ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

কলাবাগান মাঠ এবং উপকূলে স্মার্ট সিটি

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ১২ মে ২০২২

কলাবাগান মাঠ এবং উপকূলে স্মার্ট সিটি

নিশ্চিত ছিলাম ঢাকাকে বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘ড্যাপ’ প্রণীত হয়েছিল। যাতে কলাবাগানের মাঝারি আকারের মাঠটি অবশ্যই খেলার মাঠ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। আরও একটি বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম- যদি প্রধানন্ত্রীর কাছে শিশু-কিশোরদের জন্য প্রায় ৬০/৭০ বছর যাবত পড়ে থাকা কলাবাগানের মাঠটির স্থানে পুলিশের থানা স্থাপনের কাজ শুরু হবার পর কলাবাগানের বাসিন্দা এবং সুশীল সমাজসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদী কর্মসূচীর কথা পৌঁছায়, তাহলে তিনি এ স্থানটিকে খেলার মাঠ হিসেবে রাখার নির্দেশ দেবেন নিশ্চিত। এ কথাটি সৈয়দা রতœাও বলেছেন। ডাঃ জাফরুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন- প্রধানমন্ত্রী দূর থেকে যা দেখতে পান, তাঁর নেতারা মাঠে থেকেও তা দেখতে পান না! ঠিক এ কথাটাই বহুবার ভিন্নভাবে বলেছি- সব সিদ্ধান্ত একজন ব্যক্তিকেই বারবার নিতে হয় কেন? এর জন্যই কিন্তু কিছু বিদেশী আমাদের শাসন প্রণালীকে ‘একনায়কতন্ত্র’ বা ‘একজনের শাসন’ বলে শত শত সফলতা সত্ত্বেও কিছুটা সমালোচনা করে থাকে বা সমালোচনা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। দুঃখ, এই সামান্য কলাবাগান মাঠটি শিশু-কিশোর এবং এলাকাবাসীর জন্য ছেড়ে দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একা সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না! একটা কথা না বলে পারছি না- দেশের পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের এই দখলদারীর মনোভাব ইতোমধ্যে বিদেশের কাছে তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেয়নি কি? নিরাপত্তা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা এই বিষয়টি নিয়ে ভাববেন সেটি আশা করি। উপরন্তু নির্মিত দেয়ালটি ভেঙ্গে ফেলে সীমানার স্থানটিতে সুন্দর বড় বড় দেশী ফল-ফুল-কৃষ্ণচূড়া, আম, কাঁঠাল, জারুল, আকাশমনি ইত্যাদি গাছের চারা লাগিয়ে তাদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন। এটি হবে, শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, পুলিশের পক্ষ থেকেও কলাবাগান ও ঢাকাবাসীর জন্য সুন্দর একটি শুভেচ্ছা উপহার। এ প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য- সবাইকে সংশোধিত ‘ড্যাপ’-এর নির্দেশনা মানতে হবে, যেখানে স্থানটিকে খেলার মাঠ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা আর যাই হোক- একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা যেটি বহু গুণীজনের মেধার সমাহারে তৈরি, সেটি মানব। সুতরাং, সবাইকে বলব- সরকার, পুলিশ বা মন্ত্রী, মেয়র বা রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সবাইকে ‘ড্যাপ’কে মান্য করতে হবে সবরকম কাজে। একটি সুন্দর বসবাসযোগ্য রাজধানী গড়ার জন্য। এবার আসা যাক, চট্টগ্রামের উপকূলে প্রস্তাবিত স্মার্ট নগরের বিষয়ে। এর আগে অবশ্য চট্টগ্রামের ‘সিআরবি যেমন আছে তেমন থাকবে’- এমন নির্দেশনার জন্য অপেক্ষমাণ চট্টগ্রামবাসী, পরিবেশবাদী, সুশীল সমাজ। তার চূড়ান্ত নির্দেশনা নাকি এখনও পায়নি! খুব আশ্চর্য হলাম। কারণ, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ বিষয়ে খুবই সংবেদনশীল এবং মানুষের দুঃখকষ্টে মানবিক। সম্প্রতি দিল্লীসহ ভারতের অনেক শহরের তাপমাত্রা ৪৩.৫-এর ওপরে উঠেছে! বাংলাদেশের উত্তরের জেলাগুলোর তাপমাত্রা ৪১-এর ওপরে উঠেছে। আরও উঠবে বলে মনে হচ্ছে। কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটায় নদীর পানিতে বাহিত হয়ে উপচে উঠছে বিষাক্ত, দুর্গন্ধযুক্ত ফেনা- যা রাস্তা, ঘর-বাড়িসহ শহরের বসতিকে ভাসিয়ে দিয়েছে। মেক্সিকো, হন্ডুরাস, পেরুতে ভারিবর্ষণে পাহাড় ধসে বসতি-গ্রাম-শহর ধ্বংস হয়েছে। এ কথা তো কারও অজানা নেই যে, এসব দুর্যোগ-দুর্বিপাক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। কারণ, ইতোমধ্যে বিশ্বের বাতাসে কার্বনের পরিমাণ মোটেও আশানুরূপভাবে কমেনি। সেজন্য উত্তরের পাহাড়ের বরফ গলছে আশঙ্কাজনক হারে। সন্দেহ নেই, কিছুদিন পর হিমালয়ের হিমবাহের গলন প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে। ফলে, আমাদের নদীগুলোতে পানির উচ্চতা অনেক বৃদ্ধি পেয়ে হাওড় শুধু নয়, গ্রাম-গঞ্জ, শহর ভাসিয়ে নিতে পারে। ভারতের বিভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প যে আত্মবিধ্বংসী পদক্ষেপ হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ লাখ লাখ মানুষকে উদ্বাস্তু করেছে। যাদের খাদ্য, আশ্রয় জোগাতে বিশ^কে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যুদ্ধের ফলে একদা অতি সুন্দর ইউক্রেন আজ পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। যুদ্ধের কারণেও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশের সমুদ্রের উচ্চতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সঙ্গে ঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো, ভারি বৃষ্টি, অতি বৃষ্টি যোগ হচ্ছে। আপাতত চাল ভর্তুকি দিয়ে, ভোজ্যতেল ভর্তুকি দিয়ে দরিদ্র মধ্যবিত্তকে সরকার সাহায্য করছে। এদিকে রোহিঙ্গা রিফিউজি আছে প্রায় ১১ লাখ। পৃথিবীর মধ্যাঞ্চলের পাহাড়ী দেশগুলো ব্যতীত মনে হয় না উপকূলে কোন স্থাপনা বর্তমানের এই জলবায়ু উষ্ণায়নের চলমান অবস্থায় শেষ পর্যন্ত রক্ষা পাবে। আমাদের পরামর্শ হবে, অন্তত আগামী দশ বছর জলবায়ুর উষ্ণায়নের গতি-প্রকৃতি এবং এর পরিণতি দেখার জন্য অপেক্ষা করা হবে উত্তম। এরপর সিদ্ধান্ত নিলে ভাল হবে। নতুবা বিপুল অর্থ সমুদ্রের জলে তলিয়ে যেতে পারে। লেখক : শিক্ষাবিদ
×