ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাইবান্ধায় নদী থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে

প্রকাশিত: ১৬:০৫, ২৬ জানুয়ারি ২০২২

গাইবান্ধায় নদী থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা ॥ করতোয়ার শাখা কাটাখালি নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে রংপুর-বগুড়া মহাসড়কের উপর নির্মিত কাটাখালি ব্রিজ। ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে এলাকার প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়িরা বালু উত্তোলন করছে। হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে কাটাখালি ব্রিজটি ধসে পড়লে রংপুর-বগুড়া মহাসড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এছাড়া দুটি বিদ্যুত পোলও ধসে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে। খাটাখালি ব্রিজ এলাকা থেকে পূর্বদিকে নদীর ১০টি পয়েন্টে এভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় কতিপয় ব্যবসায়ি। ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের বালু ব্যবসায়ি চান মিয়া বলেন, বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন থেকে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তৎপর হয়। সবকিছুই ম্যানেজ করেই আমাদের বালু উত্তোলন করে ব্যবসা করতে হচ্ছে। এলাকাবাসি জানান, ড্রেজার মেশিন দিয়ে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে কাটাবাড়ীর ফুলহার থেকে খলশী চাঁদপুর, শাকপালা, হাতিয়াদহ, তাজপুর, উত্তর ফুলবাড়ী, চন্ডিপুর, সমসপাড়া, ফতেউল্লাপুর রায়ের বাড়ী, বড় দহ,কাজীপাড়া, পার ধনদীয়া, মহিমাগঞ্জ, শালমাড়া এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রাম ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, ভূ-গর্ভ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে গত সাড়ে তিন মাসে ৮টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে ৯ জনের কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে। এছাড়াও ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় কাটাখালি নদী থেকে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে বালু উত্তোলনের বিষয়ে তদন্তের জন্য লোক পাঠানো হয়েছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট বালু উত্তোলনকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের ভেড়ামারা রেলওয়ে ব্রীজ সংলগ্ন এলজিইডির নির্মাণাধীন একটি আরসিসি সেতুর ২০ গজের মধ্যে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ঘাঘট নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম লুডু ও তার ভাই রাজু মিয়া, বাহারবন এলাকার আবু তালেব, কাজীবাড়ী এলাকার শহিদুল ইসলাম, কিশামত বালুয়ার আব্দুল হাই মন্ডলসহ ৭/৮ জন যোগসাজসের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এব্যাপারে এলাকার সচেতন মহল বিভিন্নভাবে বাধা দিয়েও তাদের নিরস্ত্র করতে পারছে না। এভাবে বালু উত্তোলন করা হলে যে কোন সময় নির্মাণাধীন সেতুটির ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। এব্যাপারে এলাকাবাসি লিখিতভাবে গাইবান্ধা সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কাছে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযোগ করেছেন। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুর রাফিউল আলম বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দিন ও রাতে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।
×