ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গণভবনে সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্টের সাক্ষাত

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে এডিবির সহায়তা চাই ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ১০ মে ২০২২

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে এডিবির সহায়তা চাই ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ বাস্তবায়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তা চেয়ে বলেছেন, এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সংযোগ, বাণিজ্য ও জ্বালানি সহযোগিতার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্যও এডিবির সহায়তা কামনা করেছেন তিনি। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট (অপারেশন্স-১) শিজিন চ্যান সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ অনুরোধ জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, এই ডেল্টা প্ল্যান বাংলাদেশের জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ জানিয়ে তা বাস্তবায়নে এডিবির সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতার মধ্যে কানেকটিভিটি, বাণিজ্য সুবিধা এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতেও এডিবির ভূমিকা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে এবং এডিবি বাংলাদেশের সঙ্গে থাকবে এবং গ্রামীণ ও নগর উন্নয়ন উভয় ক্ষেত্রেই সহায়তা অব্যাহত রাখবে।’ এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তাঁর সংস্থা আশা করছে যে, বাংলাদেশ জিডিপিতে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। শিজিন চ্যান বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে (উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্নাতক হওয়ার কারণে) যা সাধারণত একটু জটিল। কিন্তু বাংলাদেশ ভাল করছে।’ সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং দেশবাসী দুই বছর পর এবার অবাধে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী মহামারীর সময়ে এডিবির সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণ প্রসঙ্গে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, এই সময়টা সাধারণত ক্রিটিক্যাল হয়। বাংলাদেশ ভাল করছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উত্তরণকালের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনা এবং আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমিসহ ঘর দেয়ার কথাও তিনি তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার এখন দেশের গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে উন্নত ও সুন্দর উন্নত জীবন দেয়ার লক্ষ্যে জমিসহ বাড়ি দিচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতেও বাংলাদেশ উন্নতি করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হতে পারে বলে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্টের অনুমানের জবাবে তাঁর সরকার আরও বেশি খাদ্য উৎপাদনের কর্মসূচী গ্রহণ করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দেশের আইসিটি খাতের উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সংযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কানেক্টিভিটি উন্নয়নের দরজা খুলে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর যেসব রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেগুলো আবার চালু করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগে আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য এডিবির শীর্ষ ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনে বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোতায়েন প্রত্যাশা করেন। এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ অন্যতম সেরা উদাহরণ স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ কৃষি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এডিবি সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং গ্রাম ও নগর উন্নয়নে সহযোগিতা করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ জুড়ে যে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হচ্ছে, তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা পূরণ করবে। তিনি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীতে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে এডিবির আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, এডিবির ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেল (সাউথ এশিয়ান ডিপার্টমেন্ট) মনমোহন পরকাশ এবং বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং উপস্থিত ছিলেন।
×