ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এ মাসে নির্মল বাতাস মেলেনি রাজধানীতে

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ২৮ জানুয়ারি ২০২২

এ মাসে নির্মল বাতাস মেলেনি রাজধানীতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জানুয়ারি মাসে এ পর্যন্ত একদিনের জন্যও নির্মল বাতাস পায়নি রাজধানীবাসী। পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এ তথ্য দিয়েছে। বাপা বায়ু দূষণের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণের জন্য ১৫টি সুপারিশও তুলে ধরেছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, বাপার নির্বাহী কমিটির সদস্য এমএস সিদ্দিকী ও ইবনুল সাঈদ রানা। বাপা সংবাদ সম্মেলনে জানায়, রাতে ঢাকা শহরের বাতাসের মান সবচেয়ে খারাপ থাকে। রাত ১০টার পর মালবাহী ট্রাকের প্রবেশকে এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা, আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা ঢাকার বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের অর্থাৎ গত ৬ বছরের জানুয়ারি মাসের বায়ুমান সূচকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ু দূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৯.৮ শতাংশ। ২০২২ সালে জানুয়ারি মাসের প্রথম ২৫ দিনের গড় বায়ুুমান সূচক ২১৯.৫২ তে এসে দাঁড়িয়েছে; যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। জানুয়ারি মাসে ঢাকার মানুষ একদিনের জন্যও ভাল বাতাস পাননি। বাতাসের মান বেশিরভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল এবং গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩৮ দিন ভাল বাতাস পেয়েছে। বাপা বায়ু দূষণের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণের জন্য ১৫টি সুপারিশও এতে তুলে ধরেছে। তা হলো (১) শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদফতরের সমন্বয়ে ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। (২) নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে। (৩) রাস্তায় ধুলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা যেতে পারে। (৪) অবৈধ ইটভাঁটি বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে। (৫) ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের প্রচলন করা যেতে পারে। (৬) সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান করার জন্য সকলকে উৎসাহিত করতে হবে। (৭) ঢাকার আশপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে। (৮) আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে। (ৃ৯) আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসেবে স্যান্ড ব্লকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে। (১০) সিটি গবর্নেন্সের প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করতে হবে। সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকা- স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। (১১) নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে। (১২) পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশনের (ক্যাপস) ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়া বায়ু দূষণের পূর্বাভাস দেয়ার প্রচলন করতে হবে। (১৩) সর্বোপরি সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়ু দূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্যনির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশের বায়ু দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। (১৪) ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। (১৫) পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস এবং পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকর করতে হবে।
×