ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ মিরাজ

ডি ভিলিয়ার্স-বার্টির অন্যরকম জুটি

প্রকাশিত: ০০:০৮, ১১ মে ২০২২

ডি ভিলিয়ার্স-বার্টির অন্যরকম জুটি

এবি ডি ভিলিয়ার্স। দক্ষিণ আফ্রিকা তো বটেই আধুনিক সময়ের অন্যতম আনন্দদায়ী এক ক্রিকেটার। ২০১৮ সালে হুট করে আন্তর্জাতিক অবসরে যাওয়া ‘থ্রি সিক্সটি ডিগ্রী’ খ্যাত এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান গত বছর নবেম্বরে সকল ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। অন্যদিকে গত মার্চে মাত্র ২৫ বছর বয়সে টেনিস ছেড়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনকে চমকে দেন অস্ট্রেলিয়ান টেনিস তারকা এ্যাশলে বার্টি। এবার একসঙ্গে ফিরছেন দুই অঙ্গনের এই দুই তারকা। না ক্রিকেট বা টেনিস নয়, স্টিক হাতে গলফের সবুজ গালিচায় জুটি হচ্ছেন তারা। আগামী ৩০ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি সিটিতে অনুষ্ঠিত হবে আইকনস সিরিজ গলফ। আমেরিকান একটি দলের বিপক্ষে এখানে লড়বেন বিশ্বের বাকি দেশগুলোর তারকারা। ডি ভিলিয়ার্স ও বার্টি রেস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ডের হয়ে মাঠে নামবেন। কিংবদন্তি সাঁতারু মাইকেল ফেলপস, বক্সিং গ্রেট ডি লা হোয়াকে নিয়ে গড়া তারকা সমৃদ্ধ টিম ইউএসএকে নেতৃত্ব দেবেন ফ্রেড কাপলস। গলফের মাধ্যমে ডি ভিলিয়ার্স মাঠে ফিরে আসলেও, ক্রিকেটে আর ফেরার সম্ভাবনা নেই। তবে এ নিয়ে মোটেও আক্ষেপ নেই প্রোটিয়া সুপারস্টারের। বার্টি জানিয়েছেন, ‘এই বয়সেই অবসর আসলে অভাবনীয়!’ ক্রিকেট এবং টেনিসের পাশাপাশি দুজনেই গলফ ভালবাসেন। যেভাবে অবসর নিয়েছেন, মিল খুঁজে পাওয়া যায় সেখানেও। গত জানুয়ারিতে বার্টি যখন টেনিস দুনিয়াকে বিদায় বলেন, তখন তিনি বিশ্বের এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড়। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের মাত্র এক মাসের মাথায় আচমকা অবসরের ঘোষণা দেন। ২০১৮ সালে ফর্মের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় হুট করে অবসর নেন এবি। ২০১৯’Ñএর শেষ দিকে বোর্ড (সিএসএ) পরিচালক হিসেবে গ্রায়েম স্মিথ ও প্রধান কোচ হিসেবে মার্ক বাউচার দায়িত্ব নেয়ার পর আবার ডি ভিলিয়ার্সের ফেরার গুঞ্জন শুরু হয়। তখন মূলত ২০২০ টি২০ বিশ্বকাপকে ঘিরে চলতে থাকে ৭৮টি অন্তর্জাতিক টি২০ খেলা এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের ফেরার আলোচনা। তবে করোনার প্রকোপে বিশ্বকাপ (২০২১) পিছিয়ে গেলে তার ফেরার আলোচনাও থমকে যায়। শেষ পর্যন্ত গত বছর মে মাসে সিএসএ জানিয়ে দেয়, সাবেক অধিনায়কের অবসরের সিদ্ধান্ত পাকাপাকিভাবেই থেকে যাচ্ছে। ফলে জাতীয় দলে আর ফেরা হয়নি এবির। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ১৪ বছরে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১১৪ টেস্ট ও ২২৮টি ওয়ানডে খেলেছেন ডি ভিলিয়ার্স। ২২ সেঞ্চুরিতে টেস্টে তার মোট রান ৮৭৬৫। ১৫ সেঞ্চুরিতে ওয়ানডে রান ৯৫৭৭। প্রথম শ্রেণিতে ১৪১ ম্যাচে ডি ভিলিয়ার্সের রান ১০৬৮৯। নামের পাশে সেঞ্চুরি আছে ২৫টি, হাফ সেঞ্চুরি ৬০টি। ২৬৩ লিস্ট-এ ম্যাচে ২৯ সেঞ্চুরি ও ৬৩ হাফ সেঞ্চুরির সাহায্যে করেছেন ১১১২৩ রান। ৩৮ বছর বয়সী ডি ভিলিয়ার্স আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার পর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দাপটের সঙ্গেই খেলে যাচ্ছিলেন তিনি। আইপিএলের গত আসরেও (২০২১) তার ব্যাটে ছিল রান। দুই হাফ সেঞ্চুরিতে ১৪ ইনিংসে করেন ৩১৩। তবে আন্তর্জাতিক ও ফ্র্যাঞ্চাইজি মিলিয়ে ক্যারিয়ারে ৩৪০টি টি২০ খেলেছেন ডি ভিলিয়ার্স। ১৫০.১৩ স্ট্রাইক রেটে ৪ সেঞ্চুরি ও ৬৯ হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৯৪২৪ রান। আইপিএল ছাড়াও খেলেছেন বিগ ব্যাশ, পিএসএল, ভাইটালিটি ব্লাস্ট, বিপিএল ও এমএসএলে-এর মধ্যে আইপিএলেই সবচেয়ে বেশি খেলেছেন ডি ভিলিয়ার্স। যেখানে ১৮৪ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি ও ৪০ হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৫১৬২ রান। ভারতের ঘরোয় এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় আছেন ছয় নম্বরে। ২০১১ সালে বিরাট কোহলির সতীর্থ হিসেবে যোগ দিয়ে ১৫৭ ম্যাচে ১৫৮.৩৩ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৪৫২২ রান। উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন বার্টি একদা ব্রিসবেন হিটের হয়ে পেশাদার ক্রিকেট খেলেছেন! ক্রিকেটার হিসেবেও যে নিজের জাত চিনিয়েছেন, সেটা অনেকেরই হয়ত জানা নেই। ২০১৪ সালে টেনিস থেকে সাময়িক বিরতি নেন বার্টি। ঠিক পরের বছরেই পেশাদার ক্রিকেটে নাম লেখান। মহিলা বিগ ব্যাশে খেলার জন্য ব্রিসবেন হিটের সঙ্গে চুক্তি করেন। ফর্ম্যাল ট্রেনিং ছাড়াই ক্রিকেটের আঙিনায় ঢুকে পড়া বার্টি ১০টি ম্যাচ খেলেন ব্রিসবেনের হয়ে। ৮টি ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে সাকুল্যে ৬৯ রান করেন। সর্বোচ্চ ইনিংস ৩৯ রানের। পরে ক্রিকেট থেকে পুনরায় টেনিসে নজর ফেরান তিনি এবং বাকিটা ইতিহাস। ফরাসী ওপেনের পর উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজের বহুমুখী প্রতিভাকে আরও জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। অনায়াসে ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন। তবে শেষ মুহূর্তে ক্রিকেট থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে পুনরায় ফেরেন টেনিসে। বিগ ব্যাশের মতো প্রথম সারির ক্রিকেটের আসর থেকে নজর সরিয়ে বার্টি এখন টেনিসবিশ্বের খ্যাতির চুড়ায়। ২০১৯ সালে জিতেছিলেন ফরাসী ওপেনের খেতাব। এবার উড়িয়েছেন উইম্বলডনে বিজয় পতাকা। জোড়া গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফি জয়, বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার জন্য কতটা প্রতিভার প্রয়োজন হয়, সেটা টেনিসমহলের সকলেই বোঝেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারি বার্টি ক্রিকেট, টেনিস আর গলফেই থেমে নেই। বই লিখে লেখক সত্তার পরিচয় দিচ্ছেন। আগামী জুলাইয়ে বের হবে তার লেখা বই ‘লিটল অ্যাশ’। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ছয় খ-ের বই। লেখালেখির জগতে ঢুকেও রীতিমতো রোমাঞ্চিত বার্টি, ‘এই প্রকল্পটা যে কী মজার! আমি সব সময়ই এমন কিছু করতে চেয়েছি’।
×