ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বাসভঙ্গের দায় নিতে হবে

প্রকাশিত: ২০:৫২, ১৩ মে ২০২২

বিশ্বাসভঙ্গের দায় নিতে হবে

ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা কথা রাখেননি। বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে তারা অঙ্গীকার করেছিলেন যে, পবিত্র রমজানে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াবেন না। বরং রমজান ও ঈদের পরে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে ভোজ্যতেলের দাম। তদনুযায়ী সরকার ৫ মে বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম একবারে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করে দেয় ১৯৮ টাকা। তবে তার আগেই অর্থাৎ, ঈদ-উল-ফিতরের আগেই বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় প্রায় সবরকম ভোজ্যতেল। কোথাও বোতলজাত তেল ছিল না বললেই চলে। কোন কোন বাজারে খোলা সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রি হলেও তা হয়েছে চড়া মূল্যে। সাধারণ ভোক্তাদের সাধ্যের বাইরে। সত্যি বলতে কি ভোজ্যতেলের বাজার এখনও অস্থির। মওকা বুঝে বাজারে থাকা সবরকম ভোজ্যতেল অবৈধভাবে গুদামজাত করে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে, স্বভাবতই বিপাকে পড়েন সর্বস্তরের মানুষ। অতঃপর নড়েচড়ে বসে সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন যে, তারা বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। এর প্রমাণও মেলে হাতেনাতে। গত কয়েকদিনে রাজধানীসহ কয়েক জেলায় অভিযান চালিয়ে প্রায় কয়েক লাখ লিটার ভোজ্যতেল আটক করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ভোক্তা অধিকার, পুলিশ ও প্রশাসনের এই অভিযান চলছে সীমিত পরিসরে। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, প্রায় সব তেল সরিয়ে ফেলেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। আগের দামে কেনা তেল বিক্রি করছেন বেশি দামে। এরকম সিন্ডিকেটের কারসাজি চলছে দেশজুড়ে, যা প্রকারান্তরে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস ভঙ্গের শামিল। এমতাবস্থায় ব্যবসায়ীদের শুধু জরিমানা নয়, মামলা দায়ের করে জেল দ-সহ কঠোর শাস্তি দেয়া আবশ্যক বলে মনে করেন ভোক্তারা। শুধু ভোজ্যতেল নয়, ক্রেতাদের জিম্মি করে কোন নিত্যপণ্যের ব্যবসা করতে দেয়াই বাঞ্ছনীয় নয়। এফবিসিসিআইয়ের নেতৃবৃন্দ যাই বলুন না কেন অসাধু ব্যবসায়ীদের অনিয়ম-দুর্নীতির দায় তাদের নিতে হবে। সরকার নির্ধারিত দামে বাজারে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না ভোজ্যতেল। তেলের আমদানি উৎপাদন, সরবরাহ কমিয়ে এবং অবৈধ মজুদের মাধ্যমে সৃষ্টি করা হচ্ছে কৃত্রিম সঙ্কট। যাতে ঈদ-উল-আজহার আগে আরও এক দফা দাম বাড়ানো যায় ভোজ্যতেলের। তিন স্তরে ৩০ শতাংশ ভ্যাট ও কর কমানো হলেও পুরোটাই যাচ্ছে মালিকদের পকেটে। এর আদৌ কোন সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। ফলে পাঁচ-ছয়টি প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া ব্যবসা করার অবাধ সুযোগ পায়। যেটি অবিলম্বে ভেঙ্গে দেয়া আবশ্যক। কমাতে হবে আমদানি নির্ভরতাও। দেশে খরিফ মৌসুমে, বিশেষ করে পাহাড়ী অঞ্চল ও চরাঞ্চলে বিপুল পরিমাণে সয়াবিন, বাদাম, সরিষা ও পাম গাছ উৎপাদন এবং রোপণের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের কৃষি বিভাগের এ ক্ষেত্রে নজর দেয়া বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনে দেয়া যেতে পারে সহজশর্তে কৃষি ঋণ।
×