ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ১৩ মে ২০২২

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ সপ্তাহজুড়েই বৃষ্টি। ঈদের দিন শুরুটা হয়েছিল। তার পর থেকে এক রকম অব্যাহত আছে, বলা যায়। গত মঙ্গল, বুধ ও সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে। স্বস্তির বৃষ্টি গরম কিছুটা কমিয়েছে। অন্তত গ্রীষ্মে যে অসহনীয় গরম, সেটি এখন অনুভূত হচ্ছে না। ঢাকার রাস্তার ধারে বা লেকপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষগুলোকে আরও সবুজ মনে হচ্ছে। বৃষ্টির জলে ধুয়ে গাঢ় সবুজ হচ্ছে পাতা। দেখতে কী যে ভাল লাগে! বাইরে স্নিগ্ধতা বাসার ভেতরে থাকা মানুষজনের মনকেও বেশ প্রভাবিত করছে। নরম করছে। অনেক বাসা বাড়িতে আবার ভুনা খিচুড়ি রান্না হচ্ছে এ উপলক্ষে। সঙ্গীতপ্রেমীদের বাসায় বাজছে প্রিয় গান। রবীন্দ্রসঙ্গীত কানে আসছে। এদিক থেকে দেখলে একটা রোমান্টিক পরিবেশ বৃষ্টির বদলৌতে পাওয়া গেছে। তাই বলে দুর্ভোগও কিছু কম হচ্ছে না। বিশেষ করে বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে ঢাকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। কাদাজল জমে কোন কোন রাস্তা প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। দিনভর তাই ভুগতে হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঈদের পর ভোগান্তির সবে শুরু! মানুষ ফেরায় ফিরছে সমস্যাগুলোও ॥ ঈদ শেষে স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরেছে মানুষ। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা এখন কর্মচঞ্চল। রাস্তায় নামলে কত রকমের ছোটাছুটি যে চোখে পড়ছে! সরকারী-বেসরকারী স্বায়ত্তশাসিত অফিস খোলা। খুলেছে স্কুল কলেজ বিশ^বিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দোকানপাট কোন কিছুই আর বন্ধ নেই। সব দেখে বোঝা যায়, ঈদের রেশ কেটে গেছে। আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে উৎসব উদ্যাপন শেষে আবারও কর্মস্থলে ফিরেছেন লাখ লাখ মানুষ। প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে প্রবেশ করেছেন তারা। এটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। মানুষ যত ফিরছে ততই দেখা দিচ্ছে পুরনো সমস্যাগুলো। ইতোমধ্যে যানজটের দেখা মিলেছে। অকারণে বেজে চলেছে হর্ন। শহরের এতদিনের নিরিবিলি পরিবেশটাকে নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হচ্ছে। গাড়ি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শব্দদূষণের মাত্রা। একইভাবে নষ্ট হচ্ছে শহরের পরিবেশ-প্রতিবেশ। ঈদের ছুটিতে বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছিল ঢাকা। সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা রাস্তাঘাট ঝাড়ু দিয়েছেন বটে। সে তুলনায় নোংরা হয়েছে কম। এখানে-ওখানে ময়লা ফেলার লোক কিছুটা কমে গিয়েছিল। মোটামুটি হাঁটা যেত ফুটপাথ দিয়ে। কিন্তু এখন আবারও সেখানে দোকান বসে গেছে। সরু ফুটপাথে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুকছে শিক্ষিতরাও। কলা খেয়ে খোসাটা সেখানেই ফেলে যাচ্ছে। দোকানিরা ময়লা পানি, ব্যবহৃত চাপাতা ফেলছেন রাস্তার ধারে। সেখানে মাছি ভন ভন করছে। যেখানে খুশি থুথু বা কফ ফেলার লোক, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে প্র¯্রাব করার লোকজন চলে এসেছে। গায়ে গা লেগে যাচ্ছে। গাড়ির সঙ্গে অন্য গাড়ির ঠোকাঠুকি, সে নিয়ে রাস্তা আটকে মারামারিÑ সবই বাইস্কোপ দেখার মতো দেখা যাচ্ছে। ঈদের ছুটিতে ঢাকার বায়ুমানেরও প্রভূত উন্নতি হয়েছিল। আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা জানিয়েছিল, বাতাসে ক্ষতিকারক উপাদান যা সাধারণ সময়ে থাকে, তার চেয়ে অনেক কম ছিল ঈদের ছুটিতে। বর্তমানে, যেমনটি বলছিলাম, সবই খোলা। কলকারখানা চালু রয়েছে। চলছে নির্মাণ কাজ। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। আরও কত সমস্যা সঙ্কট সামনে আসছে প্রতিদিন! যে বসবাসযোগ্য ঢাকা আমরা চাই, সেটি ঈদের ছুটিতে কিছুটা হলেও ছিল। এখন স্বপ্নভঙ্গের পালা। ক্রমে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের হয়ে উঠবে এক একটি দিন। এ শহর পরিত্যক্ত, এখানে মানুষ থাকে? ইত্যাদি অভিযোগ অনুযোগ করে ফের আমরাই ঢাকায় থাকব। থাকতে হবে আসলে। রবীন্দ্র উৎসবে কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধা ॥ করোনা হানা দেয়ায় গত দুই বছর জাতীয়ভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তী উদ্যাপন করা সম্ভব হয়নি। ফলে এবার ঈদ উদ্যাপনের রেশ কাটতে না কাটতেই সরব হয়েছিলেন রবীন্দ্রপ্রেমীরা। ২৫ বৈশাখ বেশ ঘটা করেই হলো উৎসব অনুষ্ঠান। জাতীয়ভাবে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছিল। রাজধানীতে প্রধান আয়োজন ছিল ছায়ানটে। বাঙালীর গর্বের এ প্রতিষ্ঠান রবীন্দ্রনাথকে আঁকড়ে ধরে আছে সবসময়। একই চেতনা ও উপলব্ধির জায়গা থেকে তারা আয়োজন করে দুই দিনব্যাপী রবীন্দ্র উৎসব। ধানম-ির ছায়ানট ভবনে প্রতিষ্ঠানের শিল্পীরা গান করেন। ছিল নৃত্যায়োজন। অনবদ্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করেন তারা। কবিগুরুর সৃষ্টির আলোয় নিজেদের উদ্ভাসিত করার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি, জানিয়ে রাখি, শিল্পকলা একাডেমিতে এখন চলছে নতুন একটি প্রদর্শনী। সমকালীন কয়েক শিল্পী রবীন্দ্রনাথকে এঁকেছেন। তাদের আঁকা ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে গ্যালারিতে। সময়-সুযোগ করে দেখে আসুন। ভাল লাগবে।
×