ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংশোধিত আইনের খসড়া আজ মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদ- ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাজারে মিনিকেট-নাজির শাইলের অস্তিত্ব থাকবে না

ছলচাতুরী চলবে না ॥ খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন মজুদ আইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ২২:৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২২

ছলচাতুরী চলবে না ॥ খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন মজুদ আইন হচ্ছে

তপন বিশ্বাস ॥ সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদন্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২২ করতে যাচ্ছে সরকার। এই আইনে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি প্রণয়ন করা হলে অবৈধ মজুদ, পুরনো চাল পলিশিং করে বিক্রি করা, চাল ছেঁটে চিকন করাসহ নানা প্রকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এমনকি মিনিকেট-নাজির শাইল নামক চাল আর বাজারে থাকবে না। এতে ক্রেতা প্রতারণা থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি চালের বাজারও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সংশোধিত আইনটির খসড়া আজ মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, আইনটিতে ১২টি ধারা এবং ৪৭টি উপধারা রয়েছে। এতে বিভিন্ন প্রকার অপরাধের বিধান রাখা হয়েছে। উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে অপরাধ ভিন্ন ভিন্ন করে সন্নিবেশ করা হয়েছে। উৎপাদনসংক্রান্ত অপরাধ ॥ এর মধ্যে রয়েছে- খাদ্যদ্রব্যের মধ্য থেকে কোন স্বাভাবিক উৎপাদনকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অপসারণ করে আকর্ষণীয় করে ক্রেতার কাছে বিক্রি করে তার আর্থিক বা স্বাস্থ্যগত ক্ষতিসাধন করা। কোন স্বীকৃত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের বস্তা বা মোড়কের ওপর জাতের নাম উল্লেখ না করা। স্বীকৃত জাতের কোন প্রকার উপজাত বা কাল্পনিক নামের কোন খাদ্যশস্য বিক্রি করা। এমন কাজ ক্রেতাকে প্রতারণা ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা বলে বিবেচিত হবে। মজুদসংক্রান্ত অপরাধ ॥ এতে বলা আছে- ব্যক্তিগত ভোগের উদ্দেশ্য ছাড়া এবং সরকার ঘোষিত পরিমাণের বেশি পরিমাণ খাদ্যশস্য পরিবহন, যান বা গুদামে মজুদ রাখা। ব্যবসায়িক কাজে মজুদকৃত খাদ্যশস্যের হিসাব যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হওয়া। খাদ্যদ্রব্য মজুদ ও ক্রয়-বিক্রয় করতে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে লাইসেন্স প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হওয়া। পুরাতন চাল বা অন্যান্য খাদ্যশস্য অবৈধভাবে গুদামে মজুদ রেখে অসৎ উদ্দেশ্যে পলিশিং বা অন্যান্য রূপে মিশ্রণ করে তা সরকারী গুদামে সরবরাহ করা। সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের সময় সরকারী গুদামে রাখা চাল বা গম বা অবৈধভাবে সংগ্রহ করে অথবা দেশের উৎপাদিত চাল-গমের পরিবর্তে আমদানি করা চাল বা গম সরকারী গুদামে সরবরাহ করা। সরবরাহসংক্রান্ত অপরাধ ॥ এতে বলা আছে-কর্মসূচীর নামাঙ্কিত বা বিতরণকৃত সিল বা বিতরণ করা হয়েছে এমন চিহ্ন ছাড়া সরকারী গুদাম থেকে খাদ্যশস্য ভর্তি বস্তা গ্রহণ, স্থানান্তর, মজুদ, হাতবদল বা পুনরায় বিক্রি করা। সরকারী গুদামে বিতরণকৃত সিলযুক্ত বা বিতরণ করা হয়েছে এমন চিহ্নযুক্ত বস্থায় বা ব্যাগে খাদ্যদ্রব্য ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয়কালে এই সম্পর্কীত লেনদেনের উপযুক্ত দলিল প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হওয়া। সরকারী গুদামে পুরাতন বা বিতরণ সিলযুক্ত বা বিতরণ করা হয়েছে এমন চিহ্নযুক্ত বস্তা বা ব্যাগ সরকারী গুদামে সরবরাহ করা। বিতরণসংক্রান্ত অপরাধ ॥ এর মধ্যে রয়েছে- সরকারের কোন কর্মসূচীর আওতায় বিধি মোতাবেক নিযুক্ত ব্যবসায়ী বা ডিলার বা প্রকল্প চেয়ারম্যান বা অন্য কোন ব্যক্তির মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য বিতরণকালে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম খাদ্যদ্রব্য কোন অবস্থায় বিতরণ করা। নির্ধারিত উপকারভোগী ব্যতীত বা তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা পরিবার ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি বা পরিবারের নিকট খাদ্যশস্য বিতরণ করা বা বিতরণ না করে ভুয়া মাস্টার রোল বা বিতরণ তালিকা সৃজন করা। কর্মসম্পাদনসংক্রান্ত অপরাধ ॥ এই আইনের অধীনে শ্রমিক, কর্মচারী, ঠিকাদার, মিলার, ডিলার বা অন্য কোনভাবে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন বা এ সংক্রান্ত কোন কর্মসম্পাদনে নিজে বিরত থাকা অথবা সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তিকে তা কর্তব্য পালনে বিরত থাকতে বাধ্য করা বা বিরত থাকতে প্ররোচিত করা অথবা তাদের মধ্যে অসন্তোষ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা বা দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করা। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন সম্পর্কীয় কোন মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ অথবা খাদ্যদ্রব্যের পর্যাপ্ততা সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা। কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীনে অপরাধ করলে অনুর্ধ ৫ বছর করাদন্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এই আইনে বিচার কার্য পরিচালনার জন্য সরকার সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালত হিসেবে র্নিধারণ করবে। এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ যে খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালতের স্থানীয় অধিক্ষেত্রে সংঘটিত হবে, সাধারণভাবে সেই আদালতেই তার বিচার অনুষ্ঠিত হবে। জব্দকৃত খাদ্যদ্রব্য নিষ্পত্তিকরণ ॥ এই আইনের আওতায় সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট জব্দকৃত খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে দ্রুত পচনশীল হলে স্বীয় বিবেচনায় আলামত হিসেবে প্রয়োজনীয় পরিমাণ নমুনা সংরক্ষণ করে অবশিষ্ট পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে নিলামে বিক্রির আদেশ প্রদান করবেন অথবা পরিবেশ আইন পরিপালনপূর্বক বিনষ্টকরণ বা নিষ্পত্তির আদেশ প্রদান করবেন। দ্রুত পচনশীল না হলে আলামত হিসেবে প্রয়োজনীয় পরিমাণ নমুনা সংরক্ষণ করে অবশিষ্ট পরিমাণ সর্বোচ্চ ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে নিলামে বিক্রির মাধ্যমে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করার আদেশ প্রদান করবেন অথবা আদালত স্বীয় বিবেচনায় যা উপযুক্ত বলে মনে করবেন সে প্রকার আদেশ দেবেন।
×