ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আরএফইডির মিট দ্যা প্রেসে সিইসি

কঠিন হলেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনই সমাধান

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২৮ জানুয়ারি ২০২২

কঠিন হলেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনই সমাধান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কঠিন হলেও এটাই সমাধান বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন এ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি (আরএফইডি) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়া সবচেয়ে বেশি ভাল। সিইসি বলেন, বর্তমান কমিশনের আমলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে, প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন শতভাগ ইভিএমে করা সম্ভব হবে না, তবে ৫০ ভাগ করা যেতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর তিনি তার দায়িত্ব পালনকালে নিজেকে শতভাগ সফল হিসেবে দেখছেন না, তবে তার আন্তরিকতার অভাব ছিল না। তিনি বলেন, ইসির বিরুদ্ধে ৪২ নাগরিকের করা অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিল। তবুও বিভিন্ন পর্যায়ের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আইন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ফিরে আসবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার্চ কমিটি ব্যবস্থা ভাল, তবে আইন হওয়া সবচেয়ে বেশি ভাল। এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতের ভোট আমি দেখিনি, আদালতে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেননি। তাই অভিযোগের কথা যারা বলছে তাদের কাছেই অভিযোগ থেকে গেছে। আদালতের নির্দেশনা ছাড়া কোন অভিযোগের তদন্ত হয় না। তাই এ অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে আমি কনক্লুসিভ কিছু বলতে পারি না। তাই আদালতে কেউ অভিযোগ করার পর তদন্ত হলে এবং এর সত্যতা বেরিয়ে এলে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যেত। সারাদেশের নির্বাচনও বন্ধ হয়ে যেতে পারত। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কেন আদালতে অভিযোগ দেয়নি সেটা তাদের বিষয়। এ সুযোগ তারা হাতছাড়া করেছে। সিইসি কেএম নূরুল হুদা তাঁর বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এবং সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, অসুস্থ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের চিকিৎসার জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) বছরে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। এ ছাড়া তিনি কমিশনে কোন মিটিং থাকলে তা নিয়ে আগে থেকেই খুঁত ধরতে থাকেন। আর গণমাধ্যমে প্রচার পাবে এমন কথা বলতে থাকেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার কথাগুলো আমি সিইসি হিসেবে গ্রহণ করতে পারিনি। তিনি আমিত্ববোধ থেকে সেসব কথা বলতে পারেন। সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এনে সিইসি বলেন, আগের নির্বাচন কমিশনের কাজের সূত্রে বদিউল আলম মজুমদার এ দুর্নীতি করেছেন। আর আমি সিইসির দায়িত্ব পাওয়ার পর বদিউল আলম মজুমদার আগের কমিশনের মতো বর্তমান কমিশনের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে কমিশনের কর্মকর্তারা সতর্ক করায় তাঁকে কাজ দেয়া হয়নি। এ জন্যই বদিউল আলম মজুমদার বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করে যাচ্ছেন। বদিউল আলমকে ড. হুদা অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচনী কাজ দিয়েছিলেন। মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আরএফইডি সভাপতি সোমা ইসলাম। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী জেবেলও এতে বক্তব্য রাখেন। পরে সংগঠনের সদস্যরা একে একে সিইসির কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে সিইসি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা আর জরুরী সময়ে সামরিক সরকারের অধীনে নিবার্চনের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে। শামসুল হুদা কমিশন প্রশংসা পেয়েছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা সম্পর্কে বলতে হয়- তখন দেশে ছিল জরুরী অবস্থা। ক্যান্টনমেন্টের আশীর্বাদ নিয়ে ওই নির্বাচন করা হয়েছিল। তবে এ অবস্থা গণতান্ত্রিক পরিবেশকে সম্প্রসারিত করে না। গণতন্ত্রে উন্মুক্ত পরিবেশ থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে বন্দুকের নল অথবা লাঠি উঁচিয়ে নির্বাচনকে সাইজ করা যায় না। তবে সেখানে ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে। সেখানে সংঘাত হতে পারে, বিতর্ক হতে পারে, মিছিল ও মিটিং হতে পারে, এখন যেমন হয়। এই হলো গণতান্ত্রিক পরিবেশ। তবে ক্যান্টনমেন্টের আশীর্বাদ নিয়ে বন্দুক মাথায় রেখে একটা নির্বাচন হতে পারে, চিরদিনই সেটা হতে পারে না। তার জন্য খুলে দিতে হবে দরজা। এখন সেই দরজা খুলে গেছে। এখন রাজনৈতিক পরিম-লে নির্বাচন হয়, এ নির্বাচন অত্যন্ত কঠিন। এর মধ্য দিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সিইসি বলেন, সাবেক সিইসি শামসুল হুদা সেদিন কিছু ছবক দিলেন। তিনি বললেন, নির্বাচন কমিশনের অনেক কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু করেনি। নানা কাজ করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এক সময়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তার এ কথাগুলো আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। ‘ইলেকশন কমিশন ইজ ওয়ান অব দ্য মোস্ট কমপ্লিকেটেড ইনস্টিটিউট এ্যানিহোয়ার ইন দি ওয়ার্ল্ড’। সেখানে একটা লোক সবকিছু করে একেবারে বাহবা নিয়ে যাবে, এটা সম্ভব নয়। সাবেক সিইসি শামসুল হুদার সমালোচনা করে বর্তমান সিইসি আরও বলেন, সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পরে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করা। কিন্তু তিনি নির্বাচন করেছিলেন ৬৯০ দিন পরে। এই সাংবিধানিক ব্যত্যয় ঘটানোর অধিকার তাকে কে দিয়েছিল। দিয়েছিল, ওই যে তখন গণতান্ত্রিক সরকার ছিল না, তাই কোন গণতন্ত্র ছিল না, ছিল একটা ইমার্জেন্সি সরকার। সেই পরিবেশ-পরিস্থিতি তো সারাজীবন গণতান্ত্রিক সরকারের সময় সম্ভব নয়। আমাদের ঠিকঠিক নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে এবং আমরা তা করেছি। কে এম নূরুল হুদা বলেন, সাবেক সিইসি বদিউল আলম মজুমদারকে নির্বাচন কমিশনের কাজে নিয়োগ দিয়েছেন কিসের ভিত্তিতে? সেখানে কি কোন বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল? তাহলে লাখ লাখ টাকা তাকে কিভাবে দিলেন! লাখ লাখ টাকার অভিযোগ আছে, সেটা আমাদের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেনÑ এই লোকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনেক অনিয়ম আছে। সুতরাং সাবেক সিইসিকে ভেবে-চিন্তে কথা বলা উচিত। এখানে ১২ কোটি ভোটার নিয়ে কাজ করতে হয়। সুতরাং এটা করা যায় না, ওটা করা যায় না এমন বহু সমালোচনা আছে। তারপরও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। সিইসি বলেন, ইসি মাহবুব তালুকদার একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মাহবুব তালুকদারের বিভিন্ন মন্তব্য তার ব্যক্তিগত এজেন্ডা। শারীরিক দিক দিয়ে তিনি আসলেই অসুস্থ। তিনি কখনও আইসিইউতে, কখনও সিসিইউতে থাকেন। সিঙ্গাপুরে ট্রিটমেন্ট করেছেন, ভারতে ট্রিটমেন্ট করেছেন। বছরে প্রায় ৩০-৪০ লাখ টাকার ট্রিটমেন্ট করেন, এটা নির্বাচন কমিশন বহন করে থাকে। মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হলে ইসির কি করার আছে? এটা তো প্রার্থীদের সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আর বিনা ভোটে নির্বাচিত কেন হলো সেটা দেখার এখতিয়ার ইসির নেই। উনি এগুলো বলে থাকেন। কোন নির্বাচন হলে ৬-৭ দিন ধরে বেছে বেছে বের করেন কোন্ শব্দটা কোন্ জায়গায় ব্যবহার করবেন, যেটা মিডিয়ায় ভাল প্রচার পাবে।
×