ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জনবান্ধব পুলিশ

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২৬ জানুয়ারি ২০২২

জনবান্ধব পুলিশ

রবিবার পুলিশ সপ্তাহ-২০২২ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাৎপর্যপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি পুলিশের নানা কার্যক্রম ও তৎপরতার প্রশংসাও করেছেন। পূর্বসূরিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সকল আঘাত থেকে রক্ষা করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেছেন, জনবান্ধব পুলিশিংয়ের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখাসহ গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। সর্বপ্রকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির পূর্বশর্ত হলো শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুলিশের ওপর সমাজ নির্ভরশীল। বিশেষ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুলিশের ওপর সাধারণ নাগরিক যেমন ভরসা করেন, তেমনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগেরও অন্ত নেই। পুলিশের দায়িত্বহীনতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়ে থাকে। পুলিশের ভাল কাজ ছাপিয়ে দুর্নীতি ও কিছু গর্হিত অপরাধের কথা ফলাও করে প্রচার হওয়ার অপসংস্কৃতি থেকে সমাজ বেরিয়ে আসতে পারেনি। সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ সম্পর্কে এক মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। তবে একতরফাভাবে কেবল পুলিশকে দোষ দেয়া সমীচীন নয়। পুলিশের সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। পুলিশকে জনবান্ধব করতে হলে জনবলসহ সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। বর্তমানে অপরাধ দমনে পুলিশের চ্যালেঞ্জ বহুলাংশে বেড়ে গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ অপরাধীর পেছনে ছোটে- পুলিশের পেশার এই বৈশিষ্ট্যের দিকে সমাজের সহানুভূতির দৃষ্টি তেমন নেই। জনবল, সরঞ্জাম, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ঘাটতি কাটানোর পাশাপাশি পুলিশের সদাচরণ ও সেবার মান বৃদ্ধি এবং মানসিক গঠন পরিবর্তনের মাধ্যমে সুনাম বাড়ুক। পুলিশ হয়ে উঠুক প্রকৃত সমাজবান্ধব- এমন প্রত্যাশা দেশের নাগরিকদেরও। করোনাকালে পুলিশের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কর্তব্য পালনের প্রশংসা করতেই হবে। ৯৯৯ হটলাইন চালুর মাধ্যমেও পুলিশ প্রত্যক্ষ ইতিবাচক সেবা দিয়ে চলেছে। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই পুলিশ বাহিনী। সেই প্রেক্ষাপটে দেশের পুলিশ বাহিনীকে সর্বদাই আইনের রক্ষকের ভূমিকায় জনবান্ধব হিসেবে অবতীর্ণ হতে হবে। জনসাধারণের সমস্যাকে দেখতে হবে আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময়ে পুলিশকে মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে গুরুত্ব দিতে হবে। উল্লেখ্য, জনবান্ধব পুলিশের বিষয়টি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশের পুলিশ অনেকাংশেই জনবান্ধব ও হিতকারী, অন্তত পাকিস্তানী এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের চেয়ে তো বটেই। ইদানীং রাজধানী ও অন্যত্র খুন-ধর্ষণ-সড়ক দুর্ঘটনা অনেক বেড়েছে, অস্বীকার করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীকে আরও তৎপর ও নজরদারি বাড়াতে হবে। সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে বহুলাংশে। পুলিশের এক্ষেত্রেও সবিশেষ করণীয় রয়েছে। কাজের মধ্য দিয়েই পুলিশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে বলেই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
×