ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতির পিতা হত্যার পর কবি, আবৃত্তিকাররাই প্রতিবাদ করেছেন

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ২৮ জানুয়ারি ২০২২

জাতির পিতা হত্যার পর কবি, আবৃত্তিকাররাই প্রতিবাদ করেছেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কবিতা, গান, নাটক আর সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে যেভাবে প্রতিবাদের ভাষা বেরিয়ে আসে এবং মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়, তা আর কিছুতে হয় না। বার বার আঘাত এসেছে, কিন্তু বাঙালী কখনও বসে থাকেনি, প্রতিবারই প্রতিবাদ করেছে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর যখন দেশে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, তখনও কবি ও আবৃত্তিকাররা প্রতিবাদ করেছেন। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব ২০২০-২২’ এর উদ্বোধন এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক ২০২০-২২’ বিতরণ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যখন কোন রাজনৈতিক কর্মকা- করা যাচ্ছিল না, তখন আমাদের কবিতার মধ্য দিয়েই প্রতিবাদের ভাষা বেরিয়ে আসে এবং মানুষ সেখানে উদ্বুদ্ধ হয়। নাট্যকার দীন বন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ’ নাটক যেভাবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে চাঙ্গা করেছিল, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি কবিতার শক্তি যে কত বেশি, সেটাতো আমরা নিজেরাই জানি। আর বার বার আঘাত এসেছে, কিন্তু বাঙালী কখনও বসে থাকেনি, প্রতিবারই প্রতিবাদ করেছে। কারণ, তা না হলে আমাদের সাহিত্য চর্চাতো বৃথাই হয়ে যেত। এক একজন কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, আবৃত্তিকার, আমাদেরকে যা কিছু দিয়ে গেছেন, এগুলো আমাদের সম্পদ। সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমি বলব যে, এ দেশের আন্দোলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে- এ দেশের কবিদের এবং আবৃত্তিকারদের। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের সকলের প্রতি। তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, সে সময় অনেকেই যে যেভাবে পেরেছেন, লিখেছেন, নাটক করেছেন, সাহিত্য রচনা করেছেন, বই ছাপিয়েছেন, প্রতিবাদ করে গ্রেফতারও হতে হয়েছে কাউকে কাউকে। কিন্তু থেমে থাকেননি কেউ। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের পাঁচ দিনব্যাপী এই আবৃত্তি উৎসবের উদ্বোধনী দিনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথিদ্বয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক ২০২০-২২’ প্রদান করেন। বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। কবিতার অমোঘ শক্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন আন্দোলন শুরু করলাম স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, তখনও কত নাটক, কবিতা- বিভিন্ন আবৃত্তির মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের। সেখানে অনেক বাধা-বিপত্তিও এসেছে। তখনকার কবিতার উৎসব অনেক বাধার মধ্য দিয়েই করতে হতো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব কবিতা পাঠের আয়োজন বা উৎসবে যাওয়া তার অভ্যাস ছিল, কখনও দূরে বসে বা গাড়িতে বসেও তিনি শুনেছেন। এই কবিতার মধ্য দিয়ে আমাদের অনেক না বলা কথা বলা হয়। অনেক সংগ্রামের পথও দেখানো হয়। শেখ হাসিনা একজন রাজনীতিবিদ এবং এ জন্য বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা প্রদান করলেও সংস্কৃতি চর্চার আবেদন বক্তৃতার চেয়ে অনেক বেশি বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমি কথা বলে একটি মানুষকে যতটুকু উদ্বুদ্ধ করতে পারি, তার চেয়ে অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ হয় মানুষ একটা কবিতা, গান, নাটক বা সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে, যার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ের কাছে পৌঁছানো যায়। গ্রাম-বাংলার চিরায়ত ‘কবি গান’-এর আসরের প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে আগে কবিয়ালদের লড়াই হতো। আসলে বাঙালীরা সহজাতভাবেই কবি, এটা হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, এই কবিতার মধ্য দিয়ে আমাদের অনেক না বলা কথা বলা হয়। অনেক সংগ্রামে পথ দেখানো হয়। একজন রাজনীতিবিদ বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দেন। কিন্ত সংস্কৃতি চর্চার আবেদন বক্তৃতার চেয়ে অনেক বেশি।
×