ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাইকারি বেচাকেনায় ধীরগতি, খুচরা তুঙ্গে

ধনী গরিব সবাই ছুটছে ঈদবাজারে

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ১৯ এপ্রিল ২০২২

ধনী গরিব সবাই ছুটছে ঈদবাজারে

রহিম শেখ ॥ দেখতে দেখতে পার হয়ে গেল রোজার অর্ধেক সময়। হাতে গোনা কদিন বাদেই ঈদ-উল-ফিতর। তাই ধনী-গরিব সবাই মিলে ছুটছেন ঈদ কেনাকাটায়। চলছে জমজমাট বেচাকেনা। ক্রেতারা পছন্দের পোশাকটি কিনতে ভিড় করছেন রাজধানীর বিপণি বিতান, ফ্যাশন হাউস, শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে। কেনাকাটায় সবচেয়ে এগিয়ে নারী ও ফ্যাশন সচেতন তরুণীরা। পিছিয়ে নেই পুরুষ ও হাল আমলের তরুণরা। শপিংয়ে বড়দের সঙ্গে শামিল হচ্ছে ছোটরাও। এখন পাইকারিতে বেচাকেনা ধীরগতি হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি তুঙ্গে। বিক্রেতারা বলছেন, রমজানের শুরুতে বেচাকেনা জমে না উঠলেও এখন বেচাবিক্রি ভাল হচ্ছে। এদিকে ঈদ বাজারে যানবাহনের বাড়তি চাপে দীর্ঘ জ্যামে প্রতিদিনই নাকাল হতে হচ্ছে ক্রেতাদের। দিনের প্রায় সবটুকু সময় প্রচ- খরতাপের মধ্যে ভোগান্তির সীমারেখা পাড়ি দিয়ে সবাই চেষ্টা করেছেন সাধ আর সাধ্যের সবটুকু দিয়ে ঈদের কেনাকাটায় ভালো পণ্যটি নিয়ে ঘরে ফিরতে। আজ মঙ্গলবার রমজানের ১৭তম দিন। ইতোমধ্যে মাসব্যাপী রমজানের অর্ধেকের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। আর কদিন পরেই মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। আর এ উৎসবের সঙ্গে নতুন পোশাকের সংযোগ নিবিড়। রাজধানীর অভিজাত শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাথেও এখন ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়। সাধ আর সাধ্যের সবটুকু দিয়ে ধনী-গরিব সবাই এখন ঈদের কেনাকাটায় মহাব্যস্ত। প্রায় সব বিপণিবিতানগুলোতে অনেক রাত পর্যন্ত চলেছে বিকিকিনি। তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি ভিড় শাড়ি ও থ্রি পিসের দোকানে। ভারতীয় চলচ্চিত্র ও সিরিয়ালের নামে এবারও মেয়েদের পোশাক নিয়ে মাতামাতি চলছে ঈদ বাজারে। ক্রেতারাও খুঁজে ফিরছেন এসব ড্রেস। এছাড়া দেশী কাপড় ও ডিজাইনারদের তৈরি পোশাকের বুটিক হাউসগুলোতে ভিড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে। পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, শার্ট ও জিন্স প্যান্টের দোকানেও বেশ ভিড়। পা ফেলার জায়গা নেই শিশুদের পোশাক ও খেলনা সামগ্রী, কসমেটিক্স ও গহনার দোকানেও। ভিড় বাড়ছে জুতার দোকানে। বাদ নেই ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানও। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, চাঁদনী চক, রাপা প্লাজা, এ আর প্লাজা, এলিফ্যান্ট রোডের দোকান, ফার্মগেটের সব মার্কেট, ফুটপাথ, গুলিস্তানের পুরো এলাকা, মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, শাহ আলী মার্কেট, খিলক্ষেতের রাজউক ট্রেড সেন্টার, উত্তরার নর্থ টাওয়ার, রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বিপণিবিতান ও মহল্লার বুটিকশপ ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসেবে দেশে ২৫ লাখ দোকান, শপিংমল, বাণিজ্যবিতান রয়েছে। এর মধ্যে বড় দোকানের সংখ্যা ২০ লাখ। এর সঙ্গে ফুটপাথসহ ঈদ উপলক্ষে আরও প্রায় ৫ লাখের বেশি ছোট ছোট দোকান বসে এই ঈদ মৌসুমে। ঈদে অন্য সময়ের চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশি লেনদেন হয় এসব দোকানগুলোতে। বিশেষ করে ঈদের বাজারে সবচেয়ে বড় অংশজুড়েই রয়েছে বস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী। বস্ত্রের মধ্যে রয়েছে শার্ট, প্যান্ট, পায়জামা, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, শাড়ি, লুঙ্গি ও টুপি ইত্যাদি। এরপর রয়েছে জুতো, প্রসাধনী, স্বর্ণালঙ্কার। এসব অধিকাংশ দোকানে ১৫ রমজানের পর থেকে বেচাকেনা পুরোপুরি জমে উঠেছে। বসুন্ধরা সিটির দর্জিবাড়ির বিক্রয়কর্মী রেদোয়ান জানান, ছেলেরা বারবার মার্কেটে আসতে চান না। তাই একবারেই কেনাকাটা সারতে চান। ছুটির দিনগুলোতেই আসেন ছেলেরা। ছেলেদের পাঞ্জাবির দাম এসব দোকানে দুই হাজার ৬০০ থেকে পাঁচ টাকা হাজার পর্যন্ত। জিন্স প্যান্টের দাম দেড় থেকে ছয় হাজার টাকা। ‘দেশীদশের দোকানগুলোর পাঞ্জাবির দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। কেনাকাটা, বিনোদন আর ভোজনবিলাসিতা- এই তিনটির সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে যমুনা ফিউচার পার্কের। দেশের প্রায় বড় বড় ফ্যাশন হাউস, কাপড়ের দোকান, জুতার দোকান, সুগন্ধিসহ এ মার্কেটে রয়েছে বিদেশের নামীদামী ব্র্যান্ডের আউটলেট। সোমবার আড়ং, ইনফিটিনিটি, ক্যাটস্ আই, নবরূপা, ইয়েলো, এক্সটেসি, রিচম্যান, স্টেশন ২১ ও মড, ইয়োলো সাদাকালোসহ প্রায় সব দোকানে বিক্রয়কর্মীদের ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে। এখন শিশু ও মেয়েদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে বেশি। বারিধারার বাসিন্দা মনিরা জামান জানান, এক ছাদের নিচে সব আয়োজন থাকায় শপিং করে ভাল লাগছে। কেনাকাটার পাশাপাশি বাচ্চাদের খেলাধুলা এমনকি বড়দের বিনোদনের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। এদিকে রাজধানীর গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ধানম-ি হকার্স ও নিউমার্কেটে ঈদ উপলক্ষে বেশি বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় হিন্দি ছবি, সিরিয়াল ও নায়িকাদের নামে ট্যাগ করা পোশাক। ক্রেতাদের অভিযোগ, দামের সঙ্গে শিশুদের পোশাকের মানের সামঞ্জস্য নেই। আর বিক্রেতারা বলছেন, পোশাকের সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বাড়তি। আজিমপুর থেকে আশিকুর রহমান নামে একজন ঈদের কেনাকাটার জন্য তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছেন নিউমার্কেটে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এর আগেও এই মার্কেটে এসেছি। ঈদে শিশুদের পোশাকের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় কাপড়ের মান নেই। পোশাক কিনতে গিয়ে বাজেটে হিমশিম খাচ্ছি। বোরকা পরিহিত এক মধ্যবয়সী নারীকে দেখা যায় তার এক শিশু সন্তানকে ঈদের পোশাক কিনে দেয়ার জন্য বিভিন্ন দোকানে ঘোরাঘুরি করছেন। তিনি বলেন, প্রতি বছরই আমি আমার বাচ্চাদের জন্য ঈদের কাপড় কিনি। তবে এবার কাপড়ের দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। এছাড়া নিউমার্কেটের ইমিটেশন গহনার দোকানগুলোতে তরুণীদের ভিড়ও আগের তুলনায় বেড়েছে। পোশাক ও শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে গহনা কিনছেন হাল আমলের তরুণীরা। আজিমপুর থেকে নিউমার্কেটে আসা গৃহবধূ রুবাবা ইসলাম জানালেন, পুরান ঢাকায় অনেক বড় বড় দোকান আছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমরা নিউমার্কেটে কেনাকাটা করেছি। এবার দাম একটু বেশি। তবে অনেক চেনা দোকান আছে। ফুটপাথেও ভিড় ॥ ‘দেইখ্যা লন, বাইছ্যা লন এক দাম দেড়শ’। রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউর ফুটপাথ ধরে এমন সেøাগান এখন নিত্যদিনের। সারি সারি স্টল সাজিয়ে বাহারি পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। প্রতিটি স্টলেই উপচেপড়া ভিড়। শুধু গুলিস্তান নয়, রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর ও দক্ষিণ গেট, মতিঝিলের শাপলা চত্বর, সেগুনবাগিচা, মৌচাক, ফার্মগেট ও মিরপুরে ১০ গোলচত্বর ও ১ নম্বর ফুটপাথ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্রই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়।
×