ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তলিয়ে গেছে ৭০ হেক্টর জমির ধান

মেঘনায় পানি বাড়ছে, হাওড়ের ৩০ হাজার কৃষক আতঙ্কে

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ২০ এপ্রিল ২০২২

মেঘনায় পানি বাড়ছে, হাওড়ের ৩০ হাজার কৃষক আতঙ্কে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পাহাড়ী ঢলে মেঘনা নদীর পানি বাড়তে থাকায় ভৈরবের জোয়ানশাহী উপজেলার হাওড়ের কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। এ হাওড়ের সঙ্গে উপজেলার ৩০ হাজার কৃষকের পরিবার জড়িত রয়েছে। অন্যদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে হাওড়ের অনেক জমির ধান তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০ হেক্টর জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলায় নতুন করে আরও দুটি হাওড়ের প্রায় ১০০ হেক্টর বোরো ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। ভৈরবের জোয়ানশাহী উপজেলায় যে কোন সময় পানি ঢুকে তলিয়ে যেতে পারে শত শত একর বোরো ধান। পানির হাত থেকে ফসল রক্ষায় অস্থায়ীভাবে একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বাঁধটি মানসম্মত না হওয়ায় যে কোন সময় বাঁধ ভেঙে হাওড়ে পানি ঢোকার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। ভৈরবের পাশাপাশি জেলার হাওড় অঞ্চলের কৃষকরাও পানি বাড়ার আতঙ্কে তাদের কাঁচা-আধাপাকা ধান কেটে ফেলছেন। পাহাড়ী ঢলে কিশোরগঞ্জের ভৈরববাজার মেঘনা নদীসহ জেলার হাওড়ে বাড়ছে পানি। গেল ২৪ ঘণ্টায় হাওড়ের সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। কৃষকদের দ্রুত ফসল কেটে নেয়ার জন্য। কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শ্রীনগর, আগানগর ও সাদেকপুর ইউনিয়ন নিয়ে জোয়ানশাহী হাওড়টির অবস্থান। এ হাওড়ে সাধারণত প্রতি একর জমিতে ৬০ থেকে ৭০ মণ ধান উৎপাদন হয়। ফলে কৃষি অর্থনীতিতে হাওড়টি অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। জোয়ানশাহী হাওড়ের তিন হাজার একর জমিতে বছরে একবার বোরো ধান আবাদ করেন স্থানীয় কৃষকরা। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকদের স্বপ্নের ফসল বোরো ধান। এ হাওড়ের সঙ্গে উপজেলার ৩০ হাজার কৃষকের পরিবার জড়িত রয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, হাওড়ে ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকরা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও তারা রয়েছেন অবহেলিত ও বঞ্চিত। জোয়ানশাহী হাওড়ের মাঝে মাত্র ৩০ ফুট প্রস্থের একটি খাল রয়েছে। ওরাল খাল নামের এ খালটি মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। কিন্তু খালটিতে কোন স্লুুইসগেট নেই। এ কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানি হাওড়ে ঢুকে প্রায় বছরেই ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি, হাওড়ের ফসল রক্ষায় একটি স্লুইসগেট নির্মাণের। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পানিতে তলিয়ে গেছে ৭০ হেক্টর জমির ধান ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে হাওড়ের অনেক জমির ধান তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০ হেক্টর জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এদিকে, চলতি মৌসুমে নাসিরনগর উপজেলায় আবাদকৃত মোট ১৭ হাজার ৩১২ হেক্টরের মধ্যে ধান কাটা হয়েছে ২ হাজার ৬শ’ হেক্টর। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে তিতাস পাড়ের আকাশী হাওড়ও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয় কৃষকরা। জানা যায়, উপজেলার গোয়ালনগর, ভলাকুট, বুড়িশ্বর, নাসিরনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার হাওড়ের ধানী জমিসহ হরিপুর, কুন্ডা, গোর্কণ ও পূর্বভাগ ইউনিয়নের তিতাস নদীর তীরবর্তী আকাশী হাওড়ের অনেক জমির ধানও তলিয়ে গেছে। এতে করে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে হাঁটুপানি ও কোমর পানিতে নেমে আধাপাকা ধান কেটে ফেলছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত ৭০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে, স্থানীয় কৃষকদের হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে। দ্রুত পানি না নামলে আরও বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। তবে ফের পানি বেড়ে যাওয়ার ভয়ে কোন কোন জায়গায় কৃষকরা তাদের আধাপাকা ধান কাটছে। লাখাইয়ে পানির নিচে তলিয়ে গেছে ১০০ হেক্টর জমি ॥ হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলায় নতুন করে আরও দুটি হাওড়ের প্রায় ১০০ হেক্টর বোরো ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এ নিয়ে তিনদিনে তলিয়ে গেছে পাঁচ হাওড়ের দুই শতাধিক হেক্টর বোরো জমির আধাপাকা ধান। সোমবার ও মঙ্গলবার উপজেলার ১ নম্বর লাখাই ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর ও সন্তোষপুরে পানি প্রবেশ করে। এর আগে গত দুইদিনে ইউনিয়নটির শিবপুর, সুজনপুর ও বারচর হাওড়ের শতাধিক হেক্টর জমির আধাপাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে যায়। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, গত শনি ও রবিবার কালনী এবং মেঘনা নদীতে আসা জোয়ারের পানিতে লাখাই ও বামৈ ইউনিয়নে প্রায় ৬৫ হেক্টর জমি তলিয়ে যায়।
×