ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অসময়ে তিস্তার ভাঙ্গন দিশেহারা মানুষ

প্রকাশিত: ২১:০৫, ২০ এপ্রিল ২০২২

অসময়ে তিস্তার ভাঙ্গন দিশেহারা মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামে অসময়ে তিস্তার ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়েছে তিস্তা পারের মানুষ। একদম কাছে এসেছে নদী। যে কোন মুহূর্তে বাপ-দাদার বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যেতে পারে। আতঙ্কে কাটাচ্ছে তারা। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। এই তিন দিনে ভেঙ্গেছে ৬টি বাড়ি। হুমকিতে রয়েছে আরও ৭০/৮০টি বাড়ি। স্থানীয় পানি উন্নায়ন বোর্ডকে জানানোর পরেও কোন প্রতিকার মেলেনি। জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম ম-লপাড়া গ্রামের মোস্তাক আহমেদ (৫৬) জানান, ‘গতবার ভাঙ্গনে বাড়ি ঘর বিলীন হয়েছিল। গরু বিক্রি করে অন্তত এক কিমি দূরে নতুন বাড়ি করেছি, এবারও ভাঙ্গনের মুখে পড়েছি। জানি না কি হবে। ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম এলাকার সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম জানান, বর্ষা আসার আগেই হঠাৎ করে ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালাসহ আধাপাকা বোরো ধানের খেত। কুড়িগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে আগ্রাসী তিস্তা নদী। প্রায় ৪০ কিলোমিটারব্যাপী এই নদীটির ভাঙ্গন কবলিত বাম তীরে মাত্র ৫ কিলোমিটার জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাকি ৩৫ কিলোমিটার উন্মুক্ত নদীর অনেক জায়গায় চলছে এখন ভাঙ্গন। গত তিন দিনে বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিঘার পর বিঘা বোরো ধান, ফলদ ও কাঠের গাছসহ ভেঙ্গে যাচ্ছে বিল্ডিং বাড়ি। এখন হুমকিতে রয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার। গত কয়েক বছর ধরে তিস্তার ভয়াবহ আগ্রাসনে রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, মন্দির, ডাংরারহাট, রামহরি, পাড়ামৌলা ও গাবুর হালান গ্রামের একাংশ নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আরও গ্রামের পর গ্রাম। বসতভিটা ও জমি হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে বুক ফাটা কান্নায় ভারি হয়ে আসছে এখানকার আকাশ-বাতাস। মেগা প্রকল্পের নানান আশ^াসের পর নদী ভাঙ্গনের হুমকিতে থাকা মানুষ এখন জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিক জানান, আমার ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ড চরম হুমকিতে রয়েছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে গিয়েছি। তাদের কোন বাজেট নেই বলে তারা জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ আমাদের ভাঙ্গন কবলিত পরিবারগুলোকে বাঁচান। নাহলে আমরা বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত হব। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, হঠাৎ বৃষ্টির ফলে তিস্তায় অরক্ষিত এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। সমীক্ষা প্রকল্প অনুমোদন করা হলেও এখনো প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা। জরুরী ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ আছে জানালেও পাউবো থেকে ভাঙ্গন প্রতিরোধে নতুন ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় এখনও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়নি।
×