ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

জেলা প্রশাসক সম্মেলন ॥ প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২৮ জানুয়ারি ২০২২

জেলা প্রশাসক সম্মেলন ॥ প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

গত ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জেলা প্রশাসক সম্মেলন। এ সম্মেলন শেষে জেলার শীর্ষ কর্মকর্তারা ফিরে গেছেন স্ব-স্ব জেলার কর্মস্থলে। এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে করোনাকালে। স্বভাবতই করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ঠেকাতে জনসচেতনতা গড়ে তোলার পরামর্শ পেয়েছেন তারা। স্বাস্থ্যবিধি সবাই যাতে মেনে চলে তা নিশ্চিত করার তাগিদও পেয়েছেন জেলা প্রশাসকরা। এবারের সম্মেলনের প্রধান ফোকাসই ছিল জনবান্ধব প্রশাসন নিশ্চিত করা। সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং জেলা প্রশাসকদের এ নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সব ধরনের ভয়ভীতি ও প্রলোভনের উর্ধে থেকে নিজেকে জনগণের সেবায় নিয়োজিত করতে হবে। সেবার মনোভাব নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকলে জেলা প্রশাসকদের পক্ষে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে। এতে সাধারণ মানুষ হবে উপকৃত। দেশ সামনে এগিয়ে যাবে। শুদ্ধাচার বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধে সোচ্চার হতে হবে।’ দেশ এগিয়ে নিতে জেলা প্রশাসকরা সরকারের চোখ ও কান হিসেবে যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন এমনটিই প্রত্যাশিত। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৪ থেকে ১৮ জুলাই জেলা প্রশাসক সম্মেলন হয়েছে। এরপর করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর কারণে গত বছর (২০২০ ও ২০২১) জেলা প্রশাসক সম্মেলন হয়নি। চলতি বছরের ৫ থেকে ৭ জানুয়ারি ডিসি সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে থাকলে তা স্থগিত করা হয়। সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনাসামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য সাধারণত প্রতি বছর জুলাই মাসে ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলন উদ্বোধন করেন। ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রথমবারের মতো প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনী প্রধান, জাতীয় সংসদের স্পীকারের সঙ্গে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা বৈঠক করেন। ডিসি সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ডিসিদের কার্য-অধিবেশন, এছাড়া একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনা, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত, স্পীকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত ও একটি সমাপনী অনুষ্ঠান থাকে। কার্য-অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকেন। সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা লিখিতভাবে মাঠ প্রশাসনের সমস্যাগুলো নিয়ে প্রস্তাব দিয়ে থাকেন। অধিবেশনের সময় এগুলো ছাড়াও ডিসিরা তাৎক্ষণিক বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনদিনের এ সম্মেলন শেষে জেলার শীর্ষ কর্মকর্তারা ফিরে গেছেন তাদের নিজ নিজ জেলার কর্মস্থলে। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যেসব দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তা তাৎপর্যের দাবিদার। দেশের মালিক যে জনগণ এ বিষয়টি তারা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বিশেষভাবে। নাগরিকরা যেন সরকারী অফিসে সেবা নিতে এসে হয়রানির সম্মুখীন না হয় এই বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকদের পুলিশ সুপার এবং সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনাও পেয়েছেন তারা সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এবারের সম্মেলনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুই ছিল জনবান্ধব প্রশাসন নিশ্চিত করা। সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং জেলা প্রশাসকদের এ নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সব ধরনের ভয়ভীতি ও প্রলোভনের উর্ধে থেকে নিজেকে জনগণের সেবায় নিয়োজিত করতে হবে। সেবার মনোভাব নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকলে জেলা প্রশাসকদের পক্ষে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে। এতে সাধারণ মানুষ হবে উপকৃত। দেশ সামনে এগিয়ে যাবে। শুদ্ধাচার বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধে সোচ্চার হতে হবে।’ সম্মেলনে একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী তাদের কর্ম-অধিবেশনেও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রশাসন পরিচালনার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে আসা বিভিন্ন প্রস্তাব সম্পর্কেও নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী তথা রাষ্ট্র ও সরকারের সব ব্যয় নির্বাহ হয় জনগণের টাকায়। সরকারী কর্মকর্তাদের কাছে সেবার আশায় গিয়ে তারা যদি উপেক্ষার শিকার হন তা নিশ্চিয়ই দুর্ভাগ্য। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বলেছেন, সরকারী সেবা নিতে এসে কোন মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়। এ বিষয়ে সবাইকে নজর রাখার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, মাঠ পর্যায়ের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের সক্রিয় ভূমিকা থাকতে হবে। জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২২ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর উপরোক্ত বক্তব্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যের দাবিদার। জেলা প্রশাসকরা জেলা পর্যায়ে সরকারের চোখ-কানের ভূমিকা পালন করেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তাদের দায় দেশের মালিক তথা সাধারণ মানুষের প্রতি। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি তথা সরকারের প্রতি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশ ২০০ বছর ধরে বিদেশী শাসনের নাগপাশে আবদ্ধ ছিল। সে শাসনে সাধারণ নাগরিক ছিল উপেক্ষিত। ৩০ লাখ মানুষের আত্মোৎসর্গের বিনিময়ে দেশে নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর একাংশের মধ্যে ঔপনিবেশিক আমলের মানসিকতা এখনও বিদ্যমান। সরকারী অফিসে সেবা নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ যে হয়রানির শিকার হয় তা সকলেরই জানা। এ অকাম্য অবস্থার অবসানেই প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে তাদের গণমুখী ভূমিকা পালনের তাগিদ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকরা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় মানুষ সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখলে হয়রানির বিড়ম্বনার পুরোপুরি অবসান না হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যে ২৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন তা খুবই প্রাসঙ্গিক। এগুলো প্রতিপালিত হলে দেশের মানুষের কল্যাণ যেমন নিশ্চিত হবে তেমনি শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতার ভিতও জোরদার হবে। সবকিছু যাতে ঢাকাকেন্দ্রিক না হয়ে পড়ে সেজন্য স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষমতায়িত করার বিষয়টি নিয়ে বহু বছর ধরেই আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া এবং রাজনৈতিক প্রভাবসহ বিভিন্ন কারণে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিতে চান না। প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের জন্য মাঠ প্রশাসন এখনও অনেক ক্ষেত্রে ‘ঢাকার দিকে’ তাকিয়ে থাকে। এতে সাধারণ মানুষ সরকারী সেবা পেতে বিড়ম্বনা ও দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার নির্দেশনা দিয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন যেসব সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারে সেসব যাতে ঢাকায় না পাঠনো হয়। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, স্থানীয় প্রশাসন যেসব কাজ নিজেরাই করতে পারে সেগুলো অনেক সময় ঢাকায় পাঠিয়ে দেয় এবং নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যায়। এর ফলে সবাই হচ্ছে ঢাকাকেন্দ্রিক। এসব বিষয়ে ডিসিদের সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের ২৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারী অফিসসমূহে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘেœ যথাযথ সেবা পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সেবা প্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারী কর্মচারীদের মূল কাজ। দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ায় দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমরা দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত ও সেবামুখী জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, সিটিজেনস চার্টার ইত্যাদির বাস্তবায়ন জোরদার করতে হবে। রমজানে দ্রব্যমূল্য কঠোরভাবে তদারকি এবং ওমিক্রন প্রতিরোধে ডিসিদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সব ভয়ভীতি, প্রলোভনের উর্ধে থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বলা নিষ্প্রয়োজন, সেবার মনোভাব নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকলে জেলা প্রশাসকদের পক্ষে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে। এটি একটি রুটিন ওয়ার্ক হলেও এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেশের সার্বিক প্রশাসনিক চিত্র উঠে আসে। একই সঙ্গে সিভিল সার্ভিসের একজন জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের সদস্য ও সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ আমলা হিসেবে জেলা প্রশাসকদের মনোভাব সম্পর্কেও সরাসরি একটি ধারণা পাওয়া যায়। সরকারপ্রধানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা সম্মেলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক। সেনাপ্রধানের অংশগ্রহণের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে। দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনকে একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন সেনাপ্রধান। সোনার বাংলা গড়ার যে অভীষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জাতি এগোচ্ছে সেখানে সামরিক প্রশাসনের সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসন যদি একসঙ্গে কাজ না করে তাহলে আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না- এমন বাস্তবোচিত উপলব্ধি সেনাপ্রধানের। সাধারণ মানুষ আশা করে জেলার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকগণ যে জনসেবক সেটি অবশ্যই তারা স্মরণে রাখবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর জনহিতকর ও যুগোপযোগী নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে মান্য করার মধ্য দিয়ে দেশ সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। সবারই আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাটাই প্রত্যাশিত। জেলা প্রশাসক সম্মেলন থেকে এই প্রত্যাশা রাখা যায় যে, মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা সম্পর্কে সরকারের উপলব্ধির পরিসর বাড়াতে জেলা প্রশাসকগণ অবদান রাখবেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের লক্ষ্য পূরণে জেলা প্রশাসকদের করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করবে। দেশ এগিয়ে নিতে জেলা প্রশাসকরা সরকারের চোখ ও কান হিসেবে যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন এমনটিই প্রত্যাশিত। লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান ট্যুরিজম এ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
×