ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কে নিহত ৭৮০৯

প্রকাশিত: ২১:২৭, ২৬ জানুয়ারি ২০২২

সড়কে নিহত ৭৮০৯

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিনের এক দুর্ভোগ। রাস্তায় বের হলে শঙ্কিত হতে হয় প্রাণটা নিয়ে বাড়িতে ফেরা যায় কি না! একে তো করোনার দুঃসহ সংক্রমণে জনজীবন বিধ্বস্ত। তার ওপর পথ দুর্ঘটনাও চেপে বসেছে প্রবল প্রতাপে। ২০২১ সালে প্রায় ৩ মাস গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও সড়কে ঝরেছে ৭৮০৯ মানুষের মূল্যবান জীবন। আহতের সংখ্যা ৯ হাজার, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। অভিযোগের আঙুল ওঠে বরাবরই চালকের ওপর। তিনি বৃহৎ, মাঝারি কিংবা ক্ষুদ্র যে কোন যানের চালকই হোন না কেন। আপাতদৃষ্টিতে তা মনে হলেও মূলত সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ বিবিধ। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এমন দুঃসহ ঘটনা নিয়ে কিছু মূল্যবান অভিমত ব্যক্ত করেন। সড়কে বের হলেই সবারই পরিবহন আইন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। সঙ্গত কারণেই তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক পাঠদানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। দুর্ঘটনা শুধু বৃহৎ যানবাহনের গাফিলতির কারণে যে হয় তা নয়, বরং ক্ষুদ্র মোটরবাইকও দুর্ঘটনাকে উস্কে দিতে নিয়ামক ভূমিকা রাখে। ক্ষুদ্র এই যানটি কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করেই না। যেমন খুশি সেভাবেই বাইক হাঁকিয়ে বিভিন্ন গাড়ির ফাঁক ফোকড়ে চোখের পলকে চলে যায়। মানে না ট্রাফিক সঙ্কেত। সামনে আর পেছনে থাকা যানগুলোকেও উপেক্ষা করে নিজের মতো চালিয়ে যায়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটতেও সময় লাগে না। বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন ২০২১ সাল প্রকাশ করে উপরন্তু তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়। একই বছরে রেল-দুর্ঘটনাও কম ঘটেনি। ৪০২টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩৯৬ জন। আহত ৫৭৮ জন। নিখোঁজ রয়েছেন ৫৪৪ জন। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রসমূহে প্রচারিত সড়ক দুর্ঘটনাকে নজরদারি করে এমন সব তথ্য তুলে ধরা হয়। এসব দুর্ঘটনার বার্ষিক ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়। জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশ। হতাহতের মধ্যে ৮০ শতাংশই ১৫ থেকে ৪৫ পর্যন্ত সম্ভাবনাময় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী। দুর্ঘটনায় শুধু জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়, বরং উদীয়মান প্রজন্মের ভবিষ্যতও দুর্বিষহ মৃত্যু না হয় পঙ্গুত্ব বরণ করে বাকি জীবন কাটায়। যা একটি আধুনিক ও স্বপ্নের দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলা যায়। সড়ক নিরাপত্তা আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করাসহ আইনের ত্রুটি শনাক্ত করে প্রযুক্তির মাধ্যমে তা সমাধানেরও নির্দেশনা আসে। সিসি ক্যামেরাসহ ট্রাফিক সংকেতকেও বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়। এছাড়াও চালক, পথাচারীদের সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণাও আবশ্যক। চালক এবং যন্ত্রযানের সক্ষমতা চিহ্নিত করে গাড়ি সড়কে বের করাও অত্যন্ত জরুরী। পথচারী সেতু ব্যবহার করা এবং ফুটপাথকে নির্বিঘœ আর নিরবচ্ছিন্ন রেখে মানুষ চলাচলের উপযোগী করে রাখতে হবে। ফুটপাথ এখন ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের দখলে বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। সেই পথ সুগম করতে হবে। সচেতন দায়বদ্ধতায় পরিবহনের সার্বিক নিয়মাবলি অনুসরণ করে সড়ক ব্যবস্থাপনায় দিতে হবে নিরাপত্তার বেষ্টনী।
×