ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধ দমনে সাফল্য

পরপর দু’বছর দেশসেরা, সিএমপির গতি আরও বাড়বে

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২৮ জানুয়ারি ২০২২

পরপর দু’বছর দেশসেরা, সিএমপির গতি আরও বাড়বে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কমাতে চট্টগ্রাম মহানগরজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে গতিবিধি নজরদারি, সিএনজি অটোরিক্সা মালিক ও অটোরিক্সা চালকদের ডাটাবেজে নিয়ে আসাসহ বিভিন্ন জনবান্ধব কাজে সাফল্য দেখিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এছাড়া অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও চোরাচালান কমাতে অপরাধ দমনে বছরব্যাপী সক্রিয় ছিল নগর পুলিশের সদস্যরা। প্রতিটি থানার সদস্যদের একাগ্রতা এবং সিএমপি উর্ধতন কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল তাক লাগানো। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদকদ্রব্য উদ্ধারে এগিয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ। পুলিশ সপ্তাহ-২০২২ উপলক্ষে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন করায় পুলিশকে যে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে, তাতে সিএমপি অর্জন করেছে প্রথম স্থান । এ নিয়ে পরপর দুবছর দেশসেরার স্বীকৃতি পেল সিএমপি, যা কাজের গতি আরও বৃদ্ধি করবে বলে জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। পুলিশ সপ্তাহ-২০২২ উপলক্ষে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন করায় পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে গত ২৪ জানুয়ারি। ১ জানুয়ারি ২০২০ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ এবং ১ জানুয়ারি ২০২১ থেকে ৩০ নবেম্বর ২০২১ পর্যন্ত চলমান অভিযানের ওপর ভিত্তি করে এই পুরস্কার দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। গত সোমবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের প্যারেড প্রাউন্ডে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোর প্রতিনিধিদের হাতে এই পুরস্কার হস্তান্তর করেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ । এ বিষয়ে সিএমপি অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) শাহাদাত হুসেন রাসেল জনকণ্ঠকে বলেন, নগরকে অপরাধমুক্ত রাখতে সিএমপি বদ্ধপরিকর। পুলিশী নজরদারি ও তৎপরতার কারণে এমন সফলতা। অপরাধ দমনে নগরজুড়ে পুলিশের এমন ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশী উপস্থিতি এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসায় এমন সাফল্য, এছাড়া নগরীর প্রবেশমুখসহ অপরাধপ্রবণ এলাকায় পুলিশ আগের চাইতে বেশি নজরদারি ও তৎপরতা বাড়িয়েছে, তাই কেউ চাইলে অপরাধ করে পার পাবে না। সিএমপির জনসংযোগ শাখা জানিয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার অভিযান ২০২১ ‘ক’ গ্রুপ প্রথম স্থান অর্জন করে আবারও দেশসেরা হয়েছে সিএমপি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাবনা জেলা পুলিশ ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। ‘খ’ গ্রুপ প্রথম স্থান কক্সবাজার জেলা পুলিশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে নরসিংদী জেলা পুলিশ ও নোয়াখালী জেলা পুলিশ। ‘গ’ গ্রুপ প্রথম এপিবিএন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে গাজীপুর জেলা পুলিশ ও রাজবাড়ী জেলা পুলিশ। ‘ঘ’ গ্রুপ প্রথম স্থান র‌্যাব-৭ (চট্টগ্রাম)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে র‌্যাব-৫ (রাজশাহী) ও র‌্যাব-১৫ (কক্সবাজার)। ‘ঙ’ গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগ ও তেজগাঁও বিভাগ। এদিকে, অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ২০২০ সালে ‘ক’ গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেছে সিএমপি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ও পাবনা জেলা পুলিশ। ‘খ’ গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে যশোর জেলা পুলিশ ও নোয়াখালী জেলা পুলিশ। ‘গ’ গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ ও রাজবাড়ী জেলা পুলিশ। ‘ঘ’ গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেছে র‌্যাব-৭ (চট্টগ্রাম)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে র‌্যাব-৫ (রাজশাহী) ও র‌্যাব-১৫ (কক্সবাজার)। ‘ঙ’ গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডিএমপির মিরপুর বিভাগ ও মতিঝিল বিভাগ। সিএমপি সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সালে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে বিদেশী পিস্তল ৩টি, দেশীয় পিস্তল ১টি, বিদেশী রিভলবার ২টি, এলজি ২৮টি, পাইপগান ৩টি, টিয়ারগান ১টি, রিপিটগান ১টি এবং ওয়ান শূটার গান ১টি। এছাড়া ম্যাগজিন ২টি, গুলি ১০ রাউন্ড, কার্তুজ ৫২টি রাউন্ড, ছোরা ৫২৬টি এবং রাম দা, চাপাতি কিরিচসহ অন্য দেশীয় ১৬৫টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গ্রেফতার করা হয় ৭১৮ জনকে, মামলা হয় ৩৯০টি। এর আগে ২০২০ সালে মোট গ্রেফতার ৬১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়, মামলা হয় ৩৮৫টি। এ সময় উদ্ধার করা হয় বিদেশী পিস্তল ৭টি, দেশীয় পিস্তল ৩টি, দেশীয় বন্দুক ৪টি, একনলা বন্দুক ১১টি, রিভলবার ২টি, এলজি ৪১টি, পাইপগান ৭টি, রাইফেল ১টি, ওয়ান শূটারগান ১, ম্যাগাজিন ৮টি, গুলি ৬৪ রাউন্ড, কার্তুজ ১০৬ রাউন্ড, ছোরা ৩৭০টি, এবং কিরিচসহ দেশীয় অস্ত্র ১৮৯টি। এছাড়া মাদকদ্রব্য উদ্ধার অভিযানে ২০২১ সালে গ্রেফতার হয় ২ হাজার ৬০৫ জন, মামলা হয় ১৯০৩টি। এছাড়া ২০২০ সালে মাদকসহ গ্রেফতার হয় ২ হাজার ৯০৯ জন, মামলা হয় ২১৯৫টি। এদিকে চোরাচালানের মালামাল উদ্ধারেও ‘ক’ গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করে সফলতা অর্জন করেছে সিএমপি। নগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টানা সাফল্যের এই মুকুট ধরে রাখতে তারা প্রতিটি থানাকে নির্দেশনা দিয়েছেন অপরাধ দমনে। যার ফলে সারাদেশের মধ্যে সেরা সিএমপি।
×