ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিধিমালা জারি

দেশী উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২৮ জানুয়ারি ২০২২

দেশী উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশী উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত করে বিধিমালা জারি করেছে সরকার। এখন থেকে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটায় (ইআরকিউ) পর্যাপ্ত স্থিতি থাকা সাপেক্ষে বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে। ‘মূলধনী হিসাব লেনদেন (বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ) বিধিমালা, ২০২২’ শীর্ষক প্রজ্ঞাপন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে বৃহস্পতিবার বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনে নিয়োজিত দেশের সব অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে পাঠিয়েছে। এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এই বিধিমালাকে মূলধনী হিসাব লেনদেন (বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ) বিধিমালা, ২০২২ বলা হচ্ছে। বিধিমালার ক্ষমতা বলে স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ হিসেবে সহযোগী প্রতিষ্ঠান তৈরি কিংবা কোনও বিদেশী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনতে পারবে। রফতানিকারকরা বিদেশে সহযোগী প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য গত ৫ বছরের বার্ষিক গড় রফতানি আয়ের ২০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবেন। নীতিমালা অনুযায়ী, রফতানিকারকদের হাতে আরেকটি বিকল্প আছে। তারা চাইলে সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো নিট সম্পদের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে ইক্যুইটি বিনিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটি প্রয়োজনে তার নিরিখে বিনিয়োগের সীমা কমাতে বা বাড়াতে পারবে। নতুন এই বিধিমালায় বলা হয়েছে, উদ্যোক্তারা রফতানি থেকে অর্জিত আয়ের একটি অংশ এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) এ্যাকাউন্টে রেখে থাকেন। বিদেশে বিনিয়োগের যোগ্যতা অর্জনের জন্য রফতানিকারকদের তাদের ইআরকিউ এ্যাকাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণ স্থিতি রাখতে হবে। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বলছেন, বহির্বিশ্বে বিনিয়োগ যেমন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রকাশ ঘটাবে, তেমনি এতে নতুন নতুন বাজার দখলের পাশাপাশি মধ্যবর্তী প্রক্রিয়াকৃত পণ্য কম মূল্যে আমদানি ও বিদেশী প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারের সুযোগও তৈরি হবে। বিনিয়োগকৃত দেশের সম্পদ, কাঁচামাল ও প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার তৈরি হওয়ায় কোন একটি প্রতিষ্ঠানের নানামুখী সামর্থ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নিজের দেশও নানাভাবে উপকৃত হবে। এছাড়া দেশের সামগ্রিক ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখবে এ সিদ্ধান্ত। সবচেয়ে বড় কথা, বিনিয়োগকৃত দেশগুলো থেকে ব্যবসার মুনাফা ফিরে আসার ফলেও দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে। এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের অনুমতি না দেয়া হলেও টাকা এমনিতেই চলে যাবে। এর চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়ায় ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে কেনিয়া, কম্বোডিয়া, জর্ডানসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীদের বেশকিছু কারখানা হয়েছে। কাজেই নীতিমালা হওয়ায় এখন জবাবদিহিও থাকবে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এর ইতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে। তবে দেশের যেসব উদ্যোক্তা টাকা দেশের বাইরে নিতে পারে না, তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে দেশের বাইরে সহযোগী প্রতিষ্ঠান বা অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ৫টি প্রতিষ্ঠান ভারত, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ফার্মাসিউটিক্যাল ও খেজুরের ব্যবসায় বিনিয়োগ করার অনুমতি পেয়েছে। এর আগে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০টি প্রতিষ্ঠানকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইথিওপিয়া ও কেনিয়ায় সহযোগী প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেয়।
×