ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আলোর পথে যাত্রা

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২৭ মার্চ ২০২২

আলোর পথে যাত্রা

বিদ্যুতের রেশনিং খুব বেশিদিন আগের ঘটনা নয়। এক ঘণ্টা বিদ্যুত দিয়ে পরের ঘণ্টাতেই লোডশেডিং। দিনের অর্ধেক সময়ই থাকতে হতো বিদ্যুতহীন। বিদ্যুত সঙ্কটে ব্যাহত হয়েছে শিল্পোৎপাদন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিঘœ ঘটেছে প্রধান ফসল বোরোর সেচ কার্যক্রম। গ্রামগঞ্জের অবস্থা ছিল আরও খারাপ। সারাদিনে দু’-একবার কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুত পাওয়া যেত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের সময়ই ছিল এমন অবস্থা। ক্ষমতায় বসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুত খাতকে এক নম্বর অগ্রাধিকার সেক্টর হিসেবে গ্রহণ করেন। যে কোনভাবে বিদ্যুত উৎপাদন বাড়াতেই হবে। তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করা হয় তিন ধরনের পরিকল্পনা। স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী। স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা ছিল পুরনো বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিএমআরই ও নতুন প্ল্যান্ট সংযুক্ত করা এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন। সারাদেশের বিদ্যুত চাহিদা দ্রুত মেটাতে অনেক কেন্দ্র একসঙ্গে নির্মাণে সরকারের আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। এজন্য গ্রহণ করা হয় বেসরকারী খাতে কুইক রেন্টাল প্রকল্প। এই পরিকল্পনায় বেসরকারী উদ্যোক্তাদের ছোট ছোট বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়। তাদের কাছ থেকে বিদ্যুত কিনে সরকার জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত সরবরাহ শুরু করে। ছোট প্ল্যান্ট স্থাপনে সময় কম লাগে। দ্রুত সঙ্কট উত্তরণে এর বিকল্প ছিল না। এজন্য ২০১০ সালে দেশের বিদ্যুত খাতের প্রচলিত আইনের সংশোধনীও আনা হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রথম দিকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। আইনী জটিলতার পাশাপাশি উচ্চমূল্যে বিদ্যুত ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গণবিরোধী বলে মন্তব্য করেন অনেকে। এছাড়া এই খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের অনেকে অনুমতি নিয়ে বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনে নানা সঙ্কট তৈরি করেন। এত কিছুর পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। সেই সময় তিনি স্পষ্ট করেই বলেন, ‘আইন দেশের মানুষের জন্য। প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করা যায়। মানুষের জন্যই সরকার। এই খাতে সরকারের উচ্চ ভর্তুকিতেও যদি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হয় তবে আমরা তাই করতে চাই।’ প্রধানমন্ত্রীর এই দৃঢ়তায় পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হতে থাকে। স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার পাশাপাশি গ্রহণ করা হয় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। সরকারী-বেসরকারী উভয় খাতেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়। এর পর সবকিছু ইতিহাস। গত ১৩ বছরের প্রাণান্ত চেষ্টায় এখন দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে জাতির কাছে যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন, সম্প্রতি পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধনের সময় তিনি সেই অঙ্গীকার রক্ষার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াদা করেছিলাম দেশের প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালাব। সেই ওয়াদা পূরণ করেছি। আমাদের আলোর পথে যাত্রা সফল হয়েছে। মুজিববর্ষে দেশের প্রত্যেকটি ঘর আলোকিত করেছে সরকার, এটাই সব থেকে বড় সাফল্য।’ মাত্র একযুগ আগে বিপর্যস্ত বিদ্যুত ব্যবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধু সকল খাতের সঙ্গে বিদ্যুত খাতকেও গুরুত্ব দিয়েছিলেন। গঠন করেছিলেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। পুরনো বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো মেরামতের পাশপাশি বেশ কয়েকটি নতুন বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণেও উদ্যোগ নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় এসেছেন তারা কেউ বিদ্যুত নিয়ে চিন্তাই করেননি। জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার শাসনামলের একুশ বছর শেষে ৯৬ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুত দাঁড়িয়েছিল মাত্র ১৫শ’ মেগওয়াটে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় দেশের বিদ্যুত পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। শহরকেন্দ্রিক কিছু বিদ্যুত সরবরাহ থাকলেও গ্রামের মানুষ বিদ্যুতের কথা চিন্তাও করতে পারত না। সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থভাবে বুঝতে পেরেছিলেন বিদ্যুত ছাড়া দেশের উন্নয়ন দূরের কথা, আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়াও মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে না। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিদ্যুত খাতে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বাড়তে থাকে বিদ্যুত উৎপাদন। আওয়ামী লীগের পাঁচ বছরে বিদ্যুত উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৩শ’ মেগাওয়াট। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরে দেশে এক মোগাওয়াট বিদ্যুতও জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয়নি। অদৃশ্য কারণে গ্রহণ করা হয়নি নতুন কোন প্রকল্প। কেন্দ্রগুলো পুরনো হওয়ার কারণে পাঁচ বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছিল ৩২শ’ মেগাওয়াটে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিদ্যুত খাতে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও নানা জটিলতায় এগুলো বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। বিগত এক যুগের অভিযাত্রায় কল্পনাকেও হার মানিয়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুত খাত। এই সময় বাংলাদেশের বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ৫ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্গম পাহাড় থেকে শুরু করে বিচ্ছিন্ন জনপদ। বিস্তীর্ণ নদীর বুকে জেগে ওঠা চরাঞ্চল থেকে হাওড়ের বুকে গড়ে ওঠা গ্রাম। সোলার সিস্টেম কিংবা সাবমেরিন ক্যাবলে এসব দুর্গম এলাকায় পৌঁছেছে বিদ্যুত। কোথায় নেই আলো? আলোয় আলোকিত সারাদেশ। ২০০৯ সালে জানুয়ারিতে মাত্র ২৭টি কেন্দ্রে বাংলাদেশের বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩২শ’ মেগাওয়াট। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে ১৫০টি বিদ্যুতকেন্দ্র, উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। নির্মাণাধীন রয়েছে আরও ১৩ হাজার ২১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুতকেন্দ্র। গত ১৩ বছরে স্থাপন করা হয়েছে ৫ হাজার ২১৩ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং ৩ লাখ ৬১ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন। নতুন বিদ্যুতের সংযোগ পেয়েছে ৩ কোটি ১৩ লাখ গ্রাহক। বিদ্যুত সুবিধাভোগী জনসংখ্যা শতকরা ৪৭ শতাংশ থেকে শতভাগে উন্নীত হয়েছে। সিস্টেম লস কমেছে ৫.৮৫ শতাংশ। স্থাপন করা হয়েছে ৪৬ লাখ ৭৭ হাজার প্রি-পেইড/স্মার্ট মিটার। স্থাপন হয়েছে ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকার কাজ করছে। দেশের শিল্পায়নে এই বিদ্যুত কাজে লাগবে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের ছোঁয়ায় মানুষের জীবনে এসেছে গতি। গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখন সন্ধ্যা হলেই ঘুমাতে যায় না। বিদ্যুতের আলো পৌঁছায় রাত ১২টা পর্যন্ত দোকানপাট, হাট-বাজার খোলা থাকে। রাত জেগে পড়ালেখা করতে পারছে শিক্ষার্থীরা। নগরজীবনেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। শিল্প-কারখানাগুলোতে উৎপাদন বেড়েছে। অর্থনীতিতে এসেছে গতি ও সমৃদ্ধি। এখন আমাদের কাজ করতে হবে বিদ্যুতকে সহজলভ্য এবং নিরবচ্ছিন্ন করতে। যথার্থভাবেই প্রতিমন্ত্রী অনুধাবন করেছেন আমাদের বিদ্যুত এখনও সহজলভ্য নয়। অর্থাৎ বিদ্যুতের মূল্য অনেক বেশি। এর প্রধান কারণ বিদ্যুত উৎপাদনে খরচ বেশি হচ্ছে। এখনও অধিকাংশ বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে তেল বা গ্যাসে। দেশে গ্যাসের মজুত খুব বেশি নেই। এ কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র অনুমোদন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তেল দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন খুবই ব্যয়বহুল। পানির ¯্রােত দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদনের উৎস খুবই সীমিত। এজন্য এখনও মূল ভরসা কয়লা। পরিবেশের কথা বিবেচনা করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নিয়ে আপত্তি রয়েছে অনেকের। কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্র থেকে প্রচুর কার্বণ নিঃসরণ হয়ে পরিবেশ দূষিত করে। অবশ্য এই ধারণা এখন অতীত। নতুন উদ্বোধন করা পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে পরিবেশ দূষণের মাত্রা ৯৯ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ১৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্রটি এখন পর্যন্ত স্থাপিত দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুতকেন্দ্র। জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ক্লিন কোল প্রযুক্তির বিদ্যুতকেন্দ্রটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশে^র সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। সালফার নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুতকেন্দ্রের সঙ্গে ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন (এফজিডি) স্থাপন করা হয়েছে। ফ্লাই এ্যাশ হ্রাসকল্পে ৯৯ শতাংশ দক্ষতাসম্পন্ন ইলেক্ট্রো স্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর (ইএসপি) বিদ্যুতকেন্দ্রের সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে। বন্দরের জাহাজ থেকে কয়লা সরাসরি চলে যাবে বিদ্যুতকেন্দ্রের চুল্লিতে। সাধারণের দৃষ্টিতে থাকবে না কয়লার যাত্রাপথ। কয়লার ধুলায় নষ্ট হবে না বাতাসের ¯িœগ্ধতা। এসব কারণে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্র হলেও এর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের কোন সম্ভাবনা নেই। কয়লা পোড়ানোর সময় ধোঁয়া হবে; কিন্তু এতে থাকবে না ক্ষতিকারক কার্বণ। ইএসপির মাধ্যমে ধোঁয়ার কার্বন ছেঁকে সংরক্ষণ করা হবে এবং ব্যবহার করা হবে অন্য কাজে। এই প্রযুক্তিতে ভবিষ্যতে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হলে কমবে উৎপাদন ব্যয়। গ্রাহকদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিদ্যুত সরবরাহ করাও সম্ভব হবে। এর বাইরে রয়েছে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র। রূপপুরে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন এ ধরনের আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিমন্ত্রীর দ্বিতীয় প্রত্যাশা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুত উৎপাদিত হলেও শুধু সঞ্চালন লাইনের কারণে দেশের সকল এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত ১৩ বছরে ৫ হাজার ২১৩ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং ৩ লাখ ৬১ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে এই লাইনও যথেষ্ট নয়। অনেক লাইন পুরনো হয়ে গেছে। এতে বিদ্যুতের সিস্টেম লসের পাশাপাশি প্রায়ই সরবরাহে বিপর্যয় দেখা দেয়। এখনও অধিকাংশ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন মাটির ওপরে থাকায় ঝড়ঝঞ্ঝা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাভাবিকভাবেই বাধাগ্রস্ত হয় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত বিতরণ। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে সংযোগ দেয়ার কারণে গাছের ডালে কিংবা টিনের চালে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। একটু জোরে বাতাস হলেই বিচ্ছিন্ন হচ্ছে বিদ্যুত সংযোগ। ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙ্গে বিদ্যুত সরবরাহ বিঘœ ঘটা গ্রামের নিত্যনৈমিত্তিক চিত্র। একবার বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেলে কিংবা ট্রান্সমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হলে দিনের পর দিন চলে যায় এগুলো মেরামত করতে। গ্রামাঞ্চলে তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহ লাইন কিংবা ট্রান্সমিটার মেরামত করার দক্ষতা এখনও অর্জন করতে পারেনি আরইবি বা সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এসব কারণে চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুত উৎপাদন হলেও সকল ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে এই সুবিধা থেকে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত উৎপাদনের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ঝড়ঝঞ্ঝা থেকে রক্ষার জন্য বিশ^ব্যাপী সকল সঞ্চালন ও সরবরাহ লাইন এখন মাটির নিচে। বাংলাদেশে শহরাঞ্চলের কিছু লাইন মাটির নিচে দেয়া হলেও অধিকাংশই সঞ্চালন ও সরবরাহ লাইন রয়ে গেছে মাটির ওপর বিদ্যুত খুঁটিতে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে শহরাঞ্চলের সকল বিদ্যুত লাইন মাটির নিচে নিতে হবে। গ্রামাঞ্চলে সরবরাহ লাইনগুলোকে যথাযথ পরিকল্পনা অনুযায়ী টানতে হবে, যাতে ঝড়-বৃষ্টি কিংবা গাছের ডাল ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন কিংবা ট্রান্সমিটার দ্রুত মেরামতে বিদ্যুত বিভাগকে আরও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। বিদ্যুতের দাম কমিয়ে সুলভ করা এবং সঞ্চালন ও সরবরাহ লাইন সঠিকভাবে স্থাপন করতে পারলেই প্রধানমন্ত্রীর সাফল্য শতভাগ বিদ্যুতের সুফল নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত দেশের উৎপাদনের চাকা গতিশীল করার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নও দ্রুততর করবে। লেখক : ডেপুটি এডিটর, জনকণ্ঠ
×