ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২৫ জানুয়ারি ২০২২

ঢাকার দিনরাত

আবহাওয়া নিয়েই শুরু করি আজকের লেখা। ঢাকার বাসিন্দারা মাঘ না এলে শীতকে ঠিক পাত্তা দিতে চান না। ভারি পশমি কাপড়গুলো দেরাজেই তোলা থাকে, নামাতে চান না। এবারের মাঘ আসার আগে সংক্ষিপ্ত ‘বসন্ত’ এসেছিল সেটি ভালই উপভোগ করেছেন ঢাকাবাসী। ঘর থেকে বেরুনোর আগে গুগল আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে বেরুলে ভাল। বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। তা ছাড়া বোঝাও যায় দিনভর তাপমাত্রার ওঠানামা কেমন থাকবে। ঢাকার তাপমাত্রা এখনও বিপজ্জনক মাত্রায় নামেনি। তবে মাঘের শেষে একটা শৈত্যপ্রবাহ আসবে বলে পূর্বাভাস আছে। তখন হয়ত ঢাকায় সত্যিই মাঘের শীত পড়বে। ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হবে হয়ত। চলতি সপ্তাহে এই মনোরম শীতই মহাবিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে শুধু বায়ুদূষণের কারণে। ঢাকার বাতাসের মান ক্রমেই নিচে নেমে চলেছে। মারাত্মক বায়ুদূষণ ঢাকাবাসীর আয়ু কমছে বলছিলাম বায়ুদূষণের কথা। সর্বসাম্প্রতিক প্রতিবেদন পড়ে ভাবছিলাম এই দূষিত বায়ু থেকেই আমাদের বাধ্য হয়ে শ^াসের বাতাস নিতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ঢাকায় দূষণ বাড়ার উপযোগী উপাদান দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে উন্নয়ন কর্মকা-, ইটভাটা, বর্জ্য পোড়ানো, কলকারখানা ও গাড়ির কালো ধোঁয়া দূষণের জন্য দায়ী। পরিবেশ অধিদফতরের গবেষণা বলছে, ঢাকায় বায়ুদূষণের জন্য ইটভাঁটি দায়ী ৫৮ শতাংশ, রোড ডাস্ট ও সয়েল ডাস্ট ১৮, যানবাহন ১০, বায়োমাস পোড়ানো ৮ এবং অন্যান্য উৎস ৬ শতাংশ দায়ী। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের গত বছরের এক জরিপ বলছে, বায়ুদূষণের জন্য অর্ধেক (৫০ শতাংশ) দায়ই তরল জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে তৈরি হওয়া ধোঁয়ার। ৪০ শতাংশ দূষণের উৎস খড়, কাঠ, তুষের মতো জৈব বস্তুর ধোঁয়া ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা। বাকি ১০ শতাংশ দূষিত বস্তুকণা আসে ইটভাঁটির কয়লা পোড়ানোর ধোঁয়া থেকে। বায়ুদূষণজনিত রোগে দেশে কতসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তার কোন সরকারী পরিসংখ্যান নেই। চিকিৎসকরা বলছেন, দূষণের জেরে শুধু ফুসফুসই নয়, ঝুঁকির মুখে পড়ছে নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। দেশের বাতাসে সবচেয়ে বিপজ্জনক পিএম ২.৫-এর পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ করা পরিমাণের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি। বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি থাকা মানে ওই স্থানের বায়ু ‘বিপজ্জনক’। ঢাকার বায়ুমান বছরের পাঁচ মাস অস্বাস্থ্যকর থেকে বিপজ্জনক থাকে। একিউআই সূচক পর্যবেক্ষণ করে ক্যাপস জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর শীত মৌসুমে ঢাকায় বায়ুদূষণ বেড়েছে ১৯ ভাগ। গত ডিসেম্বরে ছয় দিন ঢাকায় বায়ুর মান বিপজ্জনক ছিল। চলতি মাসের ২০ দিনের মধ্যে ১১ দিনই ঢাকা বায়ুদূষণের তালিকায় এক নম্বরে ছিল। গত মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত টানা চার দিন ঢাকা ছিল এক নম্বরে। এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাব বলছে, এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশ জরুরী স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় বায়ুদূষণের মাত্রা ৩০০-এর ওপরে উঠলে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারির সুপারিশ করা হয়। কিন্তু ঢাকার বায়ুর মান খারাপ হলেও কখনই সতর্কতা জারি করা হয়নি। বায়ুদূষণ যেভাবে বাড়ছে এবং তা কমানোর জন্য সক্রিয় উদ্যোগ অনুপস্থিত থাকছে তাতে মনে হচ্ছে এটি ভয়ঙ্কর নীরব ঘাতক হয়ে উঠতে পারে আগামী দিনগুলোয়। এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগসহ নানা রোগের কারণ হবে এই বায়ুদূষণ। পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বায়ুদূষণের জন্য ২০টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিটি কারণ ধরে ধরে সমাধান করতে হবে। এ জন্য বড় উদ্যোগ নেয়া চাই। দরকার বড় বাজেট এবং আইনের কঠোর নজরদারি ও প্রয়োগ। করোনার ঝুঁকি বাড়ছে তবু মানুষ পরোয়াহীন আবারো ঢাকায় মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে আসার জন্য জরিমানা করা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন এবং একাধিক সামাজিক সংগঠন বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণের কাজও শুরু করেছে। ক’দিন আগেও চারজনের করোনা পরীক্ষা করা হলে একজনের কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ত। আজ রবিবার যে-হার দেখলাম সংক্রমণের, তাতে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে প্রতি তিনজনের ভেতর একজন শনাক্ত হচ্ছেন করোনায়। এভাবে উর্ধগতি চলমান থাকলে প্রতি দুইজনের ভেতর একজনের করোনা শনাক্ত হবে বলেই শঙ্কা। তারপরও বিশেষ সতর্কতা নজরে পড়ছে না। মানুষ বিশেষ একটা পাত্তা দিচ্ছে না। সরকার সবকিছুর আগে স্কুল-কলেজ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। তা কার্যকরও হয়েছে। গণপরিবহনে লোকে গাদাগাদি করে উঠছে। সেখানেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি। এরপরেই রয়েছে বাজার-ঘাট ও শপিংমল। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও বোঝা যায় জনঘনত্বের এই ঢাকায় কেমন ভিড় ও গা ঘেঁষে চলাচল। অনেকেরই ধারণা ছিল সরকার যথোচিত সতর্কাবস্থা জারি করে বিশেষ বিধিনিষেধের ঘোষণা দেবে। সবকিছুর আগে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের নিয়ম কার্যকর হবে। হয়নি। তাই ভয় কাটছে না। গত প্রায় দুই বছরের অভিজ্ঞতা থেকে সংক্রমণের অতি উর্ধগতি বিবেচনায় কয়েকটি পদক্ষেপ আশু জরুরী ছিল। সেসব এখনও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এটিও বাস্তবতা যে মহনগরীর সর্বত্র সমান ঝুঁকিপূর্ণ নয়, যেমন সারা দেশের বিভিন্ন এলাকাও নয়। তাই রেড, ইয়েলো ও গ্রিন- এই তিনভাগে ভাগ করে এলাকাভিত্তিক যথাযথ বিধিনিষেধ আরোপই মনে হয় যুক্তিযুক্ত হবে। আজ রবিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির পরিচালক বলেন, অতি সম্প্রতি আমাদের কমিউনিটি পর্যায়ে ওমিক্রণের সংক্রমণ হচ্ছে। ডেল্টার সংক্রমণ এখনও সবচেয়ে বেশি। তবে ওমিক্রনও একটু একটু করে সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে। ওমিক্রনের যে উপসর্গগুলো আছে, সেগুলো যদি খেয়াল করি, তাহলে দেখব শতকরা ৭৩ শতাংশ মানুষের নাক দিয়ে পানি ঝরছে। মাথা ব্যথা করছে ৬৮ শতাংশে মানুষের। অবসন্নতা বা ক্লান্তি অনুভব করছেন ৬৪ শতাংশ রোগী। হাঁচি দিচ্ছেন ৬০ শতাংশ, গলাব্যথা ৬০ শতাংশের এবং কাশি দিচ্ছেন ৪৪ শতাংশ রোগী। এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। এর সঙ্গে মৌসুমি যে ইনফ্লুয়েঞ্জা হচ্ছে, এর সঙ্গে মিল রয়েছে। কাজেই যে কোন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গণপরিবহনে কে দেখবে গণস্বার্থ? ঢাকার জনসংখ্যার বিরাট একটি অংশ প্রতিদিন গণপরিবহনে যাতায়াত করেন। তাই এ নিয়ে মাঝেমধ্যে লিখে থাকি জনস্বার্থেই। ঢাকায় গণপরিবহনে সরকারের ভাড়া নির্ধারণের প্রায় দুই মাস হলো। আবার ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত ভাড়া রাখা হচ্ছে গণপরিবহনে। কেউ রাখছে নিজেদের ইচ্ছেমতো, আবার কেউ রাখছে ওয়েবিলের কথা বলে। আর বাসে ভাড়ার তালিকা রাখা বাধ্যতামূলক হলেও বেশির ভাগই রাখছে না। যাত্রীরা ন্যায্য ভাড়া দিতে চাইলে বাসের সহকারী, এমনকি চালকেরা তর্কে জড়াচ্ছেন, শোনাচ্ছেন কটু কথা। গণপরিবহনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনার জন্য ফেসবুকে একটি গ্রুপ আছে। এটির নাম ট্রাফিক এ্যালার্ট বিডি। একটি পত্রিকার প্রতিবেদন থেকেই এটি জানতে পারলাম। এর সদস্যসংখ্যা দুই লাখের বেশি। সেখানে ৩০ ডিসেম্বর ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদকের একটি পোস্টে ৩০ জনের বেশি যাত্রী তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। এ ছাড়া প্রতিবেদক অন্তত ছয়টি ভিন্ন রুটের পরিবহনে ঘুরে দেখেন। এসবের বাইরে অন্যান্য কিছু রুটের নিয়মিত যাত্রীদের অনেকের সঙ্গে তার কথা হয়। অভিজ্ঞতা ঘুরেফিরে একই। সরকার নির্ধারিত ভাড়া আমলে নিচ্ছেন না গণপরিবহনের মালিক-কর্মচারীরা। পত্রিকা যে ভুল লেখে না তার প্রমাণ হাতেনাতে মিলবে পাঠক নিজেই কোন গণপরিবহনের যাত্রী হলে। তাই খেদের সঙ্গেই বলতে হচ্ছে গণপরিবহনে কে দেখবে গণস্বার্থ? শুক্রবার দুটি সংবাদ পড়ে তো কিছুক্ষণের জন্য হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কির জের হিসেবে বাসের হেলপার ওয়ারিতে এক মধ্যবয়সী যাত্রীকে (ইরফান আহমেদ) ধাক্কা দিয়ে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়েছে। তাতে ওই যাত্রী মারা যান। পাঁচ-দশ টাকা বাড়তি আদায়ে ব্যর্থ হলে কি মানুষ হত্যা করতে হবে? গণপরিবহনের কর্মী, চালক এরা এতটা নিষ্ঠুর হচ্ছেন কেন? উত্তর মেলে না। অন্যদিকে বাসের পাল্লাপাল্লিও চলছে সমানতালে। গত সপ্তাহে মগবাজারে মাস্ক বিক্রেতা কিশোর রাকিব নিষ্ঠুর বলি হয়েছে দুই বাসের ভেতর বেআইনী প্রতিযোগিতায়। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মালিককেও সামনে আনা চাই। বাস দুটোকে থানায় আটকে রাখলেই সমাধান হবে না। এমন একটা শাস্তি দেয়া চাই দোষীদের যাতে আগামী দিনে বেপরোয়া ওভারটেক, পাল্লাপাল্লি এবং নির্দয়-নিষ্ঠুরতা করার আগে বাসের কর্মীরা দশবার ভাববে। মানুষ হত্যা, নিহত হওয়ার আশঙ্কা আছে এমন গাড়িচালনা ও আচরণ- এসব অপরাধের কঠিন শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহনের নৈরাজ্য থেকে মুক্তি মিলবে না। আবারও বিপিএল তবে গ্যালারির মজা স্থগিত কোভিড মহামারীর কারণে লম্বা বিরতির পর আবার শুরু হলো বিপিএল। এটি বিপিএলের অষ্টম আসর। সবশেষ হয়েছিল ২০১৯-২০ আসর, যেটির ফাইনাল হয় ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি। ওই বছরই ডিসেম্বরে শুধু দেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছিল বিসিবি। গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ প্রথমবারের মতো হয় টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। এবার মিনিস্টার ঢাকা বিপিএলের ম্যাচগুলোয় দেখছি হেরেই চলেছে। যা হোক, এই কলাম লেখার সময় জানা গেল বরিশাল দলের হয়ে বিপিএল খেলতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন ক্রিস গেইল। হোটেলে উঠেই করোনা পরীক্ষার নমুনা দিয়েছেন এই ক্যারিবীয় ক্রিকেটার। ফল নেগেটিভ হলে সোমবারেই মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার বিপক্ষে ম্যাচটি খেলতে পারবেন তিনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী আয়োজনের অংশ হিসেবে টুর্নামেন্টের নাম বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২। করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকায় সতর্কতা হিসেবে শূন্য গ্যালারির সামনে হবে টুর্নামেন্ট। এবারের আসরের ৬ দল- মিনিস্টার ঢাকা, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, ফরচুন বরিশাল, খুলনা টাইগার্স, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও সিলেট সানরাইজার্স। একাদশে বিদেশি ক্রিকেটারদের সংখ্যা নিয়ে বিপিএলে বিতর্ক হয়েছে আগে অনেক। সর্বোচ্চ ৫ জন বিদেশী ক্রিকেটার খেলাতে পারার নিয়মও ছিল, তাতে সুযোগ কমে গিয়েছিল দেশের ক্রিকেটারদের। এবার একাদশে রাখা যাবে সর্বোচ্চ ৩ জন বিদেশী। টি-টোয়েন্টির মহাতারকা আন্দ্রে রাসেল খেলবেন ঢাকা দলে। আরেক ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার ও টি-টোয়েন্টির সফলতম বোলার ডোয়াইন ব্রাভো আছেন বরিশালে। প্রথমবারের মতো বিপিএলে এসেছেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ দুপ্লেসি। কুমিল্লায় তিনি সতীর্থ হিসেবে পাচ্ছেন দুই মহাতারকা সুনিল নারাইন ও মইন আলিকে। বিদায় কাজী আনোয়ার হোসেন তৈরি পথে হাঁটা সহজ, পথ রচনা করে পথিকৃৎ হয়ে সাফল্য অর্জন কঠিন। কাজী আনোয়ার হোসেন সেই কঠিনকেই ভালোবেসেছিলেন এবং প্রধানত তরুণ সমাজের বিরাট অংশের মন জয় করেছেন। শুধু বাংলায় লিখে, একদল লেখককে দিয়ে সুনির্দিষ্ট কাহিনী লিখিয়ে নিয়ে, অনুবাদ করে এবং করিয়ে, সেইসঙ্গে স্বয়ং পুস্তক প্রকাশনালয় খুলে অতিসুলভ মূল্যে আগ্রহজাগানিয়া বই পাঠকের হাতে নিয়মিতভাবে পৌঁছে দেয়ার দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত নেই আমাদের দেশে। তাই কাজী আনোয়ার হোসেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও উদ্যোক্তা। তার জীবনাবসান ঘটলো ১৯ জানুযারি। বড় বোন ড. সনজীদা খাতুনের জন্য এটি নিদারুণ বেদনার, সন্দেহ নেই; তবে তরুণ ও বয়স্ক বিপুল সংখ্যক পাঠকের কাছেও তার প্রস্থান অতীব শোকের। বয়স্ক বলছি এ কারণে যে, ষাটের দশকে যারা তরুণ পাঠক ছিলেন তারা আজ ষাট-সত্তরের চৌকাঠে। জনপ্রিয় স্পাই থ্রিলার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা এবং সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার কাজী আনোয়ার হোসেন প্রয়াত হলেন ৮৫ বছর বয়সে। তার বাবা প্রখ্যাত সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন। এক সময় তিনি গানও গাইতেন এবং ১৯৬০এর দশকে সুভাষ দত্ত পরিচালিত বাংলা ছবি ‘সুতরাং’-এ নেপথ্য গায়ক হিসেবে তার গানও আছে। উনিশশো তেষট্টি সালে তিনি ঢাকার সেগুনবাগিচায় স্থাপন করেন সেবা প্রকাশনী। সেগুন বাগিচার সংক্ষিপ্তরূপ, আবার ভিন্ন সুন্দর অর্থ ও দ্যোতনাও রয়েছে এই ‘সেবা’ নামে। সেবা প্রকাশনী থেকেই ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয় মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম বই। শুরু থেকেই অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পাঠকেরা লুফে নেন এই সিরিজ। যদিও আত্মোন্নয়নমূলক বইও লিখেছেন তিনি বিদ্যুৎ মিত্র ছদ্মনামে। তাকে সশ্রদ্ধ ভালোবাসা। ২৩ জানুয়ারি ২০২২ [email protected]
×