ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ে হেরে গেলেন মোশাররফ

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ২০ এপ্রিল ২০২২

ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ে হেরে গেলেন মোশাররফ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন দীর্ঘ সময় ধরে। সেই লড়াইয়ে অবশেষে পরাজিত হলেন মোশাররফ হোসেন রুবেল। মঙ্গলবার সকালে শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি ঘটলে হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। বিকেলে রাজধানীর এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাত্র ৪০ বছর বয়সেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন) এ বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার। ২০১৯ সালে প্রথম ব্রেন ক্যান্সার শনাক্ত হয় মোশাররফের। এরপর সিঙ্গাপুরে উন্নত চিকিৎসা ও সফল অস্ত্রোপচার এবং দেশে নিয়মিত কেমোথেরাপি নিয়ে সুস্থই হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি মাঠেও ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু গত বছরের শুরুতে অসুস্থ বোধ করলে নতুন করে পরীক্ষায় আবারও ব্রেন টিউমার শনাক্ত হয়। তারপর থেকে কেমোথেরাপিসহ চিকিৎসা চলমান ছিল তার। সর্বশেষ কয়েক সপ্তাহ আগে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) নিতে হয় তাকে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মোটামুটি সুস্থ হয়ে নিজ বাসায় ফিরেছিলেন ৩ দিন আগে। কিন্তু মঙ্গলবার সবাইকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিলেন মোশাররফ। অত্যন্ত কার্যকর বাঁহাতি অলরাউন্ডার ছিলেন মোশাররফ। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিলেন নিয়মিত পারফর্মার। মূলতক বাঁহাতি স্পিনে দুর্দান্ত এ বোলার ব্যাট হাতেও ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক বড় বড় ইনিংস খেলেছেন। সবমিলিয়ে কার্যকর একজন অলরাউন্ডারই ছিলেন তিনি। তবে টানা পারফর্ম করলেও জাতীয় দলে ডাক পাচ্ছিলেন না। অবশেষে তার সেই স্বপ্নও পূরণ হয় ২০০৮ সালে বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক অবসর নেয়ার পর। সে বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। ৩ ওয়ানডে খেলেই তারপর অবশ্য বাদ পড়েন এবং ৮ বছর পর ২০১৬ সালে আবার ফিরে ২ ওয়ানডে খেলেন। সবমিলিয়ে জাতীয় দলের জার্সিতে সবমিলিয়ে মাত্র ৫ ওয়ানডেই খেলেছেন তিনি। তেমন ভাল অবশ্য করতে পারেননি বলে জাতীয় দলে ক্যারিয়ারটা বড় হয়নি। ৫ ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে ২৬ রান করতে পেরেছেন এবং উইকেট নিয়েছেন ৪টি। এর মধ্যে সেরা বোলিংটা করেছেন মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর হওয়া সেই ম্যাচে ৮ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। এর ৬ দিন পর সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন তিনি জাতীয় দলের হয়ে। ৩ ওভারে ২৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করলেও জাতীয় দলে আর ডাক পাননি। কিন্তু ২০১৯ সালে ব্রেন টিউমার শনাক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত অপরিহার্য ক্রিকেটার হিসেবে দাপটের সঙ্গেই খেলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের সব ফরমেটে। ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল, ঢাকা বিভাগ ও বরিশাল বিভাগের হয়ে ১১২টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৩৩০৫ রান করেছেন ২৩.৯৪ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ও ১৬ ফিফটিতে। অপরাজিত ১২৫ তার সর্বোচ্চ। উইকেট আছে ৩৯২টি। সেরা ১০৫ রানে ৯ উইকেট। ১৯ বার ইনিংসে ৫৮ উইকেট নিয়েছেন। ১০৪টি লিস্ট ‘এ’ মর্যাদার ৫০ ওভারের ম্যাচে ২৪.৮৮ গড়ে ১৭৯২ রান করেন ৮ ফিফটিতে। সর্বোচ্চ ৮৮। এছাড়া উইকেট নিয়েছেন ১২০টি। সেরা ৫৭ রানে ৫ উইকেট। স্বীকৃত টি২০ খেলেছেন ৫৬টি, ৬০ উইকেটের পাশাপাশি আছে ৬২ রান। ২০০১ থেকে শুরু হওয়া পেশাদার ক্যারিয়ার ১৮ বছর স্থায়ী হয়েছে। কিন্তু ব্রেন টিউমার শনাক্ত হওয়ার কারণে আর ক্যারিয়ার লম্বা করতে পারেননি। ২০১৯ সালের মার্চে ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা শুরু করেন তিনি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে। সে সময় অনেক ক্রিকেটার, সংগঠক ও বিসিবি তার চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। সফল অস্ত্রোপচারে গ্রেড ৩ পর্যায়ের টিউমার অপসারণ করা হয় এবং কেমোথেরাপি নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। শুরু করেন মাঠের অনুশীলন। আবার ফিরবেন ক্রিকেটে এমন আশায় সবাই ছিলেন। কিন্তু গত বছর আবার নতুন করে টিউমার ধরা পড়ে সিঙ্গাপুরে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর। তৃতীয় মাত্রার সেই টিউমার যাতে আরও জটিল না হয় সেজন্য শুরু হয় কেমোথেরাপি। এবার নিজের যা আছে সেই অর্থ-সম্পদ দিয়েই চেষ্টা করেছেন চিকিৎসা ব্যয় চালানোর। সবমিলিয়ে গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত ২৪টি কেমোথেরাপি নিয়ে মোশাররফ একদম শারীরিকভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলেন। মানসিকভাবেও ভেঙ্গে পড়েন পারিবারিকভাবে আর্থিক টানাপোড়েনে। এ বছর জানুয়ারিতে আবারও শারীরিক অবনতির পর হাসপাতালে নেয়া হয়। তারপর থেকে চিকিৎসা নিতে থাকেন। অনেক ক্রিকেটার এবং প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তা দিতে থাকেন। কয়েক সপ্তাহ আগে শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যায় এবং তাকে আইসিইউতে নিতে হয়। কিন্তু সেখান থেকেও উন্নতি লাভ করেন শারীরিকভাবে। ১৫ এপ্রিল বাসায় ফেরেন। আগামী সপ্তাহে আবারও কেমোথেরাপি শুরু করার কথা ছিল মোশাররফের। নিজ বাসাতেই ছিলেন, কিন্তু মঙ্গলবার সকালে শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হলে হাসপাতালে নেয়া হয়। বিকেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চির বিদায় ঘটে মোশাররফের।
×