ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুরান কাপড়

প্রকাশিত: ২১:২৭, ২৭ জানুয়ারি ২০২২

পুরান কাপড়

বাংলাদেশে পুরান কাপড়ের বিষয়টি পুরনো হতে চলেছে। দেশের মানুষ এখন আর পুরান কাপড় পরতে চায় না। ইতোমধ্যে প্রায় সর্বস্তরের মানুষের সামর্থ্য বেড়েছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। করোনা অতিমারীতে গত দুই বছরে নতুন করে কিছু মানুষ দরিদ্র হলেও তারাও আর পুরান কাপড় পরতে চায় না সহজে। সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রতি বছর ঈদ-পূজা পার্বণ উপলক্ষে ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে অন্যবিধ পণ্যের সঙ্গে নারী, পুরুষ ও শিশুর ব্যবহার্য যেসব কাপড়-চোপড় দেয়া হয় সে সবও নতুন- গার্মেন্টসের মালামাল। শীতকালে রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারী-বেসরকারী নানা সংস্থা ও সংগঠনের উদ্যোগে দুস্থদের মাঝে যেসব কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয় সেসবও নতুন। বর্তমানে বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে শুধু স্বনির্ভর নয়, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রায় শীর্ষস্থান দখল করে আছে। চীনের পরেই অবস্থান বাংলাদেশের। রফতানি আয়েও অন্যতম অবদান রাখছে পোশাক শিল্প। গার্মেন্টসের কিছু উদ্বৃত্ত ও বাতিলকৃত মালামালও স্বল্পমূল্যে সহজলভ্য দেশীয় বাজারে। এসব শুধু বঙ্গবাজার বা বঙ্গমার্কেট নয়, ইসলামপুর, চকবাজার, কেরানীগঞ্জসহ সারাদেশেই সুলভে সহজ প্রাপ্য। পাওয়া যায় ফুটপাথ ও ভ্যানেও। সুতরাং পুরান কাপড়ের বিষয়টি যে পুরনো হবে, তাতে আর সন্দেহ কি? সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার পর দেশের এমন সুদিন ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের শিল্পকারখানা বন্ধ। রাস্তাঘাট যানবাহন রেলপথ প্রায় সবই ধ্বংসপ্রাপ্ত অথবা অচল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শূন্য। খাদ্যাভাব প্রকট। দেশে খাদ্য উৎপাদনও আশানুরূপ নয়। যেখানে খাদ্য পণ্য আমদানির জন্য অর্থ সংস্থান করাই দুরূহ, সেখানে পোশাক বা কাপড় আমদানির অর্থ আসবে কোত্থেকে? নারীর আব্রু রক্ষার জন্য অপরিহার্য কিছু শাড়ি প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি করা হলেও সেগুলো এতই নিম্নমানের ছিল যে, আদৌ পরার যোগ্য নয়। এ সময় বাধ্য হয়ে মানুষ ঝুঁকে পড়ে পুরান কাপড়ের ওপর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বল্পমূল্যে আমদানি করা শুরু করে সেকেন্ড হ্যান্ড বা ব্যবহৃত পুরান কাপড়চোপড়, শীতবস্ত্র, কম্বল ইত্যাদি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠে সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেট, লান্ডি, নিক্সন-বুশ মার্কেট ইত্যাদি। মানুষ নিতান্ত বাধ্য হয়ে স্বল্পমূল্যে সেসব কিনত। তবে যুগ ও সময় পাল্টেছে। এখন দেশের মানুষ আর পুরান কাপড় কেনে না, ব্যবহারও করে না। ফলে সেসব মার্কেটও প্রায় উঠে গেছে অথবা জায়গা করে নিয়েছে অন্য ব্যবসায়। এক সময়ে কয়েক শত কোটি টাকার পুরান কাপড় আমদানি করা হলেও এখন তা নেমে এসেছে মাত্র কয়েক কোটিতে। তাও প্রধানত শীতবস্ত্রে সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে পুরান কাপড়ের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে পাকিস্তানে। অর্থ সঙ্কটে পাকিস্তানের অন্তত ৩০ শতাংশ মানুষ বর্তমানে নির্ভরশীল পুরান কাপড়ের ওপর। এর পাশাপাশি সরকার চাইছে ২০২৬ সাল নাগাদ পুরান কাপড়ের আমদানি একেবারে বন্ধ অর্থাৎ শূন্যে নামিয়ে আনতে। এই প্রত্যাশা অতিরঞ্জিত নয় মোটেও।
×