ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পটুয়াখালীতে একই লঞ্চঘাট ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ

প্রকাশিত: ১৫:৫৭, ২৪ জানুয়ারি ২০২২

পটুয়াখালীতে একই লঞ্চঘাট ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী ॥ পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার ফেলাবুনিয়া পন্টুন বিহীন লঞ্চঘাট ইজারা নিয়ে সরকারের দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সরকারী নথিভুক্ত রাঙ্গাবালী উপজেলার ফেলাবুনিয়া পন্টুন বিহীন লঞ্চঘাট ইজারা দিলেও বিআইডব্লিটিএ একই ঘাটের নাম পরিবর্তন করে বড় বাইশদিয়া লঞ্চঘাট নামে আবারও ইজারা প্রদান করেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারী কোষাগারে ইজারা মূল্য পরিশোধ করেও ঘাট বুঝে পায়নি জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ে থেকে নেয়া ইজারাদার সিদ্দিকুর রহমান। নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ রাঙ্গাবালী উপজেলা নিবার্হী অফিসারের কাছে কয়েক দফায় চিঠি দিয়েও ঘাট কিংবা টাকা কোনটাই পায়নি ওই ঠিকাদার। জানাযায়, পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান (২৯)। লেখা পড়ার পাশাপাশি কিছু করার জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ঘাট ইজারা নিয়েছিলেন। বন্ধুদের কাছ থেকে ধার দেনা করে ৩৬ হাজার টাকা সংগ্রহ করে ইজারা নেন তিনি। করোনাকালীন সময়ে যেহেতু কলেজের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ সে কারনে ঘাটের ইজারা তুলে জীবন পরিচালনা করার পরিকল্পনা ছিল সিদ্দিকুরের। তবে সেই পরিকল্পনা তার ভেস্তে গেছে। ইজারা গ্রহনের পর ওই ঘাটে গিয়ে তিনি দেখতে পান ঘাটটি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ঘাটের নাম পরিবর্তন করে বড় বাইশদিয়া লঞ্চঘাট নামে একটি পন্টুন স্থাপন করে তারাও ইজারা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানযায়, রাঙ্গাবালী উপজেলার ফেলাবুনিয়া পন্টুন বিহীন লঞ্চঘাটটি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইজারা আহ্বান করা হলে পটুয়াখালী সদর উপজেলার নন্দিপাড়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ২০২১ সালের ২১ মার্চ জেলা পন্টুন বিহীন লঞ্চঘাট বন্দোবস্ত কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঘাটের ইজারা পান। পরবর্তীতে ২৫ মার্চ এক বছরের জন্য সরকারী কোষাগারে ইজারার টাকা জমা দেন সিদ্দিকুর। কিন্তু ওই একই ঘাট বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ইজারা দেয়ায় সিদ্দিকুর রহমান ঘাটের টাকা আদায় করতে পারেনি। বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ ইজারাদার নাসির উদ্দিন টাকা উত্তোলন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্থ ওই যুবক জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগাযোগ করলেও দীর্ঘ ৯ মাসেও এর প্রতিকার পায়নি। ঘাট ইজারা নেয় সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আমি ঘাট ইজারা পাই। সরেজমিনে গিয়ে দেখি বিআইডব্লিউটিএ ঘাটের নাম পরিবর্তন করে পন্টুন দিয়ে ইজারা দিয়েছে। তখন আমি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) স্যারের কাছে দেখা করলে তিনি রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঘাট বুঝাইয়া দেওয়ার জন্য বলেন। আমরা তার সাথে এ ব্যাপারে ছয় বার দেখা করলেও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। পরবর্তিতে এডিসি স্যারের সাথে দেখা করলে তিনি ইউএনও স্যারকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিলে তিনি গ্রাহ্য করেননি। তিনি আরো বলেন,‘ রাষ্ট্রের কাছ থেকে ঘাঁট ইজারা নিয়েও ঘাট বুঝেও পেলাম না, টাকাও পেলাম না। চিঠিতেই চলে গেল ৯ মাস। এ কারনে আমি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলাম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান বলেন,‘ ফেলাবুনিয়া ঘাটের ইজারাদার প্রথমে একবার আমার কাছে এসেছিল তখন আমি বলেছি দুই পক্ষেল কাগজপত্র নিয়ে আমার কাছে আসেন। কিন্তু সে পরে আর আসেনি। তদন্ত করতে বলেছি তদন্ত রিপোর্ট আমার কাছে দিছে কিনা আমার খেয়াল নেই, আর কেউ আমাকে বলেও নি। আমি এখন খোঁজ নিয়ে দেখছি।’ এ ব্যাপারে পটুয়াখালী বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক ও নদী বন্দর কর্মকর্তা মহিউদ্দিন খান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ সরকারী বিধি মোতাবেক ঘাট ইজারা প্রদান করেছে। দেড় লাখ টাকা ইজারা মূল্যে এটি ইজারা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন কিভাবে ইজারা দিয়েছিল সেটি আমার দেখার বিষয় নয়।’ এ বিষয়ে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বলেন,‘ ঘাটটি বুঝিয়ে কেন দেয়া হয়নি এ জন্য রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যেহেতু সে দেয়নি সে কারনে তাকে আবারো চিঠি দেয়া হবে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
×