ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে পৃথক রাজ্য প্রতিষ্ঠার দাবি

পাহাড়ে গড়ে উঠছে সশস্ত্র সংগঠন

প্রকাশিত: ২১:১১, ১৯ এপ্রিল ২০২২

পাহাড়ে গড়ে উঠছে সশস্ত্র সংগঠন

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান ॥ তিন পার্বত্য জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে পৃথক রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে এবার পাহাড়ে ৩ হাজার সদস্য নিয়ে শসস্ত্র সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। আগামী বর্ষা মৌসুমে এই সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করবে। জানা যায়, পাহাড়ের বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, ¤্রাে ও খিয়াং এই ৬টি সম্প্রদায়কে অনগ্রসর ও শান্ত স্বভাবের সম্প্রদায় হিসেবে গণ্য করা হলেও এবার তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে। ’৪৭-এর উপ-মহাদেশের বিভক্তি ও ’৭১ পরবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সশস্ত্র আন্দোলনের ফলে পার্বত্য জেলা ছেড়ে ভারতের মিজোরাম, লংতলাই, লুংলেই ও মামিট জেলায় দেশান্তরি হয় খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী এই সম্প্রদায়ের অনেকে। তাদের অনেকে এখন আর্থিক সহায়তা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই কুকিচিন রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র আন্দোলনে নামছে। আরও জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূখ- নিয়ে ‘কুকিচিন রাজ্য’ নামে একটি পৃথক রাজ্যের দাবিতে (কেএনএফ) এবং এর সশস্ত্র শাখা কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) মনে করে, পাহাড়ের ৯টি উপজেলা তাদের পূর্ব-পুরুষদের আদি নিবাস। ব্রিটিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দখলদাররা অনুপ্রবেশ করে এবং এই ভূমি দখল করে নেয়। ফলে তারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়। কেএনএফের অভিযোগ, বিভিন্ন মহল তাদের ভূমিতে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। জেএসএসসহ অন্য সংগঠনগুলো কুকিচিন জনগোষ্ঠীর ভূমি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করে চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুমসহ নিরীহ মানুষদের ভীতির মধ্যে রেখেছে। কেএনএফ প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক জলি মং মার্মা বলেন, কোন সশস্ত্র সংগঠনই পার্বত্য জেলার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এ সংগঠনের সভাপতি নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে। জেএসএসের ছাত্র সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা মহানগর শাখা ও কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। খাগড়াছড়ির চেঙ্গী স্কোয়ারের পাশে এম এন লারমার ভাস্কর্যটির অন্যতম কারিগর ছিলেন। কুকিচীন জাতীয় ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (কেএনডিও) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। কেএনএফের সশস্ত্র তৎপরতা সম্পর্কে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, এই সংগঠনের শসস্ত্র কর্মকা-ের বিষয়টি আমাদের জানা নেই, আমরা খতিয়ে দেখছি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করলেও পাহাড়ে শান্তি ফিরেনি। পার্বত্য জেলায় জেএসএস (মূল), ইউপিডিএফ (মূল), জেএসএস (সংস্কার) এবং ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও মগ পার্টি নামে ৫টি সংগঠনের সংঘাত ও অপরাধমূলক কর্মকা-ে অশান্ত পাহাড়, সেই সঙ্গে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) আত্মপ্রকাশ পাহাড়ে সংঘাত আরও বাড়াবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। পটিয়ায় গহীন পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানা নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, চট্টগ্রাম থেকে জানান, গহীন পাহাড়ে চট্টগ্রামের পটিয়ায় সন্ত্রাসীদের আস্তানার খোঁজে র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালিয়েছে। সোমবার সকালে র‌্যাব ও পুলিশ উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নের মৌলভীবাজার হয়ে গহীন পাহাড়ে এ অভিযান পরিচালনা করে। একই সময়ে পটিয়া সীমান্তের পার্বত্য চট্টগ্রাম বান্দরবানের সেনাবাহিনীর ডলুপাড়া ক্যাম্পের একটি টিম অভিযান চালায়। তবে খুঁজে পায়নি উপজাতি সন্ত্রাসীদের এ আস্তানা। পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়ার পাহাড় নিয়ন্ত্রণ রাখতে দীর্ঘদিন ৩ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সক্রিয়। তারা প্রতিনিয়ত পাহাড়ের বাগান মালিক ও কাজে যাওয়া শ্রমিকদের জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি চাকমা গ্রুপ ও একটি বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের সমন্বয়ে গঠিত সন্ত্রাসী গ্রুপ। তারা জলপাই কালারের পোশাক ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করে থাকে। গত ১২ এপ্রিল পটিয়া উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নের মৌলভী বাজার এলাকার পাহাড় থেকে সন্ত্রাসীরা ১২ জনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে পরে ছেড়ে দিয়েছে। এরপর র‌্যাব, পুলিশ ও সীমান্তের বান্দরবানের ডলুপাড়া ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে বান্দরবান সীমান্তে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেনাবাহিনীর ডলুপাড়া ক্যাম্পের মেজর মোহাম্মদ তাহমিদ ও পটিয়া সীমান্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) কবির আহমদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) তারিক রহমান, র‌্যাব-৭ এর পরিদর্শক নূরে আলম ও পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার। পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার জানিয়েছেন, পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা এলাকার কৃষক ও সাধারণ লোকজনকে অপহরণ এবং মুক্তিপণ আদায়ের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। যার কারণে র‌্যাব, পুলিশ ও পটিয়া সীমান্তের বান্দরবানের ডলু ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর টিম একই সময়ে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে সন্ত্রাসীদের আস্তানা খুঁজে পাননি। অভিযান চলমান রাখা হবে বলে জানান।
×