ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জননিরাপত্তা রক্ষায় র‌্যাব আস্থার বাহিনী

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২৯ মার্চ ২০২২

জননিরাপত্তা রক্ষায় র‌্যাব আস্থার বাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দেশের একমাত্র এলিট ফোর্স র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এরই মধ্যে জননিরাপত্তা রক্ষায় গণমানুষের আস্থার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সোমবার সকালে র‌্যাব ফোর্সেসের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কুর্মিটোলা র‌্যাব সদর দফতরের শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, র‌্যাব চরমপন্থীদের আগ্রাসন থেকে দেশকে মুক্ত করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রক্তাক্ত জনপদে মানুষ পেয়েছে নিরাপদ জীবন। ফলে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রেয়েছে। জঙ্গী দমনের মাধ্যমে দেশের আপামর জনগণের নিরাপত্তা সমুন্নত হয়েছে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, জলদস্যুতা দমনের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিরাজমান। বিভিন্ন হত্যা, খুন, অপহরণ, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের মাধ্যমে ভিকটিম পরিবারের বিচার পাওয়ার পথ সুগম করেছে। র‌্যাব মানবপাচার বিরোধী অভিযান পরিচালনা ও ভিকটিম উদ্ধার করার ফলে নতুন জীবনের স্বাদ পেয়েছে অনেকে। বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষের পাশে থাকে। র‌্যাব মানবিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে দুস্থ, অসহায় ও প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিগত ও বর্তমান সময়ে শীর্ষ জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনে এই এলিট ফোর্স। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গী দমনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি ও কৌশলের আলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গীদমনে যে সফল তৎপরতা চালিয়েছে তাতে র‌্যাবের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানসহ শোলাকিয়া, সিলেটের আতিয়া মহল, ঢাকার আশুলিয়া, মিরপুর, তেজগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চলে ও ঝিনাইদহসহ প্রতিটি জঙ্গী দমন অপারেশনে র‌্যাব তার পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর র‌্যাব একই দিনে আশুলিয়া, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে অভিযান চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করে। এই দিন হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও জেএমবি প্রধান সারোয়ার জাহান গ্রেফতার এড়াতে বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তার মৃত্যু হয়। এ ধরনের বহু অভিযান চালিয়ে র‌্যাব শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। পাশাপাশি বিপথগামী জঙ্গীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে র‌্যাব। মোটিভেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম সহায়তা প্রদান করে স্বাবলম্বী করা হচ্ছে। র‌্যাবের এই মানবিক উদ্যোগটি সফল হোক। এভাবে র‌্যাব মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। মাদকের ভয়াল ছোবলের কবলে গ্রাস হচ্ছে অনেক মানুষের জীবন ও সংসার উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মাদক বিস্তার রোধে র‌্যাব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে- এই সামাজিক যুদ্ধ এবং অভিযাত্রা আমাদের সফল করতে হবে। পাশাপাশি মাদকবিরোধী অভিযানের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা মাদকবিরোধী অভিযান সুসংহত কারার লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলায় একটি পরিপূর্ণ ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করেছি। একই সঙ্গে আমরা একটি যুগোপযোগী ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করেছি। গত ১ বছরে র‌্যাবের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ পিস ইয়াবা, ১৪৯ কেজি হেরোইন, ২৮ কেজি আইস, ১ লাখ ৩৯ হাজার বোতল ফেনসিডিলসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭১১ কোটি টাকা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আরও বলেন, জঙ্গীবাদ দমন, চরমপন্থী দমন, জলদস্যু দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সর্বশেষ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে মাদকবিরোধী অভিযানে রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। র‌্যাবের বিশেষ উদ্যোগে র‌্যাব ডি-র‌্যাডিকালাইজেশন ও রি-হ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম ‘নবদিগন্তের পথে’ অত্যন্ত অভিনব ও যুগান্তকারী এই উদ্যোগ। অপরাধীর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় আবার তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা। আত্মসমর্পণকৃত ৪২১ জন সন্ত্রাসীদের (জলদস্যু ও জঙ্গী) পুনর্বাসন প্রক্রিয়া যুক্ত রয়েছে। মানবিকতা দিয়ে অপরাধ দমনের এ সাফল্য বিশ্বের বুকে নজিরবিহীন। র‌্যাব ডিজি যা বলেন ॥ অনুষ্ঠানে র‌্যাব ডিজি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নীতি ও কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ জঙ্গী-ঝুঁকিমুক্ত। এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বিশ্বে বাংলাদেশকে রোল মডেলে পরিণত করেছে। সভাপতির বক্তব্যে র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র‌্যাব চরমপন্থী, জঙ্গীবাদ, জলদস্যু ও সন্ত্রাস দমন, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার এবং চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ের আসামি গ্রেফতারসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ঈর্ষণীয় ভূমিকা রাখছে। র‌্যাব জল, স্থল ও আকাশে অভিযান পরিচালনার সক্ষমতাসম্পন্ন একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ইনসিগনিয়া ব্যাজ শুরু ॥ এদিকে র‌্যাবের সম্মিলিত কার্যক্রমকে স্মরণীয় করে রাখতে সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমানে সব সদস্যকে দেয়া হবে ‘ইনসিগনিয়া ব্যাজ’। এর আগে গত ২১ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এর অনুমোদন দেয়া হয়। বিশেষ এ ব্যাজটি র‌্যাব সদস্যরা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক পোশাকের সঙ্গে পরিধান করতে পারবেন। সব র‌্যাব সদস্যদের জন্য এ ইনসিগনিয়া ব্যাজ হবে অনন্য সম্মান ও গৌরবের প্রতীক। র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ইনসিগনিয়া ব্যাজ পরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ বিষয়ে র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকা- বেড়ে যাওয়ায় ২০০৪ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি বিশেষায়িত বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে র‌্যাব। প্রতিষ্ঠার পর র‌্যাব জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-সহ অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মাদক ছাড়া র‌্যাবের অভিযানে সুন্দরবন ও উপকূলীয় অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শূন্যের কোঠায় এসেছে।
×