ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী ২৪ এপ্রিল উদ্বোধন করবেন

অগ্নি নির্বাপণে প্রস্তুত নবনির্মিত ৪০ ফায়ার স্টেশন

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ১৯ এপ্রিল ২০২২

অগ্নি নির্বাপণে প্রস্তুত নবনির্মিত ৪০ ফায়ার স্টেশন

ফজলুর রহমান ॥ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ছিল ২০৬টি। সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ফায়ার স্টেশনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে আরও ২৫০টি ফায়ার স্টেশন। দুটি প্রকল্পের অধীনে ২০১২ সালে আরও ৯৫টি ফায়ার স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে ৪০টি ফায়ার স্টেশনের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। বাকি নির্মাণাধীন থাকা ৫৫টি ফায়ার স্টেশনের কাজ জুনে শেষ হবে। নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার স্টেশন আগামী ২৪ এপ্রিল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলাসহ জনসেবামূলক কাজের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে। ওইদিন গণভবন থেকে বেলা ১১টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মোঃ মোকাব্বির হোসেন ও ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাজ্জাদ হোসাইনসহ অন্য কর্মকর্তারা। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২৫টি (সংশোধিত-৪৬টি) উপজেলা সদর/স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন’ প্রকল্পে ও ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা সদর/স্থানে ১৫৬টি (সংশোধিত-১৪৩টি) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন’ প্রকল্পের ৪০টি ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এই দুই প্রকল্পের অধীনে নবনির্মিত ও উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা ৪০টি ফায়ার স্টেশন হলো- টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ফায়ার স্টেশন, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, দৌলতপুর ও সাটুরিয়া ফায়ার স্টেশন, গাজীপুরের কাপাসিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর (পুনর্নির্মাণ) ও সিরাজদিখান, মাগুরা সদর (পুনর্নির্মাণ), কিশোরগঞ্জের নিকলী স্থল কাম-নদী, ঢাকার কল্যাণপুর, জামালপুর সদর ও সরিষাবাড়ী (পুনর্নির্মাণ), যশোর সদর ও ঝিকরগাছা (পুনর্নির্মাণ), যশোর সেনানিবাস, যশোরের চৌগাছা ও কেশবপুর, বাগেরহাটের মোল্লাহাট, ফরিদপুর সদর (পুনর্নির্মাণ), চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, খাগড়াছড়ির পানছড়ি, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, কিশোরগঞ্জের ইটনা, অষ্টগ্রাম, হোসেনপুর, মিঠামইন ও পাকুন্দিয়া, মেহেরপুরের মুজিবনগর, রাজবাড়ীর কালুখালী, সাতক্ষীরার দেবহাটা, নোয়াখালীর কবিরহাট, বিবাড়ীয়ার বিজয়নগর, বান্দরবানের থানচি ও রামু, খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, নেত্রকোনার পূর্বধলা, ময়মনসিংহের গৌরীপুর এবং মাদারীপুরের কালকিনি ফায়ার স্টেশন। বর্তমানে দেশে সর্বমোট চালু ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৪৫৬টি। ৪০টি নবনির্মিত ফায়ার স্টেশন যোগ হলে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৯৬টি। ইতোমধ্যে ৪০টি ফায়ার স্টেশনে জনবল নিয়োগ ও অগ্নি নির্বাপণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ প্রদান করা হয়েছে। ৪০টি ফায়ার স্টেশন চালুর মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর নতুন করে আরও সক্ষমতা অর্জন করল। এতে অগ্নি দুর্ঘটনা রোধ, জনজীবন ও জনগণের সম্পদ রক্ষা বহুলাংশে কমে আসবে। নতুন ফায়ার স্টেশন হওয়ায় খুশি সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, আগে আগুন লাগলে নিজেরাই নির্বাপণ করতেন। ফায়ার স্টেশন দূরে হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে অনেকটা সময় লেগে যেত। আর এতে আগুনে প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হতো। নতুন ফায়ার স্টেশন হওয়ায় এই আশঙ্কা মন থেকে দূর হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের। তাদের মনে এখন একটাই ভরসা, শুধু অগ্নিকা-ে নয়; প্রাকৃতিক দুর্যোগ, লঞ্চ ডুবিসহ যেকোন দুর্ঘটনায় অল্প সময়ে ও খুব সহজে সেবা মিলবে ফায়ার সার্ভিসের। কল্যাণপুর নতুন বাজার এলাকার বেলতলা বস্তির বাসিন্দা হেমায়েত বলেন, আমাদের এলাকায় ফায়ার স্টেশন হয়েছে। এটা তো ভাল খবর। গত ২০ মার্চ ওই বস্তিতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। সেই অগ্নি দুর্ঘটনার কথা মনে করে হেমায়েত বলেন, তখন এই ফায়ার স্টেশনের সদস্যরা এগিয়ে এসেছেন। না হলে আরও ক্ষতি হতো। ফায়ার সার্ভিস তো নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে। যাক, আমাগো ভালই হইব। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে ‘এ’ শ্রেণীভুক্ত স্টেশন, ’বি’ শ্রেণীভুক্ত স্টেশন, ‘বি’ স্থল কাম নদী, ‘সি’ শ্রেণীভুক্ত স্টেশন, নদী ফায়ার স্টেশন রয়েছে। ‘এ’ ক্যাটাগরির ফায়ার স্টেশনে জনবল থাকেন ৩৫ জন। একজন সিনিয়র স্টেশন অফিসার থাকেন ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রধান। আর ‘বি’ ক্যাটাগরির ফায়ার স্টেশনের ইনচার্জ থাকেন একজন স্টেশন অফিসার। এছাড়া ফায়ার ফাইটার, ড্রাইভার, বাবুর্চি, ক্লিনারসহ জনবল থাকেন মোট ২৭ জন। কোন কোন ফায়ার স্টেশনে ডুবুরিও রাখা হয়। নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার স্টেশনে ‘এ’ এবং ‘বি’ এই ক্যাটাগরির ফায়ার স্টেশন রয়েছে। হাজারেরও বেশি জনবলও ইতোমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে স্টেশনগুলোতে। রাজধানীর কল্যাণপুরে নবনির্মিত ফায়ার স্টেশনটি ‘এ’ ক্যাটাগরির। এই স্টেশনের ইনচার্জ সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোঃ নাজিম উদ্দিন সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা অনেক আগ থেকেই অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করেছি। ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর পুরোদমে কাজ শুরু হবে। উদ্বোধনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। নবনির্মিত কয়েকটি ফায়ার স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ফায়ার স্টেশনগুলো সুসজ্জিত করে রাখা হয়েছে। নতুন স্টেশনগুলোর রং দূর থেকেই দৃষ্টি কাড়ে। অনেক উৎসুক জনতা ছবি ও সেলফি তুলছেন। গতি, সেবা ও ত্যাগ নিয়ে এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায় স্টেশনগুলো। জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাজ্জাদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার স্টেশন আগামী ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। এতে নতুন করে ৪০টি ফায়ার স্টেশন যোগ হতে যাচ্ছে। ফলে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। জনগণ ফায়ার সার্ভিসের সার্বিক সেবা দ্রুত পাবে। দুই প্রকল্পের আরও কিছু সংখ্যক ফায়ার স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। সেগুলোর কাজ জুনে শেষ হবে। ডিজি বলেন, ফায়ার সার্ভিস সব সময় মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা ৪০টি ফায়ার স্টেশন আরও আগে নির্মাণ করা হলে ওই অঞ্চলের মানুষ আগেই এই সেবা পেত। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে নির্মিত এই ৪০টি ফায়ার স্টেশনের সেবা দেশের জনগণ পেতে যাচ্ছে। তবে জনগণ যাতে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করে, সেই আশাই করছেন ডিজি। কেননা, কোথাও অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটলে বিনা কারণে মানুষ সেখানে ভিড় জমায়। এতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হয়। তাই মানুষকে এক্ষেত্রে সচেতন ও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন ডিজি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ফায়ার সার্ভিসের জনবল ছিল ৬ হাজার ১৭৫ জন। বর্তমানে মোট জনবলের সংখ্যা ১৩ হাজারেরও বেশি। এই জনবল ২৫ হাজারের অধিক করার জন্য অর্গানোগ্রামের কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এই জনবল নিয়োগের অনুমোদনের ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া সহায়তার আওতা বাড়বে। রাষ্ট্রীয় ভিআইপিদের নিরাপত্তা বিধান, টহল ডিউটি, জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ রাষ্ট্রবিরোধীদের অপতৎপরতা রোধ এবং জনসেবামূলক কাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফায়ার সার্ভিস ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এক সময় ফায়ার সার্ভিসের নয়তলা পর্যন্ত অগ্নি নির্বাপণের সক্ষমতা ছিল। বর্তমানে সেই সক্ষমতা ২২তলা পর্যন্ত অর্জন করেছে। বাড়ানো হয়েছে বিশেষ গাড়ির সংখ্যাও। প্রতিটি ফায়ার স্টেশনে পর্যায়ক্রমে এ্যাম্বুলেন্সও দেয়া হচ্ছে। সড়কে বা নদীতে যেখানেই দুর্ঘটনা দেখেছি সেখানেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেবা দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি চালু হলে আমাদের কর্মীদের দেশেই উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব। শুধু তাই নয়, বিদেশ থেকেও লোকজন এসে এখানে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন, এখানে সেই ক্যাপাসিটি থাকবে।
×