ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশে নারী পাইলট

প্রকাশিত: ২২:৪০, ৩ এপ্রিল ২০২২

পুলিশে নারী পাইলট

বাংলাদেশের উন্নয়নের বহুমাত্রিক অগ্রগামিতায় অর্ধাংশ নারীর এগিয়ে চলা এখন দৃশ্যমান। ক্ষুদ্র পারিবারিক আঙ্গিনা থেকে বৃহত্তর সামাজিক বলয়ে নারীদের জোরালো অভিগমন দেশ ও জাতির জন্য এক অনন্য গৌরব। এক সময়ের গৃহিণী নারীর আজ যুগের দাবিতে সব ধরনের পেশায় সম্পৃক্ত হতে পেছনের দিকে তাকাচ্ছে না। শিক্ষকতা এবং চিকিৎসক হিসেবে নিজেদের ভাবতে পছন্দ করতেন নারীরা। কিন্তু আধুনিকতার নির্মাল্য এবং প্রযুক্তির অবাধ সম্প্রসারণে নারীদের চেতনা যেমন অনেকখানি এগিয়ে গেছে, তেমনি বিভিন্ন রকম ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় যুগের অগ্রগামী ধারায় অভিষিক্ত হচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছাড়াও উদ্যোক্তা তৈরিতেও যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যোগ দিয়ে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীতেও তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে। পুলিশে পদস্থ কর্মকর্তার আসন অলঙ্কৃত করতে বিসিএসে সফল নারীরা আর মোটেও ভাবছেন না। তেমনি একজন লড়াকু ও আত্মপ্রত্যয়ী নারী ফাতেমা-তুজ-জোহরা। তিনি পুলিশের এ্যাভিয়েশন উইংয়ের প্রথম এবং একমাত্র নারী সদস্য যিনি প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ে একাই প্রথম শূন্যে ওড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন। পুলিশের আরও ৩ সদস্য এই প্রশিক্ষণে অংশ নেন। সব মিলিয়ে মোট ১০ জন আর্মি এ্যাভিয়েশন স্কুলে গত জুলাই মাস থেকে এই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে বিরতিহীনভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতায় এগিয়ে যাচ্ছেন। দৃঢ় প্রত্যয়ী ফাতেমা তার কোর্সের সব সঙ্গীকে পেছনে ফেলে প্রতিটি ধাপ সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করে প্রথম স্থানে চলেও আসেন। বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষায়ও সতীর্থদের অতিক্রম করে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করেছেন। এককভাবে পুরো রানওয়ে চত্বর উড়োজাহাজ চালিয়ে ঘুরে এসেছেন দশজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তবে একা প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ে শূন্যে ওড়ার অভিজ্ঞতা শুধু ফাতেমা- তুজ-জোহরার। স্বপ্নের মতো শূন্যে ওড়াটা অনন্য এক সফলতাই শুধু নয়, বরং আনন্দে আপ্লুত হয়ে নিজেকে যোগ্য করে তোলাও এক বিরাট অর্জন। আত্মবিশ্বাস আর অনন্য দৃঢ়তায় চার সিটের প্রশিক্ষণ বিমানটি একাই চালিয়ে শূন্যে প্রদক্ষিণ করা যেন স্বাপ্নিক আবিষ্টতা। ঘোর কেটে গেল যখন মাটিতে পা রাখলেন। বড় ধরনের সফলতায় স্বস্তির নিশ্বাসও নিলেন প্রাণভরে। ১০ জনের এই টিমে তিনি একাই নারী। তেমন অভাবনীয় অনুভূতিও ভেতর থেকে দারুণভাবে নাড়িয়ে দেয়। তবে বলতে দ্বিধা করেননি নারী হিসেবে আলাদা কোন সুযোগ নেয়ার মতো কিছু ছিল না। অন্য ৯ জন পুরুষ যা যা করেছেন তাকেও সবটাই করতে হয়েছে নির্দ্বিধায় ও অবলীলায়। অদম্য ফাতেমা মনে করেন, নারীরা তাদের অপার সম্ভাবনা আর অফুরন্ত প্রাণচাঞ্চল্য শক্তিতে সবটাই উজাড় করে দিতে একটুও কুণ্ঠিত হন না। তেমন নজির তিনিসহ আরও অনেক নারী যোগ্য হিসেবে প্রমাণও করে যাচ্ছেন। এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণে সংযুক্ত হতে তাকে খুব বেশি ভাবতেও হয়নি। সফলতার সঙ্গে প্রতিটি ধাপ পার হতে গিয়ে নারী হিসেবে নিজেকে দুর্বলও মনে হয়নি। ফাতেমা-তুজ-জেফারাকে অভিনন্দন।
×