ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের প্রতিবাদ

মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ার টিকেটের মূল্য তিনগুণ বেড়েছে

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ২৫ জানুয়ারি ২০২২

মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ার টিকেটের মূল্য তিনগুণ বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে ২৫ সিন্ডিকেটের অপচেষ্টা এবং মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ার টিকেটের অযৌক্তিক দুই থেকে তিন গুণ মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছে সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা। সেই সঙ্গে তারা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সব এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ার টিকেটের সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েরিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরাবলেন- জরুরী ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিমানসহ মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্স গুলোকে চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াতে হবে। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এতে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এম টিপু সুলতান, আরিফুর রহমান, লিমা বেগম, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাদাত হোসেন, ড. মোৎ ফারুক, রিয়াজুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মাহমুদ, ফখরুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন। এ সময় এজেন্সি মালিকরা বলেন, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী ২৫ সিন্ডিকেটের পক্ষে গত ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর একটি পত্র প্রেরণ করেন, যা খুবই দুঃখজনক। সেখানে মালয়েশিয়ার সব রিক্রুটিং এজেন্সি যুক্ত থাকবে আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২৫ এজেন্সি সিন্ডিকেট এবং ২৫০ সাব-এজেন্টের প্রস্তাব চরম অনৈতিক, অনভিপ্রেত ও সমতার পরিপন্থী এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য চরম অবমাননাকর। তারা বলেন, দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো একই জামানত দিয়ে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়েছে। আইনগতভাবে সব রিক্রুটিং এজেন্সি সমমানের হওয়া সত্ত্বেও ২৫ এজেন্সি মূল সিন্ডিকেট আর তাদের সাব-এজেন্ট হবে ২৫০ এজেন্সি, এটি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর জন্য চরম অবমাননাকর। একটি রিক্রুটিং এজেন্সি অন্য একটি সমমানের রিক্রুটিং এজেন্সির সাব এজেন্ট কোন অবস্থাতেই হতে পারে না। ২৫ এজেন্সি এবং ২৫০ এজেন্সি নির্ধারণে যোগ্যতার মাপকাঠিই বা কি? নেপালের ১৬শ’র বেশি এজেন্সিসহ অন্য সব দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মালয়েশিয়াতে সিন্ডিকেট মুক্তভাবে কর্মী প্রেরণ করতে পারে। তাহলে বাংলাদেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি কেন মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারে কর্মী প্রেরণের অধিকারপ্রাপ্ত হবে না। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, আমরা দৃঢভাবে বিশ্বাস করি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ২৫ সিন্ডিকেটের প্রস্তাবগ্রহণ না করে সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী প্রেরণের অধিকার দেয়ার কথা উল্লেখ করে গত ১৮ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী বরাবর যে পত্র দিয়েছেন (ওপেন ফর অল), সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই এবং মালয়েশিয়ারনিয়োগকর্তারা বাংলাদেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে স্বাধীনভাবে কর্মী গ্রহণ করবে। বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় আসন্ন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি সংযোজনসহ বাস্তবায়নে চাই আমরা। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা বলেন, বাংলাদেশ বিমান এয়ার টিকেটের মূল্য অযৌক্তিকভাবে দুই থেকে তিন গুণ বাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যগামী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। বাংলাদেশ বিমানে লন্ডন যেতে ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা সময় লাগে, টিকেটের মূল্য ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। আর মধ্যপ্রাচ্যে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে, কিন্তু টিকেটের মূল্য ৭৫ থেকে ৯৫ হাজার টাকা এবং চাহিদা অনুযায়ী টিকেট পাওয়া যায় না। ফলে ফরেন এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশ বিমানকে অনুসরণ করে দুই থেকে তিন গুণ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। আর্থিকভাবে মারাত্মক শোষিত হচ্ছে বিদেশগামী অসহায় রেমিটেন্স যোদ্ধারা। তারা বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ বিমান মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ যাত্রী বহন করে, এ সুযোগে ফরেন এয়ারলাইন্সগুলো দুই থেকে তিন গুণ বেশি বৈদেশিক রেমিটেন্স টিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশ বিমানের অযৌক্তিক মুনাফা লাভের কারণেই মূলত দেশের হাজার হাজার কোটি ডলার কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশী এযারলাইন্সগুলো দুই থেকে তিন গুণ বেশি ভাড়ার মাধ্যমে দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যগামী রেমিটেন্স যোদ্ধারা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার এয়ার টিকেট বর্তমানে ৭৫ থেকে ৯৫ হাজার টাকার অধিক মূল্য দিয়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছে এবং চাহিদা অনুযায়ী টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। একই গন্তব্যের টিকেট আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা হতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। ওই সংবাদ সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ার টিকেটের সমস্যা সমাধানে সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তাদের প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে জরুরী ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিমানসহ মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্সগুলোকে চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি রেমিটেন্স যোদ্ধাদের জন্য বাংলাদেশ বিমানসহ সব এয়ারলাইন্সে লেবার ফেয়ার নির্ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশকে ওপেন স্কাই ঘোষণা ও বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান করতে হবে এবং বাংলাদেশ বিমানসহ সব বৈদেশিক এয়ারলাইন্সগুলোকে যৌক্তিক ভাড়া নিশ্চিত করতে সরকারের কঠোর নজরদারির আওতায় এনে দুই থেকে তিন গুণ মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
×