ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ড. আলা উদ্দিন

রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১২ মে ২০২২

রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা

ইতোমধ্যে পার্বত্য চুক্তির দুই যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে। চুক্তির সীমাবদ্ধতা, গ্রহণযোগ্যতা ও বাস্তবায়নজনিত সমস্যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের জন্য অঞ্চলটি এখনও আশানুরূপ নিরাপদ হয়ে ওঠেনি। অদ্যাবধি শান্তির অবস্থান পাহাড় থেকে অনেক দূরে। এই প্রেক্ষাপটে, চুক্তির সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে নতুন নতুন কর্মসূচী গ্রহণ, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধা এবং পাহাড়ী-বাঙালী সকল জনগোষ্ঠীর জন্য শান্তির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে বহুমুখী কর্মসূচী (শিক্ষা, উন্নয়ন, সচেতনতা, সহনশীলতা, মানবিকতা ইত্যাদি) গ্রহণের মাধ্যমে শান্তির পথ প্রশস্ত করতে হবে। অপরাপর সংঘাত-পরবর্তী অঞ্চলের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামে সমাজ, জীবন ও জীবিকাঘনিষ্ঠ বিশেষায়িত শিক্ষা বা ‘শান্তি-শিক্ষা’ (পিস এডুকেশন) কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া (২০১৫ থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু) রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। নিজের, অন্যদের এবং আশপাশের পরিবেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও সম্প্রীতিময় বসবাসের লক্ষ্যে মূল্যবোধ, জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি, দক্ষতা ও আচরণ অর্জনের একটি প্রক্রিয়া ‘শান্তি-শিক্ষা’। এখানে শান্তি-শিক্ষা বলতে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের মধ্যে বিরোধ দূর করে শান্তি স্থাপনের পথ প্রশস্তকরণকে বুঝানো হচ্ছে। এজন্য অবশ্য গোটা শিক্ষাব্যবস্থায় বিশেষ মনোযোগ এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পদক্ষেপ বাঞ্ছনীয়। বিশেষায়িত শিক্ষা বিচ্ছিন্ন কোন শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে সমাজে আবির্ভূত হতে পারে না কিংবা কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালন করতে পারে না, যদি না মৌলিক শিক্ষা তথা শিক্ষার ভিত্তি বা সুযোগ-সুবিধা এবং সংশ্লিষ্ট সমাজে শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ বিদ্যমান থাকে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তথা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্রে বিশেষায়িত শিক্ষাকে ইতিবাচকভাবে প্রয়োগ করার পূর্বে অপরিহার্যভাবে শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান সীমাবদ্ধতাসমূহ চিহ্নিত করতে হবে এবং সেগুলোর সমাধান করতে হবে। যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। দূর করতে হবে সকল জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষকের অপ্রতুলতা। দূর করতে হবে মাতৃভাষায় শিক্ষার সীমাবদ্ধতা। পার্বত্য চট্টগ্রামের অবাঙালী নৃগোষ্ঠীসমূহ যদি নিজ ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করতে না পারে, তাহলে শিক্ষার মূল লক্ষ্য, তথা নিজেকে আলোকিত করা, সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বাধাগ্রস্ত হবে। সুতরাং শিক্ষার মূল ভিত্তি-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, শিক্ষার পরিবেশ, নিরাপত্তা, এবং মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে এবং পরবর্তীতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ধারাবাহিক প্রতিফলন ঘটাতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি বিশেষায়িত অঞ্চল। সে কারণে সেখানে প্রাথমিক স্তর থেকেই জাতিসমূহের মধ্যকার পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও বেশি শ্রদ্ধাপূর্ণ ও ভালবাসাময় রাখার স্বার্থে শিক্ষা পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যক্রমের বাইরের সহ-পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যক্রম বহির্ভূত বিবিধ কর্মকা- অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক, যাতে ছোটবেলা থেকে পাহাড়ী-বাঙালী শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের ও অন্যের সমাজ-সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়। এতে তাদের মনোভাব সহনশীল, ইতিবাচক ও শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবে। তারা যেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈচিত্র্যতা (জনসংখ্যা, সংস্কৃতি, বন, পাহাড়, প্রতিবেশ) নিয়ে গর্ব করে এবং তা সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট থাকে। এর সূত্রপাত ঘটাতে হবে প্রাথমিক পর্যায় থেকে, মাধ্যমিক স্তরে যার প্রতিফলন পরিদৃষ্ট হবে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সময়টাও তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ সময় তাদের মূল্যবোধ পাকাপোক্ত হয়। আবার তাদের সংঘাতময় পরিস্থিতির ক্ষেত্রে সহজেই প্ররোচিত করা যায় কিংবা তারা নিজেরাই সেদিকে ধাবিত হতে পারে। এই বাস্তবতা অনুধাবন করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম, শিক্ষার পরিবেশ, সকল ক্ষেত্রে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও অনুকূল পরিস্থিতি বজায় রাখার স্বার্থে বিশেষভাবে মনোযোগী থাকতে হবে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি) অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়ে যদিও জনসংহতি সমিতি এবং অধিবাসীদের মধ্যকার একটি অংশের বিরোধিতা ছিল, বর্তমানে তা অনেকটা প্রশমিত হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে পাহাড়ী-বাঙালীর পড়াশোনার একটি সুযোগ অবারিত হয়েছে। এমতাবস্থায় এই প্রতিষ্ঠানটিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তির পথ প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে কাজে লাগাতে হবে। রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিশেষায়িত বিভাগ খুলতে হবে। বিভাগগুলোর শিক্ষাক্রম ও শান্তি প্রক্রিয়াকে বিবেচনায় রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতায় সাজাতে হবে; যাতে পাহাড়ী-বাঙালীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে তা সহায়ক হয় এবং বহুল কাক্সিক্ষত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত হয়। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত অধিবাসীদের জীবন ও জীবিকা ঘনিষ্ঠ পাঠ্যক্রম ও অন্যান্য কর্মকা-কে শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন, রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কিছু জীবনঘনিষ্ঠ বা জীবিকানির্ভর কার্যক্রম, ডিপ্লোমা, বা প্রশিক্ষণমূলক শিক্ষা পরিচালনা করা যায়, তাহলে ইতিবাচক ফলাফল অর্জিত হবে। যার ফলে একদিকে হস্তশিল্প, পোশাকশিল্প, তাঁতশিল্প, চাষাবাদ ইত্যাদি সম্পর্কে হাতে-কলমে জ্ঞান অর্জন করা যাবে; অন্যদিকে সেগুলো থেকে উৎপাদনসমূহের বিতরণ, বিক্রয়, ও বাণিজ্যিকীকরণ করা যাবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে সার্বিক কর্ম পরিচালনা ও যোগাযোগ করা সম্ভব হলে শিক্ষা, জীবন ও জীবিকা একসঙ্গে চলবে এবং এগুলোর সমন্বয়ে পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতকল্পে আরও বেশি বেগবান, গতিশীল ও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। জীবন ও জীবিকাঘনিষ্ঠ পাঠদান ও কর্মকা- পার্শ্ববর্তী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়েও (যেমন, শান্তি নিকেতন) বিদ্যমান। বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ বিভাগ খুললে চলবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে সেখানে বিশেষ বিশেষ বিভাগ খুলতে হবে এবং সেজন্য পৃথিবীর বিভিন্ন বিশেষায়িত অঞ্চল ও সংঘাত-পরবর্তী অঞ্চলের শিক্ষাকার্যক্রম স্টাডি করতে হবে, গবেষণা করতে হবে। তারপরে সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগ খুলতে হবে এবং সে অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির ক্ষেত্রেও শান্তি শিক্ষার লক্ষ্য ও তাৎপর্যের প্রতিফলন থাকতে হবে, যাতে করে সকল জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীর পড়াশোনার সুযোগ অবারিত থাকে। রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে তিনটি অনুষদ রয়েছে- ইঞ্জিনিয়ারিং, বাণিজ্য ও জীববিজ্ঞান। এই অনুষদসমূহের অধীনে কম্পিউটার বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ট্যুরিজম এবং বন ও পরিবেশবিদ্যা পড়ানো হয়। অবস্থাগত কারণে রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পাঠ্যক্রম কার্যকর নয়। শুধু কর্মসংস্থানের চিন্তা করলে হবে না, রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম যেন সামগ্রিকভাবে উপকৃত হয় তা মাথায় রেখে কর্মকা- ও পাঠদান পরিচালনা করতে হবে। কোন বিভাগ খোলার আগে এর প্রয়োজনীয়তা, প্রাসঙ্গিকতা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষিতে উপযোগিতা নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ট্যুরিজম নিয়ে বিভাগ থাকতে পারে, তবে তা যেন কেবল ব্যবসাকেন্দ্রিক না হয়। ট্যুরিজমের মাধ্যমে কিভাবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্য বজায় রাখা যায়, কিভাবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখা যায় বা বৃদ্ধি করা যায়, তদনুযায়ী চিন্তাভাবনার প্রয়োগ ঘটাতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অন্যতম পাহাড়ী বনাঞ্চল। সেদিকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে বন ও পরিবেশবিদ্যা পাঠদান করাতে হবে। এই অঞ্চলের বিচিত্রতা, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতি ইত্যাদি মৌলিক দিকসমূহ বিবেচনায় নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান, জাতিতত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বিভাগ খুলতে হবে। এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক, এবং অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে সংলাপ স্থাপনপূর্বক পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করতে হবে। পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি সহ-পাঠ্যক্রম, ও পাঠ্যক্রম বহির্ভূত বিবিধ শিক্ষামূলক ও জীবনধর্মী কর্মকা-কেও শিক্ষার অপরিহার্য অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে করে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা পরস্পর পরস্পরকে জানতে পারে, পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়, সাংস্কৃতিক ভুল বোঝাবুঝি দূরীভূত হয়। তারা যেন অনুভব করতে পারেন যে সহিংসতা কোন সঠিক পথ হতে পারে না; বরং অহিংস পথে এবং সহিংসতা ত্যাগ করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে সুন্দর ও নিরাপদ করা সম্ভব। বাংলাদেশ সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষ করে, রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এদিকে সজাগ দৃষ্টি একান্তভাবে কাম্য। শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আদলে বিবেচনা না করে পাঠদান, গবেষণা, প্রযুক্তিসহ সকল ক্ষেত্রে রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পারদর্শী হতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের শিক্ষা, জীবন ও জীবিকা ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে এবং শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে পাহাড়ী-বাঙালী এবং পাহাড়ী নৃগোষ্ঠীদের মধ্যকার সকল জাতিগোষ্ঠীর সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জনসংখ্যার অনুপাতে নয়, মানবিক দৃষ্টিকোণ সর্বাগ্রে বিবেচ্য। বাস্তবতার প্রেক্ষিতে মনে রাখতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রামে যত প্রতিষ্ঠান রয়েছে (যেমন, উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদ) প্রায় সবটিকে নিয়ে পাহাড়ী-বাঙালী এবং পাহাড়ীদের মধ্যকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অসন্তোষ, বিরোধিতা ও সমালোচনা রয়েছে। রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল প্রকার বিরোধিতা বা সমালোচনার উর্ধে থেকে কাজ করতে হবে। উন্নয়নমূলক কোন প্রতিষ্ঠানের বিরোধ আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরোধ এক নয়। শিক্ষা নিয়ে বিরোধের নেতিবাচক প্রভাবও অত্যন্ত ব্যাপক হয়। রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি তার কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয় কিংবা পাহাড়ী-বাঙালীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বিষয়ে পরিণত হয়, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের বন্যা বয়ে গেলেও দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন হবে না বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। শিক্ষাক্ষেত্র যদি নেতিবাচক মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে এর প্রভাব হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। শান্তি চিরকাল অধরাই থেকে যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে পদক্ষেপ নিয়ে রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি পরিকল্পিত পথে শিক্ষা, জীবন ও জীবিকার লক্ষ্যে অগ্রসর হয় পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ সহজতর হবে। এর ইতিবাচক প্রয়োগে শিক্ষা, জীবন, জীবিকাসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে কাঙ্খিত পরিবর্তন আনয়ন সম্ভব। বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, ও রাঙ্গামাটির সকল পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের সচেষ্ট থাকতে হবে। রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় যেন পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিবাসীদের একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়; যে প্ল্যাটফর্ম হবে পরিবর্তনের প্ল্যাটফর্ম, শান্তির পথে শিক্ষার পথযাত্রা। এই পথযাত্রায় সকলের অংশগ্রহণ অনিবার্য। সকল জাতিগোষ্ঠী যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজেদের প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করতে পারে; জীবন, জীবিকা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্রে সহায়ক মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করতে পারে এবং এর বাস্তবায়ন যেন সে লক্ষ্যে পরিচালিত হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে। ফলস্বরূপ, রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় পার্বত্য চট্টগ্রামে ইতিবাচক ও শান্তিমুখীন রূপান্তরকারী ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। অনুকূল শিক্ষাকার্যক্রমের মাধ্যমে পার্বত্য চুক্তির অপূর্ণতাসমূহ পূর্ণতা পাক এবং বসবাসরত জাতিসমূহের মধ্যে শান্তি স্থায়ীরূপ লাভ করুক এটিই সবার প্রত্যাশা। লেখক : অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক [email protected]
×