ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১৬ শিক্ষার্থী রক্তাক্ত জখম ॥ অধ্যক্ষ মুচলেকায় ছাড়

প্রকাশিত: ০০:১১, ১১ মে ২০২২

১৬ শিক্ষার্থী রক্তাক্ত জখম ॥ অধ্যক্ষ মুচলেকায় ছাড়

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী ॥ পলাশে ১৬ শিক্ষার্থীকে পাইপ দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করার অভিযোগে সেন্ট্রাল কলেজের অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজীকে পুলিশ আটক করার পর মঙ্গলবার দুপুরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার প-িতপাড়ার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে সোমবার বেলা ১১টায় কলেজের শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাইপ দিয়ে পেটানোর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। ছাত্রদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ নানা অনিয়মের কারণে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড গত বছর কলেজটির উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ফরমফিলাপ করার ক্ষমতা স্থগিত করে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগে ৬টি বিষয়ে পাঠদান হয়। রবিবার ৬ষ্ঠ ক্লাসের শিক্ষক পাঠদান করবে না- এমন খবরে ক্লাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। তবে শিক্ষক ক্লাসে আসলে কয়েকজন এসে পাঠদানে যুক্ত হয়। পরদিন সোমবার যথারীতি সকল শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত হয়ে পাঠগ্রহণ শুরু করে। বেলা ১১টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজী এ্যালুমিনিয়ামের পাইপ নিয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে ৬ষ্ঠ ক্লাস না করা শিক্ষার্থীদের দাঁড় করান এবং একে একে শাকিব, সিজান, আদনান, সোহেল, শিফাত, নয়ন, তাহসিন, আশরাফুল, আমিরুল, তাসফিকসহ ১৬ শিক্ষার্থীকে পাইপ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আবার অনেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আহতের ছবি পোস্ট করে অধ্যক্ষের বিচার দাবি করেন, যা অল্প সময়ের মধ্যে ভাইরাল হয়। স্বাধীনূর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, শিক্ষকরা গুরুজন, বাবা-মার মতো। সেখানে কলেজের প্রিন্সিপাল হয়ে এইভাবে মারছে। আমার বাবা-মা তথা কেউই কোন দিন এভাবে মারে নাই। আমি আজ সারাটা ক্লাস শুধু ভাবছি কি হলো আমার সঙ্গে! শুধু আমার সঙ্গে যে তা-ই না। ক্লাসের অধিকাংশই আজ এই আঘাতের শিকার হইছে, কেউ কম বা কেউ বেশি। যেখানে ছাত্রদের ওপর হাত তোলাই নিষেধ, সেখানে একে তো শিক্ষাকে ব্যবসা বানাইছেই, তার ওপর এইসব হইতেছে! আরেক আহত শিক্ষার্থী সোহেল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, অধ্যক্ষ স্যার ক্লাসে ৩টি এ্যালুমিনিয়ামের পাইপ ও পানি নিয়ে গেছে। আমাদের পাইপ দিয়ে পিটিয়ে ক্লান্ত হলে সেই পানি খেয়ে আবার পিটিয়েছে। আমরা শিক্ষকের কাছ থেকে এই ধরনের আচরণ আশা করিনি। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নরসিংদীর পলাশ থানা সেন্ট্রাল কলেজের অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের শাসন করেছি। এখন কেউ কেউ এটাকে ইস্যু বানিয়ে পরিবেশ ঘোলা করার চেষ্টা করছে। ছাত্র পেটানোর ঘটনা সম্পর্কে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম মিত্রের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানিয়ে বলেন, ছাত্র পেটানো কেন, কোন শিক্ষক ছাত্রকে তিরস্কার করে কথা বলার বিধানও আইনে নেই। ঘটনাটি তদন্তের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার মিলন কৃষ্ণ হালদারকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস মিয়া বলেন, কোন অভিযোগ না পাওয়ার কারণে ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যকলাপে লিপ্ত না হওয়ার মর্মে আমির গাজীর কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাকে মঙ্গলবার দুপুরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
×