ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৮ বছরে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেলেন ৮৫ জন

ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের মিলনমেলার একদিন...

প্রকাশিত: ২১:২২, ১২ মে ২০২২

ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের মিলনমেলার একদিন...

রুমেল খান ॥ বৈশাখের বুধবারের মেঘলা সকাল। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন সরগরম হয়ে উঠল। দেশের পুরো ক্রীড়াঙ্গন যেন এদিন পসরা সাজিয়ে বসেছিল। ক্রীড়াঙ্গনে ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের মিলনমেলা যেন। প্রায় সব ধরনের খেলার সাবেক ও বর্তমান ক্রীড়াবিদ, কোচ, সংগঠক... কে না ছিলেন এই মধুর মিলনমেলায়। বহু বছর পর দেখা-সাক্ষাত। তাই আবেগে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরা, আবেগে আপ্লত হওয়া, হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠা, মোবাইলে সেলফি তোলার ধুম... ক্রীড়াঙ্গনে এমন দৃশ্য দেখা গেল অনেকদিন পর। উপলক্ষটা ছিল বড়Ñ মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। আয়োজক ছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ২০১৩-২০২০ সাল পর্যন্ত ৮৫ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব পেয়েছেন ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ এই সম্মানজনক পুরস্কারটি। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে গণভবন থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর পক্ষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেকে পেয়েছেন একটি ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণপদক, এক লাখ টাকার চেক এবং একটি সম্মাননাপত্র। অনুষ্ঠানে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মঞ্চে ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি এবং যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন। এই অনুষ্ঠানে দীর্ঘ আট বছরের জমে থাকা জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার একসঙ্গে প্রদান করা হয়। এমনটা যেন আর না হয়, সেজন্য প্রতি বছরের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রতি বছরেই দিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে খেলাধুলার উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র শহীদ লে. শেখ জামালকে ২০২০ সালের খেলোয়াড় ও সংগঠক হিসেবে (মরণোত্তর) পুরস্কার দেয়া হয়। তাঁর পক্ষে পরিবারের সদস্য এবং খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল পুরস্কার গ্রহণ করেন। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য ২০১৩-২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৩৪০ ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক আবেদনপত্র জমা দেন। জাতীয় বাছাই কমিটি সেখান থেকে চূড়ান্তভাবে বেছে নেয় ৮৫ জনকে। অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে ক্রীড়াক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করে যাচ্ছে। কানাডা থেকে পুরস্কার নিতে এসেছিলেন বাংলাদেশের তারকা গোলরক্ষক মোঃ মহসিন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসেন ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু সাফ গেমসে স্বর্ণজয়ী ফুটবল দলের অধিনায়ক জুয়েল রানা। প্রয়াত হকি তারকা খাজা রহমতউল্লাহর স্ত্রী নাদিরা রহমতউল্লাহ স্বামীর পুরস্কার গ্রহণ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। আগের দিন এ্যাথলেট যুঁথির ভগ্নিপতি মারা যান। মোজাফফর হোসেন পল্টু ও এনায়েত হোসেন সিরাজ এই দুই ভাই একইদিন এই পুরস্কার লাভ করেন। যা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিরল ঘটনা। পল্টু ২০১৩ সালে ও সিরাজ ২০১৪ সালের জন্য পুরস্কার পান। ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্তদের অনুূভূতি জুয়েল রানা ॥ ‘অনেকদিন মাঠে খেলেছি। আজ একটা স্বীকৃতি পেলাম। এর চেয়ে বড় আনন্দের কিছু নেই।’ কাজী আনোয়ার ॥ ‘সরকার আমাদের সম্মান করেছে এজন্য কৃতজ্ঞ। তবে এটা আরো আগে হলে আরও সুন্দর হতো।’ খন্দকার রকিবুল ইসলাম ॥ ‘১৯৭৩ সালে প্রথম আসি ঢাকায়। তখন আমি বাচ্চা ছেলে। ৪৯ বছর ধরে আছি ফুটবলের সঙ্গে। আজ বড় একটা স্বীকৃতি পেলাম। কতটা ভাল লাগছে বলে বোঝাতে পারব না।’ সুলতানা পারভীন লাভলী ॥ ‘আরও আগে পাওয়া উচিত ছিল এই পুরস্কার। কেন দেরিতে পেলাম, তা বলতে পারব না। এর আগে যারা পুরস্কার পেয়েছে তাদের থেকে আমার পদক বেশি আছে। তবে দেরিতে হলেও পুরস্কার পেয়েছি।’ রফিক উল্ল্যাহ আখতার মিলন ॥ ‘তৃণমূল থেকে অনেক খেলোয়াড় তুলে এনেছি। তারা জাতীয় পর্যায়ে পদক জিতেছে। চাকরি পেয়েছে। নিজেদের পরিবারের হাল ধরেছে। ভাবতে ভাল লাগছে যে পরিশ্রমের সেই মূল্য পেলাম। আমার আর কিছুই পাওয়ার নেই।’ তৈয়ব হাসান ॥ ‘রেফারিং-আম্পায়ার থ্যাঙ্কলেস জব কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আমাদের মূল্যায়ন করায় ধন্যবাদ। রেফারিং জীবনে অনেক প্রাপ্তির মধ্যে আজ বড় একটা প্রাপ্তি হলো। তবে এই ১ লাখ টাকা নেব না, টাকাটা আর্তমানবতার সেবায় দান করব।’ শাহরিয়া সুলতানা ॥ ‘আসলে গতকাল রাতে ঘুমাতেই পারিনি। কখন সকাল হবে, কখন পুরস্কার পাব।’ তানভীর মাজহার তান্না ॥ ‘এতদিন পর কাজের স্বীকৃতি পেলাম, মন্ত্রণালয় পুরস্কার দিয়েছে। এতেই অনেক ভাল লাগছে।’ আওলাদ হোসেন ॥ ‘এই পুরস্কার পেয়ে ভীষণ খুশি। এটা আমার জীবনে বড় এক প্রাপ্তি।’ মরহুম সংগঠক আফজালুর রহমান সিনহার পক্ষে তার সতীর্থ জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা ॥ ‘জীবিত থাকতেই এই পুরস্কার প্রদান করা উচিত। তাহলে সবাই সবার জীবদ্দশায় একটি প্রশান্তি পায়।’ নাজমুল আবেদীন ফাহিম ॥ ‘কাজের স্বীকৃতি পেলে আরও ভাল কিছু করার তাগিদ বাড়ে’। জালাল ইউনুস ॥ ‘বাংলাদেশে সকল ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের স্বপ্ন থাকে একদিন ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়ার। সর্বোচ্চ এই পুরস্কার পাওয়ায় ভাল লাগছে। ক্রীড়াঙ্গন এবং বিশেষত ক্রিকেটের প্রতি দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।’ কাজী নাবিল আহমেদ ॥ ‘বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আবাহনীর অবদান অনেক। এই ক্লাবের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরিবার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আবাহনী ক্লাবের উত্তরোত্তর সাফল্যের জন্য আরও বেশি নিবেদিত হব।’
×