ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেতন-বোনাস রেমিটেন্সে চাঙ্গা অর্থনীতি পোশাক, জুতা, ইলেকট্রনিক্স ও ভোগ্যপণ্য কেনার ধুম

রেকর্ড ঈদ বাণিজ্য ॥ দেড় লাখ কোটি টাকার কেনাকাটার আশা

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ২৯ এপ্রিল ২০২২

রেকর্ড ঈদ বাণিজ্য ॥ দেড় লাখ কোটি টাকার কেনাকাটার আশা

এম শাহজাহান ॥ করোনা মহামারীর ধকল কাটিয়ে দীর্ঘ দুই বছর পর আবার ঈদ বাজার স্বরূপে ফিরে এসেছে। মহামারী দূর হওয়ায় লকডাউন বন্দী জীবন পেরিয়ে এবার ঈদের আনন্দে ভাসছে সারাদেশের মানুষ। রেকর্ড কেনাকাটা ও বেচাবিক্রিতে পুরোদমে জমে উঠেছে ঈদের বাজার। বেতন-বোনাস, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থ ঈদের কেনাকাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এবারের ঈদ ঘিরে অন্তত দেড় লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে সারাদেশে। ঈদের কেনাকাটায় ইতোমধ্যে চাঙ্গা হয়েছে দেশের অর্থনীতি। এতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে বলে ব্যবসায়ীরা আশা প্রকাশ করছেন। শুধু তাই নয়, গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ এসেছে ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের সামনে। ঈদের অর্থনীতিতে পোশাক, জুতা, ভোগ্যপণ্য ও ইলেক্ট্রনিক্সের মতো শীর্ষ ১০ পণ্যের কেনাকাটায় বাণিজ্য হবে দেড় লাখ কোটি টাকার ওপরে। এর বাইরে আরও অনেক রকম পণ্যের কেনাকাটা ও লেনদেন হবে ঈদকে ঘিরে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, ঈদ বাণিজ্য ধরতে এবার ব্যবসায়ীরা আগে-ভাগেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। করোনার কারণে গত দুবছর লকডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধের কারণে ব্যবসায়ীরা ঈদ বাণিজ্য করতে পারেনি। কিন্তু দেশব্যাপী করোনার গণটিকা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে কার্যকর হওয়ায় গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে করোনার প্রভাব কমে আসছিল। চলতি বছরের শুরু থেকে করোনা সঙ্কট দূর করে গতি ফিরে আসছে অর্থনীতিতে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ঈদের বাণিজ্য ধরতে পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। সাধারণ মানুষ যারা ঈদের কেনাকাটায় শামিল হন তারাও এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে মনের আনন্দে এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে ঘুরে ঘুরে শপিং করছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা থেকে বাঙালী জাতির মুক্তি হয়েছে। এ কারণে এবার চাঙ্গা ঈদের বাণিজ্য। যার যার সাধ্যমতো এবার ঈদের কেনাকাটায় শামিল হয়েছেন। রেকর্ড কেনাকাটায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা অর্থনীতিতে গতি ফিরে এসেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঈদের কেনাকাটা হচ্ছে। দুবছর পর ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। গত দুবছর অনেক দোকান মালিক বেতন-বোনাস ভাড়া দিতে না পেরে চোখের পানি ফেলেছেন, এবার তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী কারও এখন দম ফেলার সময় নেই। সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, করোনা ও লকডাউন থেকে মানুষ এক ধরনের মুক্তি পেয়েছে। সেই মুক্তির স্বাদ নিয়ে সাধারণ মানুষ এবার ঈদের কেনাকাটায় শামিল হয়েছেন। এ কারণে এবার রেকর্ড কেনাকাটা ও বেচাবিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সেইভাবে বিনিয়োগ ও পুঁজি খাটিয়েছেন। চারদিকে কেনাকাটা ও অর্থের লেনদেন বাড়ায় অর্থনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, সারাদেশে প্রায় চার কোটি পরিবার রয়েছে। আর এই চার কোটি পরিবারে বসবাস করছেন ১৭ কোটির বেশি মানুষ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এখন বিপুল পরিমাণ ভোক্তা শ্রেণী গড়ে উঠেছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং জীবনমান উন্নয়নে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এখন বেশি। এ অবস্থায় দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ প্রবাসে চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। প্রবাসীরা নিকটাত্মীয়দের কাছে বিপুল অঙ্কের রেমিটেন্স পাঠান ঈদ উৎসবে। সরকারী-বেসরকারী খাতের চাকরিজীবীরা বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস পেয়ে থাকেন। এর পাশাপাশি সঞ্চয় এবং মানুষের ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থ চলে আসে ঈদের কেনাকাটায়। ফলে লাখ লাখ কোটি টাকার বেচাকেনা হয় রোজা ও ঈদে। শীর্ষ ১০ পণ্যের কেনাকাটায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে ॥ এবারের ঈদে শীর্ষ ১০ পণ্যের কেনাকাটায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঈদ কেনাকাটার সবার শীর্ষে থাকে পোশাক। এর পরই জুতা-স্যান্ডেল, লুঙ্গি-গেঞ্জি-গামছা। খাদ্যপণ্যের মধ্যে সেমাই-চিনি, মাংস, মিষ্টি, গ্রসারি পণ্য রয়েছে। প্রসাধনী, ইলেক্ট্রনিক্স টিভি, মোবাইলসহ নানা ধরনের পণ্যও কেনা হয় ঈদ উপলক্ষে। অনেকে আবার সোনার গয়না, ঘরের আসবাবপত্র কেনেন বলে ঈদে এসব পণ্যের বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক গুণ বেড়ে যায়। এর বাইরে ঈদের ছুটিতে পর্যটন খাতেও মানুষ অর্থ ব্যয় করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটি পরিবার ন্যূনতম থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করে ঈদকে ঘিরে। সামর্থ্য অনুযায়ী এই অঙ্ক আরও বাড়ে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঈদে পোশাকসহ পরিধেয় খাতে ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি, জুতা-কসমেটিকস তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি, ভোগ্য পণ্য সাত হাজার কোটি, জাকাত-ফিতরা ও দান-খয়রাত ৩৮ হাজার কোটি, যাতায়াত বা যোগাযোগ খাতে ১০ হাজার কোটি, সোনা-ডায়মন্ড পাঁচ হাজার কোটি, ভ্রমণ খাতে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি, ইলেক্ট্রনিক্স চার হাজার কোটি, স্থায়ী সম্পদ ক্রয় এক হাজার কোটি, পবিত্র ওমরাহ পালন তিন হাজার কোটি, আইন-শৃঙ্খলাসহ অন্যান্য খাতে লেনদেন হয় আরও এক হাজার কোটি টাকা। এছাড়া করোনা সঙ্কট দূর হওয়ায় এবার রাজনৈতিক দলসহ নানা ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইফতার পার্টির আয়োজন করছে। এটিও অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যপণ্য, পোশাক, বিনোদন ও পরিবহন খাতে বাড়তি এই অর্থ যোগ হবে। সরকারী চাকরিজীবী, দোকানের কর্মচারী, পোশাক ও বস্ত্র খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর শ্রমজীবীদের বোনাসও এই অর্থনৈতিক কর্মকা-ে যোগ হবে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে উৎসবকেন্দ্রিক অর্থনীতির বিকাশ হচ্ছে। বিশেষ করে বছরের দুই ঈদ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে আবার রোজার ঈদ অন্যতম। রোজার ঈদ জমে ওঠে পোশাক, খাদ্যপণ্য, কসমেটিকস, জাকাত-ফিতরাকে কেন্দ্র করে। করোনার কারণে গত দুই বছর ঈদে অর্থনীতি ধুঁকেছে। এবার ঈদ বাজারকে ঘিরে দেশের অর্থনীতি আরও চাঙ্গা ও গতিশীল হচ্ছে। এর বাইরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সও ঈদ অর্থনীতিতে যুক্ত হবে। কারণ ঈদের সময়ে প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়তি ব্যয় মেটাতে টাকা পাঠান। ফলে ঈদ কেনাকাটায় অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির এক তথ্যে বলা হয়েছে- এবার রোজায় অতিরিক্ত এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন যোগ হবে। এতে শুধু পোশাকের বাজারে যোগ হবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। নিত্যপণ্যের বাজারে কেনাকাটা হবে ২৮ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে ইফতারিসামগ্রী বিক্রি হয় সারাদেশে। বিশেষ ছোলা, বুট বেগুনি, জিলাপীসহ বাহারি সব ইফতারি পণ্য বিক্রি করা হয়ে থাকে এই রোজার সময়ে। এখানেও হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন ও বাণিজ্য হয়ে থাকে। এ ছাড়া আয়ের হিসাবে সাড়ে ১২ লাখ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, বেসরকারী খাতের ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭০ লাখ শ্রমিকের বোনাস ঈদ অর্থনীতিতে যোগ হবে। ঈদ ফিরেছে ফ্যাশন হাউসগুলোতে ॥ স্থানীয় ফ্যাশনের বাজারে ৭৫ শতাংশই বিক্রি হয় ঈদের বাজারে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। করোনার কারণে গত দুই বছর এর অর্ধেক বেচাবিক্রিও করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে রোজার আগে থেকে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় দেখছেন তারা। করোনার কারণে গত দুই বছর যেসব কাস্টমার পোশাক-জুতা, অলঙ্কার কিনতে পারেননি তারাও ভিড় করছেন মার্কেটগুলোতে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্যাশন ডিজাইনার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও অঞ্জনস শোরুমের মালিক শাহীন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, গত দুই বছরে ঈদ-উল-ফিতরের উৎসবে করোনার কারণে ফ্যাশন হাউসগুলোর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এবার পরিবেশ খুব ভাল। এখন পর্যন্ত বিক্রির অবস্থা বলছে এবার আমরা লোকসান করব না। সারাদেশে বিক্রীত স্থানীয় পোশাকের ৭০-৮০ শতাংশের জোগান দেয় ঢাকার কেরানীগঞ্জসহ বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী এলাকার উৎপাদকরা। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পোশাক উৎপাদনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ীদের উৎপাদিত পোশাকের ৭০ শতাংশ বিক্রি হয় ঈদ-উল-ফিতরে। জমজমাট জুতার বাজার ॥ ঈদ উপলক্ষে জুতার বাজারে এখন জমজমাট কেনাকাটা চলছে। ঈদ সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের জুতাশিল্প। গত দুই বছরের তুলনায় এবার বেশি জুতা বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশের বড় ব্র্যান্ডগুলো। এছাড়া আমদানি করা এবং স্থানীয় জুতার খুচরা বিক্রেতারাও আশানুরূপ বিক্রির কথা শুনিয়েছেন। সব মিলিয়ে জুতাশিল্প করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদ মৌসুমে তারা যে পরিমাণ জুতা বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করেছেন, ইতোমধ্যে তার অর্ধেকের বেশি হয়ে গেছে। আর করোনার আগের বছর ২০১৯ সালের চেয়ে এখন পর্যন্ত বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশের বেশি। সাধারণত রোজার ঈদে সবচেয়ে বেশি জুতা বিক্রি হয় চাঁদ রাতে (ঈদের আগের রাত)। সেই হিসাবে এবারের ঈদে জুতা বিক্রির লক্ষ্য পূরণ হবে বলে আশা করছেন তারা। গত ১০ বছরের মধ্যে যেকোন ঈদের তুলনায় এবারই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশ পূরণ হয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় জুতার ব্র্যান্ড এ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ফিরোজ মোহাম্মদ বলেন, এখন পর্যন্ত বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশ পূরণ হয়েছে। আর ২০১৯ সালের তুলনায় এখন ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি আছে। এভাবে বিক্রি হতে থাকলে তাদেরও লক্ষ্য পূরণ হবে। জুতার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে জুতার বাজারের আকার প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে ব্র্যান্ডের জুতা বিক্রি হয় ২৫ শতাংশ বা প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা, আর নতুন ব্র্যান্ডের জুতার হিস্যা ৭৫ শতাংশ বা ৯ হাজার কোটি টাকা। স্থানীয়ভাবে তৈরি জুতার পাশাপাশি পাইকারি বাজারে চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করা জুতাও বিক্রি হয়। এসব জুতা খুচরা বিক্রেতা ও ডিলারদের মাধ্যমে সারাদেশে চলে যায়। এ ছাড়া এ্যাপেক্স, বাটাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতার একটা অংশও পাইকারি বাজারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। রেমিটেন্স বেতন-বোনাস ও ব্যক্তিগত তহবিলের টাকা ঈদ বাজারে ॥ ঈদ সামনে রাখে প্রবাসীরা আপন আত্মীয়-স্বজনের কাছে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এর পাশাপাশি সরকারী-বেসরকারী খাতের চাকরিজীবীরা হাজার হাজার কোটি টাকার বোনাস পেয়েছেন। এছাড়া ঈদ কেনাকাটায় যুক্ত হচ্ছে ব্যক্তিগত তহবিল এবং সাধারণ সঞ্চয়। সবমিলিয়ে লাখ লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য ও লেনদেন হবে ঈদ বাজারে। ইতোমধ্যে ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠাচ্ছেন দেশের বাইরে থাকা প্রবাসীরা। এতে ব্যাংকের রিজার্ভে এসেছে বৈদেশিক মুদ্রার জোয়ার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি এপ্রিল মাসের ২১ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ১৪০ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ২০ পয়সা) এ অর্থের পরিমাণ ১২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। এতে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ কোটি টাকার মতো রেমিটেন্স দেশে আসছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসের শেষে আয়ের পরিমাণ ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা। রেমিটেন্সের এই অর্থের সিংহভাগ ঈদ বাজারে ব্যয় করা হবে। কোন কোন বিক্রেতা বলছেন, ২০১৯ সালের ঈদ-উল-ফিতরের তুলনায় এবার বিক্রি বেড়েছে ২৫ শতাংশ। আবার কেউ কেউ বলছেন, বিক্রি বেড়েছে ৫০ শতাংশ। কোন কোন বিক্রেতা বিক্রির শতাংশিক প্রবৃদ্ধি জানাতে না পারলেও বিক্রি যে বেড়েছে তা জানিয়েছেন অকপটে। তবে বেশিরভাগ বিক্রেতার প্রত্যাশা ঈদের কেনাবেচায় এবার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে। আর ক্রেতারাও বলছেন, এবার তারা কেনাবেচায় কোন কার্পণ্য করছেন না। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা পরিবারের সবার জন্যই ঈদের কেনাকাটা করছেন। ইতোমধ্যে অনেকেই কেনাকাটা শেষ করে ফেলেছেন। মার্কেটে মার্কেটে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা।
×