ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে নারীশিক্ষার গোড়া পত্তন

প্রকাশিত: ০০:৫৩, ২৫ জানুয়ারি ২০২২

বাংলাদেশে নারীশিক্ষার গোড়া পত্তন

ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের সুবর্ণ সময়ে নারী শিক্ষা কোন্ পর্যায়ে ছিল সত্যিই এক ঐতিহাসিক পর্যায়। তখন অবিভক্ত বাংলা তথা ভারতে ব্রিটিশ রাজন্য বর্গ শাসনকার্যে নিয়োজিত। ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লবের আঁচ এসে লাগে পরাধীন ভারতের আর্থ-সামাজিক পটভূমিতে। প্রচলিত সংস্কার এবং পশ্চাদবর্তিতাকে পেছনে ফেলে নতুন জগত উন্মোচন করতে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচককে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হয়। শিক্ষা শুধু অধিকার নয়, তা সার্বজনীনও বটে। ফলে নতুন সময়ের অগ্রগামী পুরুষরা যখন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে লাগলেন তখন অতি আবশ্যিকভাবে সামনে এসে দাঁড়ায় অর্ধাংশ পিছিয়ে পড়া নারীও। সে সময় মিশনারি প্রবর্তিত বিদ্যালয়গুলো ভদ্র ঘরের মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণের জন্য যেতে সামাজিকভাবে বাধার সম্মুখীন হতো। সুতরাং অবিভক্ত বাংলায় যার হাত ধরে ঈশ্বও চন্দ্র বিদ্যাসাগর। নারী শিক্ষার অগ্রদূত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর একাই এগিয়ে এলেন মেয়ের জন্য একটি মানসম্মত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে। তারই অনমনীয় দৃঢ়তা এবং তৎকালীন ব্রিটিশ বড়লাট ডিঙ্ক ওয়াটার বেথুনের প্রশাসনিক কর্মদক্ষতার প্রথমবারের মতো তৈরি হলো অবিভক্ত বাংলায় নারী শিক্ষার প্রথম পাদপীঠ। ১৮৪৯ সালে বেথুনও বিদ্যাসাগরের যৌথ প্রচেষ্টায় নারীরা যে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেন সেটাই বেথুন বালিকা বিদ্যালয়। পরবর্তীতে যা বেথুন কলেজ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। সে সময় আমাদের বাংলাদেশে নারী শিক্ষা কোন্ পর্যায়ে ছিল সেটাও এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। শিক্ষা নগরী রাজশাহীর অতীত ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় ১৮৬৮ সালে দীঘিপাতিয়ার জমিদার রাজা প্রমথনাথ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য নগদ অর্থ এবং জমি দান করছেন। যা তারই নামে পিএন বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে তার শুভ যাত্রা শুরু করে। আর ইডেন গার্লস হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা হয় ঊনবিংস শতাব্দীর আশির দশকে। সেই ১৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পিএন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এখনও তার ঐতিহ্যিক সুনাম ও ভূমিকা অক্ষুণœ রেখেছে। রাজশাহীতে এখন অবধি মেয়েদের ভাল স্কুল হিসেবে পিএন স্কুলই আপন মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতম স্থানে। পিএন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে বাংলাদেশের অনেক গুণী নারী ব্যক্তিত্ব নিজেদের স্বনামে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা, নাট্য ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা মেজর জেনারেল সুশানে গীতিসহ অসংখ্য মেধাবী ছাত্রী মেধা ও মনন দক্ষতায় দেশ-বিদেশে নিজেদের সম্মানের জায়গাটা অর্জন করতে পেরেছেন। পাশাপাশি বিদ্যালয়টিও তার গৌরব বজায় রাখতে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান ও জ্ঞানচর্চাকে সবার ওপরে স্থান দিয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মেধা তালিকায় পিএন স্কুলের ছাত্রীরাই থাকে এগিয়ে। এখন অবধি এই স্কুলটি সারা বাংলাদেশে বহুল পরিচিত এবং সর্বজনবিদিত। প্রাচীন ও ঐতিহ্যিক এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নারী শিক্ষা সম্প্রসারণে যে অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছে তা স্মরণীয়। অবিভক্ত বাংলায় দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাচীন এই নারী শিক্ষার আলোকিত প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ও সমান অবদানে নজরকাড়া। ১৫৪ বছর পার করা বিদ্যালয়টি সমায়ের অনিবার্য চাহিদায় আরও এগিয়ে যাক।
×