ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যানজট নিয়ন্ত্রণে আশাবাদ

নিউমার্কেটের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ২০ এপ্রিল ২০২২

নিউমার্কেটের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শীঘ্রই পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন মন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, রাজধানীর অসহনীয় যানজট নিরসনে আগামী দিনগুলোর জন্য বিশেষ কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে আগামী দু-একদিনের মধ্যে ঢাকার যানজট কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে বলে আশাকরি। মঙ্গলবার সচিবালয়ে আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখাসহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয় নিয়ে সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান। নিউমার্কেটের সংঘর্ষের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আশা করছি, ‘কিছুক্ষণের’ মধ্যেই এ ঘটনা কুলডাউন হবে। যারা এ ঘটনার জন্য দায়ী তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি আরও বলেন, নিউমার্কেট ও ঢাকা কলেজে যে সংঘর্ষ, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি এটা অনাহূত ঘটনা। একটা ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে তর্কাতর্কি থেকে মারামারি পর্যায়ে চলে আসছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী চরম ধৈর্যের সঙ্গে এগুলোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইটপাটকেল ছোড়াছুড়িতে অনেকেই আহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকজন সাংবাদিকও। ছাত্র ব্যবসায়ীসহ কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেছেন। আমাদের পুলিশ কমিশনার, আইজি সাহেব তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমাদের ঈদের মার্কেট চলছে। সব কিছুর দিকে নজর রেখে চরম ধৈর্যের সঙ্গে পুলিশ কমিশনার ও মেট্রোপলিটন কাজ করছে। তদারকি করছেন আইজি সাহেবও। রাত থেকে ঘটনা ঘটল, তাহলে কেন আরও আগে থেকে ব্যবস্থা নেয়া হলো না- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘নিউমার্কেট ও ঢাকা কলেজ এলাকাটা অনেক বিস্তৃত এলাকা। এলাকার কোন জায়গায় পুলিশ রয়েছে, কোন জায়গায় মারামারি হচ্ছে সেটাও একটা বিষয়। এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি ঘটনাস্থলে অনেক জটিল আকার ধারণ করেছে। টেকনিক্যাল কারণেই পুলিশ ছাত্রদের প্রতি সফট আচরণ করছে। এখানে গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’ সোমবার রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা চলে রাত আড়াইটা পর্যন্ত। মধ্যরাতে দুই পক্ষকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এরপর মঙ্গলবার সকালে দ্বিতীয় দফায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধের পর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টার পর নীলক্ষেত মোড়-সায়েন্সল্যাব এলাকায় থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। রাজধানীর অসহনীয় যানজট নিরসনে আগামী দিনগুলোর জন্য বিশেষ কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে আগামী দু-একদিনের মধ্যে ঢাকার যানজট কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, আমাদের ঢাকা শহরে অনেক উন্নয়নকাজ চলছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভারগুলোর কারণে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। এগুলোও যানজটের একটি বড় কারণ। এছাড়া দীর্ঘদিন পর কোভিড-১৯ মহামারী কাটিয়ে সবকিছু খুলেছে। আবার ঈদও এসে গেছে। সবাই এখন মার্কেটমুখী। ঘর থেকে বের হয়ে সবাই মার্কেট-শপিংসেন্টারগুলোর দিকে যাতায়াত করছেন। এসব কারণেও বাড়তি যানজট হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকার যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ বিভাগ যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। আগামী সাতদিনে তারা কী করবেন, এর একটি কর্মপদ্ধতিও বের করেছেন। আশা করি দু-একদিনের মধ্যে যানজট কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে। মন্ত্রী বলেন, ঈদের প্রাক্কালে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে পোশাকধারী পুলিশ সদস্যসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কাজ করছে। বিশেষ বিশেষ রাস্তা ও মোড়ে চেকপোস্ট স্থাপন এবং জাল টাকার বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, ঈদ-উল-ফিতরের ছুটিতে কূটনৈতিক পাড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং দেশের সব বন্দরে পুলিশের টহল জোরদার থাকবে। শ্রম মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে একটি সভা করেছি। সে সভায় বেতন-বোনাস পরিশোধ এবং ছুটির বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা বাস্তবায়নে আমরা জোর দিচ্ছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে যানজট নিরসনে পর্যায়ক্রমে ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে, এটিও আমাদের সিদ্ধান্তে এসেছিল। আমাদের বড় বড় শিল্প একসঙ্গে শ্রমিকদের ছুটি না দিয়ে পর্যায়ক্রমে কীভাবে দেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ করছি। ছুটি যদি একসঙ্গে দেয় তাহলে আমাদের হিসাবে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ ঢাকা ত্যাগ করবে। এরা শুধু শ্রমিক, এর সঙ্গে অন্য মানুষ তো আছেই। কাজেই বড়সড় যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। পর্যায়ক্রমে ছুটিগুলো দিলে যানজট কিছু নিয়ন্ত্রণ হবে। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তার জন্য বাস, ট্রেন ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। ঈদ উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে যানজট নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশের টহল এবং গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।
×