ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হিন্দু নারীর অধিকার

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২৫ জানুয়ারি ২০২২

হিন্দু নারীর অধিকার

কোন ইচ্ছাপত্র বা উইল না থাকলে হিন্দু নারী তথা মেয়েরা বঞ্চিত হন মৃত বাবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও সম্পদের উত্তরাধিকার থেকে। এমনকি এক বা একাধিক ভাই থাকলেও উইলের অবর্তমানে হিন্দু মেয়ের আদৌ কোন অধিকার থাকে না পিতার সম্পত্তিতে। অন্যদিকে পুত্রহীন বাবার সম্পত্তি ভাগ হয়ে যায় পরিবারের অন্য সদস্য তথা ভাইয়ের সন্তানদের মধ্যে। বাবা উইল বা ইচ্ছাপত্র করে না গেলে মেয়ে বা মেয়েরা হন সম্পদ ও সম্পত্তি বঞ্চিত। হিন্দু বিধবারাও বঞ্চিত হয়ে থাকেন মৃত স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে। যুগ যুগ ধরে অনূসৃত এই প্রথার এবার বুঝি অবসান হতে চলেছে। হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের আওতায় সম্পত্তিতে হিন্দু নারী ও বিধবাদের অধিকার নিয়ে মাদ্রাজ হাইকোর্টের একটি রায় খারিজ করে দিয়ে ভারতের সুপ্রীমকোর্ট বলেছে, সে দেশে কোন হিন্দু বাবা মৃত্যুর আগে ইচ্ছাপত্র বা উইল না করে গেলে তার মেয়ে পিতার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এবং নিজের অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন। এটি অবশ্যই পিতৃ সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর জন্মসূত্রে অধিকার সম্পর্কিত একটি বিরাট অর্জন ও অগ্রগতি। উল্লেখ্য, ভারতে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করা হয় ২০০৫ সালে। যেখানে বাবার মৃত্যুর পর ছেলেদের মতো মেয়েদেরও পারিবারিক সম্পত্তিতে সমান উত্তরাধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। যেটি কার্যকর হয়েছে ১৯৫৬ সাল থেকে। ভারতের সুপ্রীমকোর্টের ঐতিহাসিক এই রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের একটি বঞ্চনার অবসান ঘটবে বলেই প্রত্যাশা। অন্যদিকে বাংলাদেশে মৃত স্বামীর সব সম্পত্তিতে হিন্দু বিধবা নারীর অধিকার রয়েছে- শীর্ষক হাইকোর্টের রায়টি ছিল ঐতিহাসিক, যুগান্তকারী, গুরুত্ববহ ও সুদূরপ্রসারী। এমনিতেই হিন্দু নারীরা পরিবার ও সমাজে নানাভাবে শোষিত, বঞ্চিত, অসহায়, নিপীড়িত, নিগৃহীত ও অবহেলার শিকার। ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। তবে সাধারণভাবে মোটা দাগে বলা যায়, বঞ্চনার শিকারই বেশি সংখ্যক নারী। অধুনা শিক্ষা-দীক্ষা, আধুনিক মনস্কতা, পারিপার্শ্বিকতাসহ নানা কারণে অল্পবিস্তর পরিবর্তন পরিলক্ষিত হলেও নানা অসঙ্গতিও দৃশ্যমান। অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য অসহায় ও বঞ্চনার শিকার নারীর দুর্দশা, তা তিনি সধবা কিংবা বিধবা যাই হোক না কেন সচরাচর আসে না গণমাধ্যমে। যেমনটি এসেছে নি¤œ আদালত এবং পরে হাইকোর্টে খুলনার এক হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি নিয়ে করা এক আবেদনের (রিভিশন) শুনানি শেষে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মোঃ মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চের রায় থেকে। হাইকোর্টের দেয়া ২২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছে, আইনে কোন সুনির্দিষ্ট সম্পত্তির কথা নেই। ‘সম্পত্তি’ শব্দের অর্থ সব সম্পত্তি যেখানে স্থাবর বা অস্থাবর, বসতভিটা, কৃষিভূমি, নগদ টাকা বা অন্য কোন ধরনের সম্পত্তি। কৃষি ও বসতভিটার মধ্যে পার্থক্য করার সুযোগ নেই এবং এ ধরনের সম্পত্তি বিধবার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে হাইকোর্ট হিন্দু উইমেন্স রাইটস টু প্রোপার্টি এ্যাক্ট (১৯৩৭ সালের) বাংলাদেশে প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করেছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার এই আইনটি দেশ স্বাধীনের পর সরাসরি গ্রহণ করে। হিন্দু নারীর বিবাহ ও বিচ্ছেদ নিয়েও রয়েছে নানা জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা। ঘৃণ্য বর্ণাশ্রম প্রথা বা বর্ণভেদ দূর করার পাশাপাশি পণপ্রথাসহ হিন্দু বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদের আইনকে দেশের সংবিধানের আলোকে আমূল সংস্কার ও পরিবর্তন করা জরুরী এবং অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি অনিবার্য এসে পড়ে হিন্দু নারীর পৈত্রিক সম্পত্তিতে সমান অধিকার নিশ্চিতকরণের বিষয়টি। যা ইতোমধ্যে আইনে পরিণত হয়েছে ভারত, নেপাল, মরিশাস, ফিজিসহ কয়েকটি দেশে। হিন্দু নারী-পুরুষের সনাতন ধর্মের রীতিনীতি অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনের পাশাপাশি রেজিস্ট্রির বিষয়টিও বাধ্যতামূলক করা বাঞ্ছনীয়।
×