উৎপাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বার্ষিক খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি প্রতিবেদন ২০১৯ অনুযায়ী, স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫০ বছরে দেশের প্রধান প্রধান শস্য উৎপাদন তিন থেকে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের এ ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন। কৃষি খাতের উন্নয়নে বিদেশী সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। যে দেশই বাংলাদেশের দিকে এক্ষেত্রে বন্ধুতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের স্বাগত জানানো হয়েছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে কানাডার সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের কৃষি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কানাডার সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটিতে (জিআইএফএস) বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে। কানাডা ও বাংলাদেশের কৃষি গবেষকদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে ঢাকায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) চত্বরে জিআইএফএসের আঞ্চলিক অফিস চালু হয়েছে। এছাড়া গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট চত্বরে বঙ্গবন্ধু-পিয়ারে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। এসবই কানাডার সঙ্গে আমাদের দীর্ঘকালের মৈত্রীরই সুফল। স্মরণযোগ্য, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগে থেকেই বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কের সূচনা হয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হলে কানাডার তৎকালীন সরকার কর্তৃক পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন সরকারকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কানাডা সরকার মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখে। স্বাধীনতার পর যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বীকৃতি দেয়, কানাডা (১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি) তাদের অন্যতম। সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে কানাডার সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল এবং ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপন করায় কানাডা সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু-পিয়ারে ট্রুুডো কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্রকে আন্তর্জাতিক মানের সেন্টারে উন্নীত করা হবে, যেখানে বিশ্বের অন্য দেশের বিজ্ঞানীরাও গবেষণা করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে কৃষি গবেষণার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও অগ্রসর গবেষণার বিষয়ে দেশে আরও কাজ হবে। ফলে আগামী দিনগুলোয় দেশ কৃষিক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি করবে, এমনটিই প্রত্যাশা।
×