ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশব্যাপী নানা আনুষ্ঠানিকতায় বিশ্বকবি স্মরণ

মানবতা ও সম্প্রীতির মর্মবাণীতে উদযাপিত রবীন্দ্রজয়ন্তী

প্রকাশিত: ২২:৩২, ৯ মে ২০২২

মানবতা ও সম্প্রীতির মর্মবাণীতে উদযাপিত রবীন্দ্রজয়ন্তী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আকাশভরা সূর্যতারা কিংবা বিশ্বভরা প্রাণের মতোই আপন সৃষ্টির আলোয় উজ্জ্বল সেই বিশ্বকবি। গানের সুরে, কবিতার পঙ্ক্তিমালায়, মানবিক ভাবনায় অথবা স্বদেশ চেতনায় হয়ে তিনি বাঙালীর নিত্যসহচর। সেই সুবাদে মানবিক দর্শনের আলোকরেখায় ঠাঁই করে নিয়েছেন বাঙালীর মননে। সঙ্কটে-সংগ্রামে, আনন্দ-ভালবাসায় হয়েছেন অনুপ্রেরণার সঙ্গী। সেই কৃতজ্ঞতার বন্ধনে প্রাণের উচ্ছ্বাসে রবিবার পঁচিশে বৈশাখ উদ্্যাপিত হলো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মজয়ন্তী। ধর্মান্ধতা ও উগ্রপন্থার আস্ফালনে মানবতার সঙ্কটে সারাবিশ্ব যখন প্রকম্পিত, সেই দুঃসময়ে জন্মদিনে আরও বেশি প্রাসঙ্গিকতায় সামনে এলেন রবীন্দ্রনাথ। ভালবাসার বন্ধনে সহজাতভাবেই রবীন্দ্র অনুরাগীদের মনে গুঞ্জরিত হয়েছে- আজি এ প্রভাতে রবির কর/কেমনে পশিল প্রাণের পর/কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাতপাখির গান...। সেই প্রেরণায় অমানবিকতার বিরুদ্ধে উচ্চারিত হয়েছে তারই বাণী- অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে...। মানবতা ও সম্প্রীতির মর্মবাণীকে ধারণ করে জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়েছে কবিকে। হৃদয়ের গহীন থেকে উৎসারিত ভালবাসায় স্মরণ করা হয়েছে বিশ্বকবিকে। দেশব্যাপী নানা আনুষ্ঠানিকতায় বাঙালীর চিন্তা-মননের সঙ্গী এবং শিল্প-সংস্কৃতির অগ্রদূত কবিকে জানানো হয়েছে বন্দনা। জন্মদিনে কবিবন্দনার পাশাপাশি ব্যক্ত হয় তার দেখানো পথরেখায় হিংসা-বিদ্বেষ দূরে ঠেলে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে চলার প্রত্যয়। নাগরিক কবি রবীন্দ্রনাথের মননকে আলোড়িত করেছিল এই বাংলার গ্রামীণ জীবন ও প্রকৃতি। প্রান্তিক মানুষের জীবনচিত্র উপলব্ধির পাশাপাশি নিসর্গের রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন এ দেশের শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসর কাটিয়ে দেয়া জীবন থেকে। তার স্মৃতিধন্য সে সকল স্থানে নানা আয়োজন-আনুষ্ঠানিকতায় অনুরাগ প্রকাশ করা হয়েছে কবির প্রতি। ‘মানবতার সঙ্কট ও রবীন্দ্রনাথ’ প্রতিপাদ্যে এবার জাতীয়ভাবে উদ্যাপিত হয়েছে দিবসটি। এদিন দুপুরে কবির স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে জাতীয়ভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তীর আয়োজন করা হয়। এতে মূল বিষয়ের ওপর স্মারক বক্তৃতা করে অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি। আলোচনার পাশাপাশি ছিল নৃত্য-গীতে সজ্জিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিলাইদহের বাইরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। এদিকে পঁচিশে বৈশাখ কবির জন্মদিনে সরব ছিল রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। সরকারী পর্যায় ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন রবীন্দ্রজয়ন্তী উদ্যাপন করেছে বৈচিত্র্যময় নানা আয়োজনে। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রকমারি আয়োজনে বর্ণিল রূপ ধারণ করেছিল রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। নৃত্য, গীত, পাঠ, কবিতা আবৃত্তিসহ বহুমাত্রিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে একই সঙ্গে কবিবন্দনা ও স্মরণের আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজনে গানের সুরে, কবিতার ছন্দে বা নৃত্যের মুদ্রায় বা বক্তার কথায় নির্মল আনন্দ উপভোগের পাশাপাশি প্রাণের কবির প্রতি হৃদয় উজাড় করা শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানিয়েছেন উপস্থিত ররীন্দ্র অনুরাগী দর্শক-শ্রোতারা। রবীন্দ্রজয়ন্তীতে দুই দিনব্যাপী রবীন্দ্র উৎসবের আয়োজন করেছে ছায়ানট। গান-কবিতা, নাচসহ সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় কবির প্রতি ভালবাসা জানিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। বৈশাখী বিকেলে রবীন্দ্র সরোবরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। সকালে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগ। আজ সোমবার একক বক্তৃতার আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। এ ছাড়া কবির জন্মদিনের সংবাদসহ প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করেছে দৈনিক পত্রিকাগুলো। সরকারী-বেসরকারী চ্যানেলগুলো প্রচার করেছে রবীন্দ্র সৃষ্টিস্নাত গান-কবিতা ও নাটকে সজ্জিত অনুষ্ঠানমালা। ছায়ানটের রবীন্দ্র উৎসব ॥ রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে রবি ও সোমবার দুই দিনব্যাপী রবীন্দ্র উৎসবের আয়োজন করেছে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সান্ধ্যকালীন এ আয়োজন সাজানো ছিল গান, পাঠ, আবৃিত্ত ও নৃত্য পরিবেশনায়। সন্ধ্যায় সম্মেলক গানের সুরে রবিবার প্রথম দিনের উৎসবের সূচনা হয়। অনেকগুলো কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। জন্মদিনে কবিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সকলে মিলে গেয়ে শোনায়- হে নূতন, দেখা দিক আরবার ...। সম্মেলক সঙ্গীতের পর ‘মোর সন্ধ্যায় তুমি সুন্দর’ শীর্ষক সঙ্গীত পরিবেশন মহুয়া মঞ্জুরী সুনন্দা। রোকাইয়া হাসিনা নীলি শুনিয়েছেন ‘তোমায় নতুন করে পাব ব’লে’। মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য গেয়েছেন ‘পূর্ণ আনন্দ পূর্ণ মঙ্গলরূপে’। সুতপা সাহার কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ‘জানি জানি কোন্্ আদিকাল হতে’। সেমন্তী মঞ্জুরী পরিবেশন করেন ‘বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা’। তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী শীর্ষক গান শুনিয়েছেন চঞ্চল বড়াল। দীপ্র নিশান্ত শুনিয়েছেন ‘হাওয়া লাগে গানের পালে’। আব্দুল ওয়াদুদ গেয়েছেন ‘হৃদয়ে তোমার দয়া যেন পাই’। এর বাইরে পরিবেশিত হয় ‘নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়’সহ বেশ কয়েকটি সম্মেলক সঙ্গীত। এ ছাড়াও একক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, সালমা আকবর, ফারহিন খান জয়িতা, সত্যম কুমার দেবনাথ, সুমা রায়, সুস্মিতা আহমেদ বর্ণা, পার্থ প্রতীম রায়, মাকছুরা আপখতার, মেজবাহুল আজম মঞ্জু ও সেঁজুতি বড়ুয়া। রবীন্দ্র সৃষ্টি নির্যাস থেকে পাঠ করেন লিয়াকত খান। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে আবৃত্তি পরিবেশন করেন জয়ন্ত রায়। ‘প্রথম আদি তব শক্তি’ শীর্ষক গানের সুরে একক নৃত্য উপস্থাপন করেন অমিত চৌধুরী। ‘আমি মারের সাগর পাড়ি দেব’ গানের সুরে পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য। ঢাবির সঙ্গীত বিভাগের আয়োজন ॥ ‘জয় তব বিচিত্র আনন্দ, হে কবি, জয় তোমার করুণা’ শীর্ষক গানের সুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের সাংস্কৃতিক পর্বের সূচনা শুরু হয়। এর আগে ছিল আলোচনা সভা ও প্রবন্ধ পাঠ। আলোচনা শেষে ‘লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রাণে এসো হে’সহ অন্যান্য গানের সঙ্গে পরপর কয়েকটি নাচ-গান পরিবেশন করেন নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আয়োজনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ‘মানবতার সঙ্কট ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুুরী। মূল প্রবন্ধে ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, রবীন্দ্রনাথ সমকালীন সব সঙ্কট নিয়েই কমবেশি লিখেছেন। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ জীবনের বহুমুখী সঙ্কট নিয়ে তার লেখায় উত্তরণের উপায় পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, গল্প-উপন্যাসে ও গানে বিষণœতা, বেদনা, শোকের দেখা অহরহ পাই। কিন্তু কোথাও হতাশার কথা নেই। বিশ্বাসভঙ্গের শেষ সীমায় দাঁড়িয়েও তিনি আশার কথা শুনিয়ে গেছেন। তিনি আরও বলেন, আজকের বিশ্ব যুদ্ধ আক্রান্ত। এই মুহূর্তে বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে আছে মহামারীর ছোবল। মহামারী প্লেগ আর বিশ্বযুদ্ধকালীন রবীন্দ্রনাথের রচনা সামনে রাখলে এই সঙ্কট মুহূর্তেও উত্তরণের চমৎকার দিশা আমরা পাই। সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, আধুনিকতা ও সমকালীনতা রবীন্দ্রনাথের দুইটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। যে বিষয়টিকে আপনি পছন্দ করবেন, সে বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ কিছু না কিছু লিখে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও রবীন্দ্রনাথের ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বিশেষ দিনে এখানে এসে তিনি বক্তৃতা করেছেন। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজন ॥ রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এ ছাড়া জাতীয় চিত্রশালার ৩ নম্বর গ্যালারিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা এবং রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আঁকা চিত্রকর্মের প্রদর্শনীর উদ্বোধনও করা হয় এ দিন। এই প্রদর্শনী চলবে আগামী ২২ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। নজরুল ইনস্টিটিউটের আয়োজন ॥ ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাকীর হোসেনের তত্ত্বাবধানে কবিগুরুর ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণিল পরিবেশনায় সজ্জিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে শহীদ খানের পরিচালনায় ইনস্টিটিউটের শিশু প্রশিক্ষণার্থী শিল্পীবৃন্দ সূচনা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। একক আবৃত্তি করেন ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু ও রূপা চক্রবর্তী। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী বুলবুল ইসলাম, অনিমা রায়, শিমু দে, সুপর্ণা হোসেন, সুমা রায়, আজিজুর রহমান তুহিন ও নির্ঝর চৌধুরী। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে নৃত্য পরিবেশন করেন ওয়ার্দা রিহাব ও কবিরুল ইসলাম রতনের দল। শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্র ভক্ত-অনুরাগীসহ উৎসুক জনতার ঢল ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা কুষ্টিয়া থেকে জানান, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে রবিবার কুষ্টিয়ার নিভৃত পল্লী রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহের কুঠিবাড়ি চত্বরে নেমেছিল রবীন্দ্রপ্রেমী ভক্ত-অনুরাগীসহ উৎসুক জনতার ঢল। ২৫ বৈশাখ থেকে তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে দূর-দূরান্ত থেকে আগত নারী-পুরুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কুঠিবাড়ি চত্বর। এ দিন দুপুরে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপির সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ এমপি (কুষ্টিয়া-৪) সেলিম আলতাফ জজ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জীবনের অনেকখানি সময় এই কুঠিবাড়িতে কাটিয়েছেন। কবির স্মৃতি বিজড়িত এই শিলাইদহের কুঠিবাড়ি আজও তার স্বাক্ষ্য বহন করে এবং রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য রচনাবলী তিনি এখানে বসেই লিখেছেন। কাজেই এর ঐতিহ্য এবং গৌরব সত্যিই বিরল। আমরা গর্ব অনুভব করি, যে আমাদের বাংলাদেশের মধ্যেই এই শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রয়েছে এবং অবশ্যই এই রকম একটি স্থান যেটি রবীন্দ্রনাথের জীবনে অনেক গভীর দার্শনিক চিন্তার স্থল ছিল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর ও স্মরক বক্তব্য দেন প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা। রবীন্দ্রনাথকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা শাহজাদপুর সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, রবিবার দুপুরে শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ৩ দিনব্যাপী রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর উদ্বোধন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। আমাদের জীবন মানের পরিবর্তন করতে হলে রবীন্দ্রনাথকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রবীন্দ্রনাথকে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন বলেই তিনি সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সফল হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি আমাদের উন্নয়নের পথ দেখিয়েছেন। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন করে অনুষ্ঠানমালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহ্ আজম, সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব শামীম খান এবং সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি চয়ন ইসলাম। বিশ্বে¦ সাধনা ও চর্চার নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, রবিবার নওগাঁর আত্রাই উপজেলার রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি পতিসরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী উদ্যাপিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি বলেছেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সকল কর্ম ও সাহিত্য সব সময় বাঙালী জাতির জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। শুধু বাঙালীই নয় বিশ্বের কাছে সাধনা ও চর্চার নামই হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। করোনার কারণে দীর্ঘ দুই বছর বন্ধ থাকার পর জন্মদিন উপলক্ষে কবিগুরুর নিজস্ব জমিদারি তার স্মৃতি বিজড়িত পতিসর কাচারিবাড়ি প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচীর আয়োজন করে নওগাঁ জেলা প্রশাসন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান পিএ। আলোচনা সভা ॥ স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার বিকেলে স্থানীয় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্র লোকমেলা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস থেকে জানান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রামে কবিপত্নীর জন্মস্থানে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্র লোকমেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জাতীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে খুলনা জেলা প্রশাসন। বিকেল ৫টা বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে লোকমেলা ও অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) আসনের সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ।
×